রফতানি বন্ধ, পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন রাজবাড়ীর চাষীরা
সাচি ও মিষ্টি এ দুই জাতের পান চাষ হয় রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে। বিদেশেও বেশ চাহিদা রয়েছে কৃষিপণ্যটির। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, নেপাল, সৌদি আরব, মালয়েশিয়ায় রফতানি হয় এ অঞ্চলের পান। কভিডের পর বন্ধ রয়েছে এর রফতানি। এ অবস্থায় দেশের বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে পান। অব্যাহত লোকসানে পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষক। অবশ্য কৃষি বিভাগ বলছে, পানের সুদিন ফিরিয়ে আনতে রফতানি কার্যক্রম চালুর চেষ্টা চলছে।
পানচাষীরা বলছেন, এ বছর পানের দাম কম। সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় কেউ কেউ বরজ ভেঙে ফেলছেন। রফতানি বন্ধ থাকায় পান চাষে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
পানচাষী সুজিত কুমার সরকার বলেন, ‘আমার তিনটি বরজ ছিল। এ বছর পানের দাম কম। সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় দুটি ভেঙে ফেলেছি। এখন একটি বরজ আছে।’
মামুন শেখ বলেন, ‘পান চাষ লাভজনক হলেও মাঝেমধ্যে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। পাতা বা গাছ রোগাক্রান্ত হলে সঠিক পরামর্শ পাওয়া যায় না। এ অঞ্চলের সাচি ও মিষ্টি পান প্রচুর জন্মে। এখানকার মিষ্টি পান রাজবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী জেলার চাহিদা মিটিয়ে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, নেপাল, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় রফতানি হতো। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজ শর্তে ঋণ পেলে চাষীরা পান চাষে আরো উৎসাহী হতেন।’
পানচাষী আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কভিডের পর পান রফতানি বন্ধ রয়েছে। গত বছর পান গাছের গোড়া রোগাক্রান্ত হয়ে লোকসান গুনতে হয়। এ বছর লাভের আশা করলেও দাম কম। পানের রোগ হলে কৃষি কর্মকর্তারাও কোনো পরামর্শ দিতে পারেন না।’
কৃষকদের অভিযোগ, পান অর্থকরী ফসল হলেও চাষীরা কোনো সহযোগিতা পান না। কৃষি অফিস থেকে তাদের কোনো প্রকার সহযোগিতা করা হয় না। সরকারিভাবে তাদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করলে পান চাষকে আরো লাভজনক করে তোলা সম্ভব হবে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বালিয়াকান্দি উপজেলার আড়কান্দি, বেতেঙ্গা, চর আড়কান্দি, ইলিশকোল, সর্প বেতেঙ্গা, খালকুলা ও বহরপুরে পান চাষ বেশি হয়। এখানে পানের ৭১৪টি বরজ রয়েছে। এর মধ্যে ১৫৬টি সাচি ও ৫৫৮টি মিষ্টি পানের বরজ। এ বছর ৭৪ হেক্টর জমিতে পানের বরজ করা হয়েছে। গত বছর এ অঞ্চলে ৮১৪টি পানের বরজ ছিল। এর মধ্যে ছিল ৫১৬টি সাচি ও ২৯৮টি মিষ্টি পানের বরজ।
এ ব্যাপারে বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার ঘোষ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে মিষ্টি ও সাচি দুই ধরনের পান চাষ হয়। এখানকার মিষ্টি পান আট দেশে রফতানি হতো। তবে এখন রফতানি বন্ধ রযেছে। কৃষি অফিস থেকে পানচাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। আশা করছি অচিরেই আবার রফতানি শুরু হবে।’


