চাঙা বাজারে বিনিয়োগকারীরা কেন আগ্রহী দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে

২০১০ সালের মহাধস কাটিয়ে পুঁজিবাজার ধীরে ধীরে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিরাজ করছে পুঁজিবাজারে। কিনউত চাঙা এ বাজারে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দরঅস্বাভাবিভাবে বেড়েছে। সেই তুলনায় পিছিয়ে মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারদর। বেশ কিছুদিন ধরে দুর্বল কোম্পানির আধিপত্য লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রতিদিনই দরবৃদ্ধির তালিকায় উঠে আসছে জেড ক্যাটাগরির শেয়ার।তবে দর হ্রাসের তালিকায়ও এসব শেয়ার পিছিয়ে নেই।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার এখন বেশ পরিপক্ক এবং বিনিয়োগকারীরাও আগের চেয়ে সচেতন। তাঁদের মতে, দুর্বল কোম্পানির শেয়ার অকারণে দরবৃদ্ধি বাজারের জন্য অশুভ সংকেত। এসব শেয়ারে লাভের সম্ভাবনা যতোটা বেশি থাকে, লোকসানের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাঁরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা বিশেষ করে নতুন বিনিয়োগকারীরা গুজবে কান দিয়ে বেশি লাভের আশায় দুর্বল শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন। একটি-দুটি শেয়ারে হয়তো তারা লাভও করেন। কিন্তু আলটিমেটলি তারা ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকবেন। তাঁদের মতে, পুঁজিবাজারে লোভ সংবরণ করতে হবে এবং বিচার-বুদ্ধি দিয়ে শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘একটি চক্র নিজেদের মধ্যে টানাটানি করে স্বল্প মূলধনি দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ায়। শেয়ারটি ব্রাইব্রেশন দেখে বিনিয়োগকারীরাও শেয়ারটির প্রতি ঝুঁকে। তারপর দেখা যায়, বিনিয়োগকারীরা লাভ করতে গিয়ে লোকসানের গ্লানি টানছে। স্বল্প মূলধনি দুর্বল কোম্পানির শেয়ার থেকে বিনিয়োগকারীদের বিরত থাকতে হবে। কেননা স্বল্প মূলধনি দুর্বল কোম্পানির শেয়ার ইতোমধ্যে ঝুঁকির সীমানা ছাড়িয়ে মহাঝুঁকিতে অবস্থান করছে।”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজার এখন ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও বাজারে ফিরে আসছেন, এটা ভালো খবর। তবে তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, তারা যেন কোনো ধরনের ভুল না করেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে এখন অনেক ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের দর ক্রয়যোগ্য রয়েছে। দুর্বল কোম্পানিতে না ঝুঁকে তারা যদি এসব কোম্পানি দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে পারেন, তাহলে ভালো ফল আশা করতে পারবেন। সম্প্রতি ৭টি দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দরবৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে ২টি কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। এরপরও এসব কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধির ঝলক থেমে নেই। আর কোনো কিছু না বুঝেই এসব শেয়ারে এসব বিনিয়োগ করছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের এ মনোভাবকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
এসব কোম্পানি নিয়ে মন্তব্য চাইলে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সুযোগসন্ধানীরা ওঁত পেতে থাকে। এ সময় তারা স্বার্থ হাসিল করতে চায়। কথাটি বিনিয়োগকারীদের মাথায় রাখা উচিত। কারণ পুঁজি যার, নিরাপদ রাখার দায়িত্বও তার। গুজুবে কান দিয়ে শেয়ারে বিনিয়োগ করলে ক্ষতি অনিবার্য হয়ে দেখা দেবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন। অন্য কারো কথায় বা গুজবে কান দিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করা তাদের উচিত হবে না। ইনভেস্ট করার আগে তাদেরই ঠিক করতে হবে, তিনি যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন, সেটা ঝুঁকিমুক্ত কি না। সিদ্ধান্ত ভুল হলে এর মাশুল তাকেই দিতে হবে। তিনি বিনিয়োগকারীদের ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির সঙ্গে থাকার পরামর্শ দেন।