ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে হাই কোর্টের রায় ২ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় ২ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারকের বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।
হাই কোর্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করলে রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে গিয়েছিল গত সপ্তাহে। চেম্বার বিচারপতি হাই কোর্টের রায়ের কার্যকারিতা ১৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দিলে রোববার তা শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম।
অ্যাটর্নি জেনারেল রোজাসহ বিভিন্ন কারণে শুনানি ছয় সপ্তাহ পেছানোর আবেদন করলে আপিল বিভাগ ২ জুলাই শুনানির পরবর্তী তারিখ রাখে।
আদেশে বলা হয়, ওই সময় পর্যন্ত হাই কোর্টের রায় স্থগিত থাকবে এবং এর মধ্যে হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত আপিল করতে হবে।
তিনটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১১ ও ২০১২ সালে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ১১ মে ওই রায় দেয়।
২০০৯ সালের ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ১১টি ধারা-উপধারা অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাই কোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, এ আইন বিচার বিভাগের স্বাধীনতারও পরিপন্থি।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে ভ্রাম্যমাণ আদালত অধ্যাদেশ জারি করে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর জাতীয় সংসদে পাস করে তা আইনে পরিণত করে। এরপর থেকে এটি ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন নামে পরিচিত।
ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পারাপার বন্ধে ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল বাংলামোটর মোড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসে। ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পারাপার বন্ধে ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল বাংলামোটর মোড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসে। এ আইনের ৫ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আইনের ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯ ও ১০ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পদ্ধতি, ১১ ধারায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা ও ১৩ ধারায় আপিল সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। আর ১৫ ধারায় তফসিল সংশোধনে সরকারের ক্ষমতার বিধান রয়েছে।
রায়ের সার-সংক্ষেপে হাই কোর্ট বলে, “ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের এসব ধারা মাসদার হোসেন মামলার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একইসঙ্গে সংবিধানের মৌলিক দুটি স্তম্ভ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির পরিপন্থি। তাই এ ধারাগুলোকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হল।”
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, “আসলে ২০০৯ সালে আইনটি হওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যকারিতায় সমাজে এক ধরনের ডিমান্ড তৈরি হয়েছে। ভেজাল, নকলের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে মানুষের এক ধরনের আস্থা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া বাল্যবিবাহ রোধ, নকলমুক্ত পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভূমিকা ইতিবাচক। এ কারণে জনস্বার্থে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”