শিরোনাম

South east bank ad

উদ্ভাবনে ভুল বলে কিছু নেই

 প্রকাশ: ২২ জানুয়ারী ২০১৮, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সম্পাদকীয়

চট্টগ্রাম বিভাগের ইনোভেশন সার্কেলে (৫ ডিসেম্বর ২০১৫) অংশগ্রহণ আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখানে এসে সাধারণ নাগরিকের সেবাগ্রহণ প্রক্রিয়াকে ভোগান্তিমুক্ত করার লক্ষ্যে জেলা-উপজেলার সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগ সম্পর্কে জানার সুযোগ হলো। একটি সমাজ এগিয়ে যায় উদ্ভাবন ও ক্রিয়েটিভিটির উন্মেষের মধ্য দিয়ে। এটা খুবই আত্মসন্তুষ্টির বিষয় যে, আমরা ইতোমধ্যে এক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের অফিসাররা নিজ উদ্যোগে তৃণমূলে যে ক্রিয়েটিভিটি দেখাচ্ছেন ও ইনোভেশনকে নারচার করছেন, তা একটি দেখার মত বিষয়। খুবই অনুপ্রেরণামূলক। ইনোভেশন সার্কেলে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য মানিক মাহমুদকে ধন্যবাদ। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের ধন্যবাদ জানাই উদ্ভাবন অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য। এসকল উদ্ভাবনী উদ্যোগের কম্পাইলেশন দরকার। এ বিষয়ে একটা কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজিও থাকা প্রয়োজন। সরকারের ভিতর একটা শক্তিশালী ইনোভেশন আইল্যান্ড তৈরি হচ্ছে – যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা সবার জানা দরকার। এতে সরকারের উপর সবার একটা আস্থা তৈরি হবে। এই আস্থা উদ্ভাবন চর্চাকে সহজ করে তুলবে। উদ্ভাবন চর্চার দৃষ্টান্তগুলোর পাবলিসিটি দরকার। এজন্যই কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি হবে। এতে আমাদের নিজেদের ইন্টারনাল ইউজ ও ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বাংলাদেশকে প্রজেকশন করা সহজ হবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন ‘সত্য’ ও ‘বাস্তব’। এখানে ডিজিটাল অর্থ জ্ঞান, বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিকে সাথে নিয়ে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন করা। আমরা যেভাবে জ্ঞান, বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, এর ফলে আমাদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। এই সুযোগ ও সহায়ক পরিবেশ ঠিক থাকলে, এক যুগের মধ্যেই আমাদের মধ্যে কেউ জুকারবার্গ, কেউ বিল গেটস, কেউ স্টিভ জবস হয়ে উঠতে পারে। একইভাবে আমরা সবাই যদি উদ্ভাবন, সৃষ্টিশীলতা, সৃজনশীলতা ও জ্ঞানচর্চাকে মূল্য দেই; ছড়িয়ে দেই, পাশাপাশি, এখানে অনেক উচ্চপদস্থ অফিসাররা উপস্থিত আছেন, আমার মনে হয়, এর অর্থই হল আমরা এটাকে মূল্য দিচ্ছি। এ কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন কোথাও সরাসরি না যেতে পারলে ভিডিও কনফারেন্সিং করেন। এতে এটাই প্রমাণ হয়, আমরা সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনশীলতাকে মূল্য দেই। আপনারা উদ্ভাবনে যে ভুল করার কথা বলছেন, এ প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, একমাত্র আল্লাহ বাদে তো আর কোন সত্য নাই। আজ এখানে যেটা হচ্ছে তা হল জ্ঞান, এন্ড ইট ইজ কন্টিনজেন্ট। একইভাবে ভুল শুদ্ধ এসব কন্সেপ্ট খুবই নরমেটিভ। তাই ভুল বলে আসলে কিছু নেই। ভুল হবে এই ভয়ে পিছিয়ে থাকলে আসলে কখনোই কোন কিছু অর্জিত হবে না, বরং ভুল থেকে শিখতে হবে। একজন বাচ্চাকে দেখুন, সেও কিন্তু বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবন করছে। কিন্তু সে উদ্ভাবন করছে পড়ে পড়ে, দেখে দেখে, দ্যাট ইজ দ্য লার্নিং প্রসেস। একইভাবে ভুল করে শেখাটাও একটি লার্নিং প্রসেস। তাই এই যে সরকারি কাজে উদ্ভাবনবান্ধব পরিবেশটা তৈরি হচ্ছে, তা আমাদের লালন করতে হবে, একে সমর্থন করতে হবে, বিভিন্ন মিডিয়াতে তা প্রচার করতে হবে। যে সকল প্রজেক্ট হচ্ছে, সেগুলোকে কিভাবে আরো বড় করা যায়, সে বিষয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে, বিশেষ করে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে। আমরা বিভিন্ন টার্ম ব্যবহার করি। যেমন – ইনক্লুশন। এসব টার্ম ব্যবহার করার পক্ষপাতি আমি না। মনস্তাত্বিক দিক থেকে আমি মনে করি এ কাজটা