মিউচুয়াল ফান্ডের রূপান্তর-অবসায়ন ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত

মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়ন বা রূপান্তরের প্রক্রিয়া ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি। ১০ জানুয়ারি আপিলের পূর্ণাঙ্গ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
মিউচুয়াল ফান্ডের রূপান্তর-অবসায়ন ইস্যুতে বিএসইসির প্রজ্ঞাপন ও এর আলোকে প্রদত্ত সর্বশেষ নির্দেশনা অবৈধ ঘোষণা করে গত মঙ্গলবার রায় দেন হাইকোর্ট বিভাগ। এতে একটি মেয়াদি ফান্ডের রূপান্তর ও আরো দুটি ফান্ডের অবসায়ন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।
এর পর বিনিয়োগকারী ও বাজার-সংশ্লিষ্টদের দ্বিধা কাটাতে দ্রুত আপিলের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। বৃহস্পতিবার বিএসইসি আপিল আবেদন করে। প্রাথমিক শুনানি শেষে অবকাশকালীন চেম্বারের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বিএসইসি ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশ দেন। ১০ জানুয়ারি এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন ধার্য করেছেন চেম্বার বিচারপতি।
এর অর্থ, ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের রূপান্তর বা অবসায়নের প্রক্রিয়া চলবে না। এছাড়া এ সময় পর্যন্ত স্টক এক্সচেঞ্জে ফান্ডগুলোর ইউনিট কেনাবেচায়ও কোনো বাধা থাকল না।
এ প্রসঙ্গে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, ১০ জানুয়ারি আমাদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এর আগ পর্যন্ত বিষয়টি একটি স্থিতাবস্থায় থাকছে।
উল্লেখ্য, বিনিয়োগকারী আলি জামানের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ও অবলুপ্তির বিষয়ে ২০১০ সালে জারি করা বিএসইসির প্রজ্ঞাপন ও এর আলোকে গত জুনে জারি করা নির্দেশনা অবৈধ ঘোষণা করেন বিচারপতি তারিকুল হাকিম ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। এতে গ্রামীণ ওয়ান: স্কিম ওয়ান ও এইমস ফার্স্ট গ্যারান্টিড মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়ন এবং আইসিবি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের রূপান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচুয়াল ফান্ড) বিধিমালা-২০০১-এর ৫০ (খ) ধারায় বলা আছে, কোনো মেয়াদি স্কিমের মেয়াদ এবং পরিমাণ স্কিম ঘোষণার সময়ই নির্ধারণ করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, স্কিমের মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে এক বছর আগে ইউনিট মালিকদের বিশেষ সভায় উপস্থিত তিন-চতুর্থাংশ ইউনিটধারীর সম্মতিতে ফান্ডের মেয়াদ অনুরূপ একটি মেয়াদের জন্য বর্ধিত করা যাবে।
তবে ২০১০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কমিশন মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ও অবলুপ্তি-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে, যাতে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণ করার পাশাপাশি যেসব মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ এরই মধ্যে ১০ বছর অতিক্রম করেছিল, সেসব ফান্ডকে ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবলুপ্তির নির্দেশ দেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ পরিচালিত আটটি ফান্ডের মেয়াদ আরো চারবার বাড়ানো হয়।
চলতি বছর মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডকে বেমেয়াদিতে রূপান্তর অথবা অবসায়নের একটি গাইডলাইনও প্রকাশ করে বিএসইসি। গত ২৯ জুন কমিশন সভায় আইসিবির ফান্ডগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস পরিচালিত দুই মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের রূপান্তর-অবসায়নের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে ইউনিটধারীদের সিদ্ধান্ত অনুসারে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বেমেয়াদিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে আইসিবি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি। আর একই সময়ের মধ্যে অবসায়নের প্রক্রিয়ায় ছিল এইমস ফার্স্ট ও গ্রামীণ ওয়ান স্কিম ওয়ান।
মাঝে আলি জামানের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ মিউচুয়াল ফান্ডের রূপান্তর বা অবসায়ন-সংক্রান্ত বিএসইসির নির্দেশনার কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখার আদেশ দেন। একই সঙ্গে বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক প্রজ্ঞাপন ও এর ভিত্তিতে জারি করা আদেশ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
পরে বিএসইসি এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ১ নভেম্বর হাইকোর্টের নির্দেশ বাতিল করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই গত মঙ্গলবার আলি জামানের রিটের চূড়ান্ত রায় দেন হাইকোর্ট, বৃহস্পতিবার যে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করে বিএসইসি।