নামমাত্র সুদে ২৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা দেবে জাপান
নামমাত্র সুদে ২৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী জাপান। জাপানের ৪২তম অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স (ওডিএ) ঋণ প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশ এ অর্থ পাবে। জাপান বিশ্বের ৭০টি দেশে ওডিএ ঋণ দিয়ে থাকে। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ওডিএ ঋণ পেতে যাচ্ছে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। এ ঋণে সুদের হার হবে বার্ষিক শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ। ১০ বছরের রেয়াতসহ (গ্রেস পিরিয়ড) ৪০ বছরে এ ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। গতকাল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এ তথ্য নিশ্চিত করে।
ওডিএ ঋণের বিষয়ে ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতোর মধ্যে ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। রেকর্ড পরিমাণে ঋণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় নাওকি ইতোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ফাতিমা ইয়াসমিন। ইআরডি সূত্রে জানা যায়, জাপান সরকার ২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশকে তিন লাখ ৭৩ হাজার ২৪৭ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন দেবে, যা তিন দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। প্রতি ডলার সমান ৮৬ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি প্রায় ২৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়ন ও করোনা সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিপুল অঙ্কের এ ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান, যা বাংলাদেশের জন্য জাপানের সর্বোচ্চ ঋণের প্রতিশ্রুতি। জাপানি ইয়েনের বিবেচনায় এটাই বাংলাদেশকে দেয়া সবচেয়ে বড় ঋণ-সহায়তা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় পাঁচ বছরে ৬০০ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। এ দফার ঋণ সহায়তা তারই অংশ।
ইআরডির যুগ্ম সচিব (জাপান শাখা) মোহাম্মদ আশরাফ আলী ফারুক বলেন, জাপান বাংলাদেশকে রেকর্ড পরিমাণ ওডিএ ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জাপান বিশ্বের ৭০টি দেশে ওডিএ ঋণ দিয়ে থাকে। ওডিএ ঋণের সুদ নামমাত্র ও শর্তও সহজ। ফলে এটা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। বাংলাদেশকে এই পরিমাণ ওডিএ ঋণের প্রতিশ্রুতি জাপান এর আগে কখনও দেয়নি।
অন্যদিকে, ছয়টি প্রকল্প বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর মধ্যে অন্যতম চলমান মেট্রোরেল রুট-৬। ঢাকার যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। এতে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি করে কার। যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এ ট্রেন। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
মাতারবাড়ীতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পকেও ঋণ প্যাকেজের আওতায় আনার অনুরোধ করা হয়েছে। করোনা সংকটেও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ। প্রকল্প থেকে মিলবে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ।
ঢাকার যানজট নিরসনে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর স্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি (মাস র্যাপিড ট্রানজিট) লাইন-১ নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় রুটের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ১৬ কিলোমিটার। এটি আমিনবাজার-গাবতলী-আসাদগেট-নিউমার্কেট টিএসসি-ইত্তেফাক মোড় হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই দটি রুটও অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করা হয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্প ও স্বাস্থ্য খাত উন্নয়ন পলিসিও জাপানি সরকারি উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) প্যাকেজের আওতায় আনার অনুরোধ করা হয়েছে।