ভাল না। সকল মানুষকে আমরা সমান দেখব, এখানে ইনক্লুড-এক্সক্লুড করার আমরা কে? আমরা সবাই কিভাবে এই প্র্যাকটিস করতে পারি তা দেখতে হবে। যে কোন ভাল কাজকে একটা বড় ডোমেইনে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। যদিও প্রতিটি জাতির একটি ইতিহাস বা ঐতিহ্যের প্রয়োজন রয়েছে, আমাদের তা আছে। পাশাপাশি আমাদের ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের ইতিহাসের একটা ব্যাগেজও তৈরি হয়েছে, তা আমাদের ভাংগতে হবে। কারণ, এই ব্যাগেজটা আমাদেরকে পিছনে টেনে রাখছে। তাই পরিকল্পিতভাবে এই ব্যাগেজকে ছিড়ে ফেলতে হবে। যেটাকে আপনারা বলেছেন নতুন অর্গানাইজেশন তৈরি করতে হবে। ট্রু, নতুন অর্গানাইজেশন তৈরি না করতে পারলে আমরা নতুন সৃষ্টি করতে পারব না। সুতরাং, আপনাদের এই রিফর্মে আমরা সাহস করে সাপোর্ট করব, ২০০ বছর ধরে যা চলে আসছে তার পরিবর্তন করা যাবে না, তা তো নয়। তা না হলে তো এই টেকনোলোজির সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে চলতে পারব না। কিন্তু তাই বলে তো আমাদের একবারে ঘর ভেঙ্গে ফেললে হবে না। কারণ, একটা অস্তিত্ব তো থাকতে হবে, এ জন্য এ বিষয়ে একটি ট্রানজিশন মেকানিজম তৈরি করতে হবে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, ব্রিটিশদের শিখানো যে সিস্টেম তা এতদিন বারডেন হিসেবেই ছিল। আমি বলতে চাই, আমরা আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, নতুন করে তৈরি করব। আমি সবসময়ই বলে থাকি, আমাদের পশ্চিমের বা পূর্বের কোন উদাহরণ ফলো করার দরকার নেই। কারণ, আল্লাহ তো আমাদের বুদ্ধি দিয়েছেন, সেই বুদ্ধি ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের মত করে একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াস নেব। আমরা কোন দেশের মত না হয়ে আর একটু ভাল কোন দেশ হতে চাই, যেখানে সবাই ভাল থাকবে, মানুষে মানুষে ভালবাসা থাকবে, ইন্ডিভিজুয়ালিটি থাকবে না, সমাজের একটা বন্ড থাকবে, সাহিত্য, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ থাকবে। সতরাং আমাদের সুযোগ রয়েছে সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে এ ধরনের একটি সমাজ গড়ে তোলার। এবং আমাদের সেই সাহস আছে। একটা কথা বলে আমি আমার বক্তব্য শেষ করতে চাই। একটা কথা বার বার এসে যায় যে বাংলাদেশের গ্রোথ রেট ৬% থেকে ৭% হয়েছে যা একটি ইম্পর্টেন্ট ইস্যু হিসেবে পেপারে লেখা হয়। কিন্তু আমি অনারেবল প্রাইম মিনিস্টারকে বলেছি, স্যার, আপনি এটা বলবেন না, এটি ভুল। কারণ, কিছু অর্থনীতিবিদরা মিলে প্রেডিক্টিভ মডেলে জিনিসটা করেছেন। এই একই মডেলে বাংলাদেশ অন্যান্য বিষয় যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মাতৃস্বাস্থ্য – এসব বিষয়ে ডাবলেরও বেশি উন্নয়নে রয়েছে। তার মানে এটা বলতে হয় যে, দেশের পার ক্যাপিটা ইনকাম ডাবলের বেশি করতে হবে। অন্যভাবে যদি বলি, বাংলাদেশের পার ক্যাপিটা ইনকাম ভারতের অর্ধেক, কিন্তু এই সূচকের ভিত্তিতে আমরা ভারতের আগে এগিয়ে আছি। এটাই প্রমাণ করে যে, আমরা যে ৬% বা ৭% এর কথা বলি তা ঠিক নয়, এই বক্তব্য আমাদের পিছু টান দিবে। কারণ, আমরা আল্লাহর মেহেরবানীতে এই গ্রোথ রেট ও এই পার ক্যাপিটা ইনকামে অনেক অর্জন লাভে সক্ষম হয়েছি। সুতরাং, আমরা নতুন পাথওয়ে তৈরি করেছি। এখানে আপনারা সবাই কন্ট্রিবিউটর। আমরা সবাই ওই পাথওয়েতেই থাকব, এর ফলে গ্রোথ রেট ও পার ক্যাপিটা ইনকামের সাথে সাথে আমরা মানুষের মঙ্গলের জন্যও কিছু করতে পারব। এই যে উদ্ভাবনী প্রজেক্টগুলো আপনারা গ্রহণ করেছেন, এর ফলে মানুষ ভাল সার্ভিস পাচ্ছে, তার খরচ কমছে, সময় বাঁচছে, তার জীবনযাপন সহজ হয়ে আসছে, এর ইম্প্যাক্ট অনেক। এই উন্নয়নের একটি অংশ হিসেবে আপনাদের বলতে চাই – বি ক্রিয়েটিভ, বি ইনোভেটিভ, ভয় করার কোন কারণ নাই, ভুল বলে কিছু নেই। তবে আমাদের কাজ হতে হবে সকলের জন্য মঙ্গলকর। আমাদের তরফ থেকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফ হতে আপনাদের এইসব ইনোভেশন ও ক্রিয়েটিভিটিকে সকল সমর্থন দেওয়া হবে। এখানে আসতে পেরে আমার খুব ভাল লাগছে, এনকারেজড ফিল করছি। আপনারা সবাই ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ।
BBS cable ad

সম্পাদকীয় এর আরও খবর: