শিরোনাম

South east bank ad

রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার শুরুর আবেদন গাম্বিয়ার

 প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   আন্তর্জাতিক

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

মিয়ানমারের আপত্তি নাকচ করে দিয়ে গণহত্যার মূল মামলা বিচারের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল দাওদা জালো।

আদালতে মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তির বিষয়ে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় দফায় যুক্তি পেশ করার সময়ে তিনি এ কথা বলেন।

সোমবার দুপুরের পর আইসিজের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি জোয়ান ডনাহিউয়ের সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হলে গাম্বিয়া প্রথমে মিয়ানমারের দাবিগুলো খণ্ডন করেন আইনজীবী পল রাইখলার। আর সমাপনী বক্তব্যে গাম্বিয়ার প্রতিনিধি দাওদা জালো বলেন, গণহত্যা সনদে গণহত্যা বন্ধ এবং এর বিচারে বিষয়ে সনদে স্বাক্ষরকারী সবারই দায়িত্ব আছে। আর গাম্বিয়া সেই দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের কাছে মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তিগুলো নাকচ করার আরজি জানান।

এর আগে পল রাইখলার দাবি করেন, মিয়ানমার দ্বিতীয় দফায় তাদের যুক্তি পেশ করার সময় নতুন কোনো তথ্য ও ব্যাখ্যা দিতে পারেনি, আগের বক্তব্যেরই পুনরাবৃত্তি করেছে। তিনি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরের একটি ভিডিওর কথা উল্লেখ করেন, যেটি গণহত্যা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদনের শুনানির সময়ের। ওই শুনানি শোনার জন্য আশ্রয়শিবিরের খোলা মাঠে হাজার হাজার রোহিঙ্গার ‘গাম্বিয়া’, ‘গাম্বিয়া’ ধ্বনি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে পল রাইখলার বলেন, রোহিঙ্গারা জানে মামলার আবেদনকারী কে? গাম্বিয়া ওআইসির প্রতিনিধি হিসেবে মামলা করেছে বলে মিয়ানমারের দেওয়া বক্তব্যকে নাকচ করে তিনি বলেন, ওআইসির সমর্থনের বিষয়টি একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। গাম্বিয়া গণহত্যার লাশের গন্ধ পেয়েছে বলেই গণহত্যা সনদের অংশগ্রহণকারী হিসেবে এই মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পল রাইখলার বলেন, আদালতে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার বক্তব্যে মিয়ানমারের কৌঁসুলিরা একবারও রোহিঙ্গা কথাটা উচ্চারণ করেননি, কেননা তাঁদের তা নিষেধ করা হয়েছে। অথচ তাঁরা বারবার গাম্বিয়াকে অন্যের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

গাম্বিয়ার কোনো নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় দেশটির মামলা করার অধিকার নেই, এমন দাবির জবাবে পল রাইখলার বলেন, কোন দেশের নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা মামলা করার ক্ষত্রে কোনো বাধা নয়। ওই যুক্তি গ্রহণযোগ্য হলে একটি রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের মধ্যে মুসলমান, খ্রিষ্টান কিংবা হিন্দু জনগোষ্ঠীকে যদি ধ্বংস করতে উদ্যত হয়, তাহলে সেই জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় অন্য কেউ এগিয়ে আসতে পারবে না—এটা হতে পারে না।

নুরেমবার্গ মামলার আলোকে মিয়ানমারের তুলে ধরা যুক্তি গণহত্যার দায় রাষ্ট্রের নয়, ব্যক্তির—এই বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর অভিহিত করে আইনজীবী রাইখলার বলেন, যে গণহত্যা সনদ রচিত হয়েছে ওই বিচারের পর এবং সনদে স্পষ্টভাবে রাষ্ট্রের দায়ের কথা বলা হয়েছে।

মিয়ানমারের আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন, গণহত্যা সনদের ৮ নম্বর ধারায় মিয়ানমারের আপত্তি থাকায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এই মামলা গ্রহণের এখতিয়ার নেই। এর জবাবে পল রাইখলার বলেন, ওই আপত্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতের এখতিয়ার অস্বীকার করা হয় না। তা ছাড়া সনদটির ৯ নম্বর ধারায় সম্মতি দেওয়ায় জাতিসংঘের সব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব মেনে নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত জাতিসংঘ ব্যবস্থার অংশ হওয়ায় মিয়ানমার আদালতের ভূমিকাকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।

মামলা করার সময়ে বাদী রাষ্ট্রের সঙ্গে বিবাদী রাষ্ট্রের কোনো বিরোধ ছিল না মর্মে মিয়ানমারের চতুর্থ আপত্তির জবাবে পল রাইখলার বলেন, জাতিসংঘের তদন্তকারীদের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এবং গাম্বিয়ার সুনির্দিষ্ট কূটনৈতিক চিঠির জবাব না দেওয়ায় প্রমাণ পাওয়া যায় যে বিরোধ বিরাজমান ছিল। তিনি দাবি করেন, মামলা দায়েরের ৩০ দিন আগেই মিয়ানমার জানত যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে, কিন্তু তারা কেন নীরব ছিল। এগুলো বিরোধ থাকার প্রমাণ।

মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তির বিষয়ে অধ্যাপক স্যান্ডস প্রথম দফা শুনানির দিনে যে সময়ক্ষেপণের কৌশল অনুসরণের অভিযোগ করেছিলেন, সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে পল রাইখলার বলেন, ভিত্তিহীন আপত্তি পেশের মাধ্যমে মূল মামলার শুনানি দীর্ঘায়িত করার চেষ্টার ফলে মিয়ানমারে ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গার বিপদ ও দুর্ভোগ বাড়ছে। তাদের এই ঝুঁকির কথা জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ারের সর্বসাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। পল রাইখলার তাই মিয়ানমারে প্রাথমিক আপত্তির চারটিই যত দ্রুত সম্ভব নাকচ করে দিয়ে গণহত্যার মূল মামলার শুনানির উদ্যোগ নিতে আদালতের প্রতি আবেদন জানান।

আদালত এই শুনানির ভিত্তিতে কবে রায় দেবেন, তা অবশ্য জানাননি। এর আগে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার অন্তর্বর্তী আদেশটি দেওয়া হয়েছিল শুনানির দুই মাসের মধ্যে।

BBS cable ad

আন্তর্জাতিক এর আরও খবর: