জয়ের তাগাদার পরও ফেসবুকে উন্নয়ন প্রচারে নেই এমপিরা

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে জনসংযোগ বাড়ানোর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। কীভাবে আরও কার্যকরভাবে এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার করা যায় সে বিষয়ে সংসদ সদস্যদেরকে নিয়ে কর্মশালাও করছেন জয়।
তবে জয় বিষয়টি নিয়ে যতটা সচেষ্ট, সংসদ সদস্যদের মধ্যে তার কতটা প্রভাব সে নিয়ে প্রশ্ন রাখাই যেতে পারে। কারণ, গত জয়ের কর্মশালায় যে কয়জন সংসদ সদস্য অংশ নিয়েছিলেন তাদের বেশ কয়েকজনের ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখা গেছে, জয় যেভাবে চাইছেন, সেভাবে আগাচ্ছেন না তারা।
কর্মশালায় জয় সংসদ সদস্যদেরকে তাদের কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ফেসবুকে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট করে জয় বলেছেন, সব সংসদ সদস্য যেন প্রতিদিন অন্তত একটি করে উন্নয়ন বিষয়ক সংবাদ বা কর্মসূচির তথ্য শেয়ার করেন। অথবা উন্নয়ন নিয়ে যারা পোস্ট দেন সেগুলো যেন শেয়ার করেন সংসদ সদস্যরা।
রবিবার জয়ের কর্মশালায় কিন্তু এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন ৬০ জন সংসদ সদস্য। পরদিন এদের মধ্যে ১২ জনের ফেসবুক ওয়াল ঘেঁটে জয়ের নির্দেশনার কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। ফেসবুকে এই ১২ জন সংসদ সদস্য সক্রিয় বটে, তবে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শেয়ার করেন নিজেদের বা অন্য কোনো ছবি। সেগুলো সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের এমনও না।
প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যদেরকে জয় বলেন, ‘শুধু কাজ করলে হবে না, মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে আমরা কী করছি তাদের জন্য।’
একই দিন রাতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
রংপুর-২ আসনের সংসদ আবুল কামাল মোঃ আহসানুল হক চৌধুরী (ডিউক চৌধুরী) প্রশিক্ষণের আগে সর্বশেষ ৩ মে রাত নয়টা ৪৮ মিনিটে নিজের একটা ছবি দেন। এরপর কর্মশালা চালকালীন থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিজের তিনটা ছবি (সেলফি) আপলোড করেন যার দুটি ছিল প্রশিক্ষণের। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত এমডিজি বিষয়ক অবহিতকরণ আলোচনার, ধানমন্ডি কার্যালয়ে একটি বৈঠকের এবং কক্সবাজার সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমুদ্র দর্শনের দুটি ছবি তিনি শেয়ার করেন।
নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল প্রশিক্ষণের পর থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি দুইবারে ১৫ ছবি আপলোড করেন। যার মধ্যে নয়টি হলো প্রশিক্ষণের আর বাকি ছয়টি হলো টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বিষয়ক অবহিতকরণ কর্মশালার ছবি।
ভোলা- ৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ৭ মে সকাল সাতটা ৮ মিনিটে সামজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার ছবি আপলোড করেন। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময় থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ফেসবুকে ছয়টি পোস্ট দেন। এর মধ্যে ছিল ছবি আপলোড, ছবি শেয়ার, বিটিভিতে নিজের উপস্থিত থাকা টকশো এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ফেসবুক লাইভে উপস্থিত থাকবেন এমন তথ্য জানিয়ে পোস্ট।
নোয়াখালী- ৬ আসনের সংসদ আয়েশা ফেরদাউসের ফেসবুক পাতার নাম আয়েশা আলী। এ পাতায় তিনি সর্বশেষ গত ৬ মে বিকাল ৫ টা ৩৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার সফরে সমুদ্রে খালি পায়ে হাঁটা নিয়ে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিউজ শেয়ার করেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এরপর কোন আপডেট তিনি করেননি।
জানতে চাইলে আয়েশা ফেরদাউস ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রশিক্ষণে আমাদের সরকারের উন্নয়নের চিত্র সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করবো। শিগগিরই পোস্ট দেব।’
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম উম্মে রাজিয়া কাজল প্রশিক্ষণের পর এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চারটি পোস্ট দেন। এর একটি হল প্রশিক্ষণের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথে তোলা ছবি এবং পরে এ ছবি তিনি শেয়ার করেন। তিনিও প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজার সফরে তোলা ছবি শেয়ার করেন।
মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান প্রশিক্ষণের আগে প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজার সফর নিয়ে একটি নিউজ শেয়ার করেন। প্রশিক্ষণের পর এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি ফেসবুকে আরও দুটি পোস্ট করেন। যার একটি হলো প্রশিক্ষণের সময় তোলা ছবি এবং নিজের একটি পুরনো ছবি।
ময়মনসিংহ-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল প্রশিক্ষণের আগের প্রশিক্ষণ কর্মশালার পর প্রশিক্ষণের চারটি ছবি আপলোড করেন। এরপর এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি কোন ছবি বা তথ্য পোস্ট দেননি। একই অবস্থা তাঁর নামে থাকা লাইক পেজেরও।
অন্যদিকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি প্রশিক্ষণের পরে তিনি বেশ কয়েকটি পোস্ট দেন এবং শেয়ার করেন। যেখানে প্রশিক্ষণ কর্মশালার ছবি ছাড়াও রয়েছে বিএনপির সমালোচনা করে সংসদে দেয়া নিজের বক্তব্য শেয়ার করেন।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের আরেক সংসদ সদস্য নাভানা আক্তার প্রশিক্ষণের পর সাতটি পোস্ট দেন। যার মধ্যে তিনি সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য নিয়ে প্রচার হওয়া দুটি নিউজ শেয়ার করেন। নাভানা আক্তার প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সজীব ওয়াজেদ জয়ে বক্তব্যের ফেসবুক লাইভ শেয়ার করেন। এছাড়াও তিনি তিনি কর্মশালা এবং সংসদীয় দলের ছবি পোস্ট করেন।
প্রশিক্ষণ কর্মশালার আগের গত ৬ মে জামালপুরে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভার ছবি পোস্ট করে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ। প্রশিক্ষণের পর তিনি আরও চারটি পোস্ট দেন। যার মধ্যে দুটি হলো কর্মশালার ছবি, একটি ছবি শেয়ার করেন। এছাড়াও তিনি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের পুরো বক্তব্যের ভিডিও পোস্ট করেন।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেয়ার পরও বেশিরভাগ সংসদ সদস্য সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প প্রচার করছেন না। কেন এমন হচ্ছে-জানতে চাইলে মাহজাবিন খালেদ বলেন, ‘আমি অনেক দিন আগ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রচার করছি। কর্মশালার পরও করছি। কেন অন্যরা করছেন না, তা আমি বলতে পারবো না। তবে সবারই তা করা উচিত।’
প্রশিক্ষণ কর্মশালার দ্বিতীয় দিন প্রশিক্ষণ দেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ। সেখানে তিনি বলেন, ‘যোগোযোগ মাধ্যমের বড় সুবিধা হচ্ছে ধরেন কোন পত্রিকা কিংবা টেলিভিশন আপনার নিউজ ছাপা হলো না। কিন্তু আপনি এ যোগোযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে আপনার চিন্তা-ভাবনার কথা পৌঁছে দিতে পারবেন।’
হাছান মাহমুদ কর্মশালায় এ কথা বললেন তাঁর ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখা গেছে, সেখানে তার নিজের প্রচারই কেবল করেছেন তিনি। গত দুই দিনে বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে তার নিজের সংবাদ সম্মেলনের দুটি সংবাদের লিংক শেয়ার করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি দ্বিতীয় দিনের প্রশিক্ষণে তার দেয়া বক্তব্য ফেসবুক লাইভ শেয়ার করেন। কিন্তু তিনি নিজেও সরকারের কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সংবাদ বা ঘটনা শেয়ার করেননি।