পুরান ঢাকাকে বদলে ফেলার কাজ শুরু

পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকাকে আধুনিক নগরে পরিণত করতে চায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। কীভাবে এটা করা যাবে, সেটির একটি নকশাও করেছে তারা। ‘আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্প’ নামে এই কর্মসূচি নিয়ে পুরান ঢাকার একটি এলাকার গেছেন কর্মকর্তারা। এই প্রকল্পের অধীনে ছোট ছোট বাড়িঘরগুলো ভেঙে ফেলে একটি বা একাধিক বহুতল ভবন করা হবে।
এই বহুতল ভবনে আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। আর ভেঙে ফেলা বাড়িঘরের জায়গায় নির্মাণ করা হবে চওড়া সড়ক, পানি নিষ্কাষণের নালা, পার্ক, রোপন করা হবে গাছ পালা। এই প্রক্রিয়ায় কোনো জমি অধিগ্রহণ করার দরকার পড়বে না। স্থানীয়দের মধ্যেই এসব স্থাপনার মালিকানা থাকবে। সরকার কেবল তাদেরকে সহযোগিতা করবে।
রবিবার বংশাল এলাকায় জরিপের মধ্য দিয়ে এই প্রকল্পের হাতেখড়ি হলো। কর্মকর্তারা সেখানে পুরনো, ঘিঞ্জি ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কতগুলো আছে, সেটি তালিকা শুরু করেছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে এই কাজ শেষ করে নগরভবনে একটি অবহিতকরণ সভাও করবে রাজউক।
বংশালে পাইলট প্রকল্পের কাজ করে এলাকাবাসীর মধ্যে থাকা সব সংশয়-সন্দেহ দূর করে নগরীর অন্যত্রও একই মডেলে আগাতে চায় রাজউক। এর মাধ্যমে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা শহরকে আধুনিক শহরে রূপান্তর করা সম্ভব বলে মনে করছে সংস্থাটি।
রাজউক কর্মকর্তারা বলছেন, এলাকাবাসীর মতামত সন্নিবেশ করে অল্প জায়গায় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে পরিকল্পিত নগরায়ন করা সম্ভব। রাজউকের উপ নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পুরান ঢাকার মূল সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। আজ থেকে ওই এলাকায় জরিপ কাজ শুরু করা হয়েছে।’
রাজউকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘জাপানের একটি আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ফলে ওই এলাকার চিত্র পাল্টে যায়। সেই রকমভাবে আমাদের পুরান ঢাকাকে আধুনিক মেগা প্রকল্পের আওতায় নিয়ে এসে ‘আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করলে পুরান ঢাকাও বদলে যাবে। তখন ওই এলাকায় দুঃসহ যানজট ও জলজট হবে না।’
এই প্রকল্পে ছোট ছোট ও পুরনো ভবনগুলো ভেঙে ফেলা হলেও হ্যারিটেজ স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ করা হবে।
রাজউক কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে রাজউক এর নগর পরিকল্পনা শাখায় পুরান ঢাকার কোতয়ালী থানার অন্তর্গত বংশাল এলাকায় স্থানীয় জমির মালিকদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া-এর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উক্ত এলাকার জন্য পইলট প্রকল্প হিসাবে একটি আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্প গ্রহণে কাজ চলছে। ভবিষ্যতে উক্ত এলাকার জনসাধারণের মতামত নিয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
এই রাজউক কর্মকর্তা বলেন, ‘আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রকল্পভুক্ত এলাকায় জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন নাই। স্থানীয় জনসাধারণের সাথে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।’
রাজউকের পক্ষ থেকে পুরান ঢাকার যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো হলো- আবাসন; পুরনো, জরাজীর্ণ ভবন, অপর্যাপ্ত আলো বাতাস; অতি ঘিঞ্জি পরিবেশ; অপরিকল্পিত, ফুটপাতবিহীন, সংকীর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা; অপরিকল্পিত, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা; ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা; অপর্যাপ্ত, অস্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা; অপ্রতুল খোলা জায়গা, ও অপ্রতুল গাছপালাবিহীন পরিবেশ; ভূমিকম্প ও অগ্নিদুর্ঘটনার অতিমাত্রার ঝুঁকিযুক্ত এলাকা; দূষণযুক্ত পরিবেশ; অপরিকল্পিত, অপর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধাদি।
আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত এলাকায় উপরিউক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করছে রাজউক। আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য হলো- জনসাধারণসহ সকল স্টেকহোল্ডার এর অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন কার্যক্রম; মতামত ও চাহিদার নিরিখে পরিকল্পনা প্রণয়ন; বিদ্যমান ভবন ও অবকাঠামো সমূহের পুনঃনির্মাণ, পুনর্বিন্যাস ও কাঠামোগত হালনাগাদকরণ; রাস্তা প্রশস্তকরণ ও পরিকল্পিত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার নিশ্চায়ন; ভূমিকম্প, অগ্নিদুর্ঘটনাসহ অনান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধার সংস্থান; পর্যাপ্ত গাছপালাযুক্ত পার্ক, খেলার মাঠসহ খোলা জায়গা সৃজন; পরিবেশবান্ধব, দৃষ্টিনন্দন শহুরে আবাসন পরিবেশ সৃজন।
রাজউক এর চলমান ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (২০১৬-২০৩৫) প্রণয়নের কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পিআরএ সেশন ও মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়েছে। মনবিনিময়কালে পুনঃউন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে পুরান ঢাকার বিদ্যমান সংকীর্ণ রাস্তাগুলো চওড়া করা, খোলা জায়গা সৃষ্টি প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।