শিরোনাম

South east bank ad

বন্যায় ভাসছে ১৯ জেলা, বাড়ছে পানি

 প্রকাশ: ১৩ অগাস্ট ২০১৭, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ভিন্ন খবর

বন্যায় ভাসছে ১৯ জেলা, বাড়ছে পানি
হঠাৎ করেই বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট এই বন্যায় লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। মোট ১৯ জেলার বিভিন্ন স্থান বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যার ফলে রেল ও সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। লালমনিরহাটে তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। স্থানীয়দের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় তিস্তার উজানে ভারতে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। রাত ৯টা নাগাদ তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতবাড়িতে পানি ওঠেছে। তড়িঘড়ি করে বসতবাড়ির আসবাব পত্র সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। অনেকে বসতবাড়ি ছেড়ে ওয়াপদাবাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, গুমানী, হুরাসাগর, ফুলজোড় নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন করে আবারও বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের ডাটা এ্যান্ট্রি অপারেটর আবুল কালাম আজাদ জানান, শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় (সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্ট এলাকায়) যমুনা নদীর পানি ৩৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫০ হাজার মানুষ। কুড়িগ্রাম সদরের হলোখানা, পাঁচগাছি, ভোগডাঙ্গা, যাত্রাপুর, মোগলবাসা; উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ; নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ, নুনখাওয়া; ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা, ভাঙ্গামোড় ও শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের অনেক গ্রামে পানি ঢুকে ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৫০টি স্কুলে পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক। দিনাজপুরে ২৮ ঘণ্টায় ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারি বৃষ্টিতে শত শত একরের ফসলি জমি, নিম্নাঞ্চল এবং অভ্যন্তরীণ সড়ক-মহাসড়ক তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে নদীর বাঁধসহ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৮০০ পরিবার। সিলেট জেলার চারটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো হচ্ছে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলা। বন্যায় এসব উপজেলার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একাধিক উপজেলায় রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। টানা বর্ষণের কারণে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রেললাইনের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। একাধিক জায়গায় এক থেকে পাঁচ ফুট পানির নিচে রয়েছে  রেললাইন । ফলে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রুটে চলাচলকারী ট্রেন বন্ধ রয়েছে। রেললাইন থেকে পানি অপসারিত হলে এবং লাইন সংস্কার শেষে এই রুটে ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করা হবে। জানা যায়, পঞ্চগড় থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের মধ্যে নয়নিবরুজ ও কিসমত স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় রেললাইনের পাথরসহ বিভিন্ন উপকরণ পানির তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় পাথর-মাটি সরে গিয়ে দুই থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় দুই কিলোমিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই জেলার মধ্যে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের টঙ্গন, সেনুয়া ও শুক নদীসহ আঞ্চলিক নদীগুলোতে রোববার সকাল থেকে পানি বিপদসীমার ৪০ মিলিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির এ অব্যাহত বৃদ্ধিতে জেলার প্রায় ১ হাজার গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে বন্ধ ছিল রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক এবং রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়া আর্মি ক্যাম্প এলাকায় পার্শ্ববর্তী পাহাড় ধসে প্রধান সড়কে মাটি নেমে আসে। ফলে এই সড়কে হালকা যানবাহন চলা শুরু হলেও ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। খাগড়াছড়ি দীঘিনালা ও বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সাজেক ও লংগদুর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সাজেকে আটকা পড়েছে পর্যটকের শতাধিক গাড়ি। গত দুই দিনের টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালী ইউনিয়নের চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ছোট মেরুং বাজারসহ দীঘিনালা-লংগদু সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে লংগদুর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ।
BBS cable ad

ভিন্ন খবর এর আরও খবর: