সাগরপারে এখন শুঁটকির ম ম গন্ধ

বাঙালির রসনাবিলাসের এক বড় উপকরণ শুঁটকি। কি গ্রাম, কি শহর- সব জায়গায় এর চাহিদা সব সময়। কত না পদের উপাদেয় তরকারি রান্না হয় শুঁটকি দিয়ে। একসময় গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে মাছ সংরক্ষণ করা হতো শুঁটকি বানিয়ে। রোদে শোকানো শুঁটকির গন্ধে ম ম করত বাড়ির আঙিনা। এখনো কোথাও কোথাও বিশেষ করে বর্ষার সময় এমনটি দেখা যায়।
তবে বাজারে যে নানা ধরন আর বর্র্ণের শুঁটকি মেলে তা প্রক্রিয়াজাত করা হয় সাধারণত দেশের নদী ও চর এলাকাতে। সাগরের বিভিন্ন দ্বীপ আর উপকূলেও বাণিজ্যিকভাবে শুঁটকি বানানোর মৌসুম বসে বছরের বিভিন্ন সময়।
এখন চলছে সাগরপারে প্রাকৃতিক উপায়ে সামুদ্রিক মাছের নিরাপদ ও মানসম্পন্ন শুঁটকি বানানোর প্রক্রিয়া। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটাসহ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে এ কাজে এখন ব্যস্ত হাজারের বেশি নারী-পুরুষ। জীবন-জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এসব জেলে পরিবার ছেলেমেয়ে নিয়ে অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চরাঞ্চলগুলোতে তুলেছেন ছোট ছোট ঝুপরি ঘর। সেগুলো রূপ নিয়েছে শুঁটকি পল্লীতে।
মাছ শুকানোর জন্য পাশের জঙ্গল থেকে বাঁশ ও গাছ কেটে এনে তৈরি করা হয়েছে মাচা। তাতে পোয়া, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, পোটকা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্টা, চিংড়ি, ছুড়ি, হাঙর, ভোল, মেদ মাছ শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে
শুঁটকি পল্লী ঘুরে জানা গেছে, শতাধিক ব্যবসায়ী এসব শুঁটকি প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। এ ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় অন্যান্য বারের তুলনায় এ বছর শুঁটকি পল্লীগুলোতে ঘরের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান জেলেরা।
শুঁটকি বানানোর কাজে নিয়োজিত একাধিক শ্রমিক জানান, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদনের জন্য মৎস্য বিভাগ প্রশিক্ষণ দিয়েছে তাদের।
সাগরে ভালো মাছ ধরা পড়ছে বলে শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান মিয়া এবার শুঁটকির জন্য ২৫টি ঘর করেছেন। তবে মাছের দাম একটু বেশি। তবু ভালোই লাভ হবে বলে জানান তিনি।
শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘এখানে সরকারিভাবে শুঁটকি রপ্তানির কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই আমাদের খরচ বেশি হচ্ছে।’
এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, সম্ভাবনাময় শুঁটকি শিল্পকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদনের জন্য ইতিমধ্যে উপজেলার ২৮০ জন জেলেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
%20-%20Sutki%20kuakata%20.jpg)