শিরোনাম

South east bank ad

ভাসানচরে রোহিঙ্গারা যেন স্থানান্তর না হয়, এ নিয়ে ক্যাম্পগুলোতে চলছে প্রপাগান্ডা

 প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ভিন্ন খবর

ভাসানচরে রোহিঙ্গারা যেন স্থানান্তর না হয়, এ নিয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে চলছে প্রপাগান্ডা। অতীতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের কর্মকা- নিয়েও ক্যাম্পগুলোতে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিল। ফলে মিয়ানমারে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত বা প্রত্যাবাসন করা যায়নি গত তিন বছরে। একইভাবে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে ভাসানচরে না যেতে। চরটিতে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য যে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, তা পরিদর্শনের জন্য যে ৪০ জন রোহিঙ্গা মাঝিকে (নেতা) নেওয়া হয়েছিল, তাদের অধিকাংশই ক্যাম্পে ফিরে গিয়ে নিজেদের মত পাল্টে ফেলেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। ভাসানচরের পক্ষে যেন কোনো কথা বলা না হয়- এ নিয়ে কোনো কোনো মাঝি হুমকির শিকারও হচ্ছেন বলে জানা যায়। তবে ক্যাম্পে মিথ্যা প্রচারণা ঠেকাতে সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসন তৎপরতা শুরু করেছে বলেও জানা গেছে। সূত্র জানায়, কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী যাতে ভাসানচরে না যায় সে বিষয়ে গোপনে একটি চক্র মিথ্যা প্রচারণা ও প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। বলা হচ্ছে- ‘ভাসানচর বসবাসযোগ্য নয়। যে কোনো সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে এই চর ডুবে যেতে পারে। এই চরে যাওয়া যাবে না।’ এ ধরনের নেতিবাচক বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হচ্ছে ক্যাম্পে। বিশেষ করে ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের মোবাইলে ফোন করে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে বলে স্থানীয়দের সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে রোহিঙ্গাদের ৪০ সদস্যের প্রতিনিধি দল গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে ক্যাম্পে ফেরত আসে। ভাসানচরে অবস্থানকালে ইতিবাচক মন্তব্য করলেও ক্যাম্পে তারা ভাসানচর বিষয়ে কোনো প্রচারণা চালাননি। উল্টো অভিযোগ করেন, ভাসানচর সম্পর্কে কোনো প্রচারণা চালালে তাদের ক্ষতি করা হবে, এমন হুমকি পাচ্ছেন। টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন শামলাপুর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের হেড মাঝি নুর মোহাম্মদ বলেন, আবদুর শুক্কুর ওরফে হুজুর পরিচয়ে আমাকে ফোনে হুমকি দিয়েছে। বলেছে, ‘ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়াদের তালিকা সরকারকে দেওয়ার দায়িত্ব তোকে কে দিয়েছে? ক্যাম্পে প্রচারণা চালালে তোর খবর আছে, এই দুনিয়ায় বেশি দিন ঠাঁই হবে না। আবার কথা হবে।’ মাঝি নুর মোহাম্মদ বলেন, আমার শিবিরের চারজন রোহিঙ্গা নেতা ভাসানচর ঘুরে এসেছেন। তাদেরও বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। উখিয়ার হাকিমপাড়ার শরণার্থী শিবিরের হেড মাঝি হামিদ হোসেন বলেন, ‘ভাসানচরের অবকাঠামো ও পরিবেশ সুন্দর। তবে থাকার ঘরগুলো নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। আসার আগের দিন ভাসানচর নিয়ে মতামত চাওয়া হলে সবার পক্ষ থেকে বিষয়টি সেখানকার কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। ক্যাম্পে ফেরার পর বিভিন্ন ধরনের গুজব কানে আসছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে।’ এর আগে পরিদর্শনে যাওয়া রোহিঙ্গা নেতারা ভাসানচর থেকে বলেছিলেন, ‘অবকাঠামো এবং সুন্দর পরিবেশ বিষয়ে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের জানানো হবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে, প্রতিটি ক্যাম্প থেকে যেন স্বেচ্ছায় কিছু পরিবার ভাসানচরে যেতে রাজি হয়।’ শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভাসানচর দেখে আসা রোহিঙ্গা নেতাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এমন কথা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এদিকে জোর করে নয়, আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতায় আলাপ-আলোচনা ও মোটিভেশনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিতে চায় সরকার। এমনই বললেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে অত্যাধুনিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে আসার পর সুর পাল্টিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং ১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরে পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সরেজমিন দেখতে ৫ সেপ্টেম্বর দুই নারীসহ ৪০ জন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ভাসানচরে যান।

BBS cable ad

ভিন্ন খবর এর আরও খবর: