যানজট নিরসনে ৪০টি স্থানে ‘পে-পার্কিং’ হচ্ছে

তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে ৪০টি জায়গায় ‘পে-পার্কিং’ সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। স্থানগুলো চিহ্নিত করার কাজ শেষ করেছে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।
শিগগির প্রস্তাবনা আকারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কাছে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদুল হাসান।
তিনি জানান, রাস্তার পাশে কম গুরুত্বপূর্ণ অংশে ‘পে-পার্কিং’র স্থান মার্কিং করে দেওয়া হবে। একেকটি জায়গায় সর্বনিম্ন ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০টি গাড়ি রাখা যাবে। পে-পার্কিংয়ের জায়গা ফিতা দিয়ে সংরক্ষিত থাকবে। গাড়িগুলো ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া বা ফি দিয়ে সেখানে পার্কিং করবে। কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ফি নির্ধারণ করা হবে। যেমন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পিক আওয়ার, এর পর অফ পিক আওয়ার এবং মাসিক চুক্তি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ট্রাফিক বিভাগ যানজট নিরসনে নিরলস কাজ করছে। গাড়িমালিক ও ব্যবহারকারীদের দাবি, বৈধ পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় তারা রাস্তার ওপর গাড়ি রাখছেন। তাই আমরা প্রাথমিকভাবে পে-পার্কিংয়ের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এটি শুধু সড়কের ওপর হবে না। লালদীঘির মাঠ, আউটার স্টেডিয়াম, পলোগ্রাউন্ড, প্যারেড গ্রাউন্ডসহ কিছু মাঠের কম ব্যবহৃত অংশও থাকবে এ তালিকায়।
নির্ধারিত স্থানগুলোর মধ্যে থাকছে আগ্রাবাদের শেখ মুজিব সড়কের দেওয়ানহাট থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রশস্ত সড়কের একপাশে এক সারি, লালখান বাজার হাইওয়ে প্লাজার সামনের অংশ, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ সংলগ্ন সড়ক, পোর্ট কানেকটিং সড়কের একপাশের অংশ, প্রবর্তকের মিয়াবিবির সামনের অংশ ইত্যাদি। এ তালিকায় নতুন নতুন স্থান যুক্ত হবে। এর ফলে চসিকের রাজস্ব আয় যেমন বাড়বে তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। সবচেয়ে বড় কথা অযথা যানজট সৃষ্টি হবে না, নগরবাসী কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
ট্রাফিক বিভাগের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, পে-পার্কিং উন্নত বিশ্বে সফল একটি কনসেপ্ট। প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতা নিউমার্কেটের সামনেও পে-পার্কিং ব্যবস্থা আছে। শত শত গাড়ি সেখানে থাকে, নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে। আমাদের এখানেও অনুরূপ ব্যবস্থা চালু করা যায়। কারণ গাড়ির তুলনায় পার্কিংয়ের জায়গা নেই বললেই চলে। তবে পে-পার্কিংয়ের স্থান নির্বাচনে সঠিক জরিপ করতে হবে। নয়তো হিতে বিপরীত হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ৪০টি পে-পার্কিংয়ে আমরা কয়েক হাজার গাড়ি রাখতে পারবো। এরপরও অনেক গাড়ি রাস্তায় থাকবে। সেগুলোকে কঠোরভাবে শৃঙ্খলায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে বহুতল ভবনের যেসব বেজমেন্ট বা পার্কিংয়ের জায়গাগুলো খালি করতে হবে। একই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। কাউকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে সারা দিন গাড়িটি রাস্তার ওপর পড়ে থাকার কোনো মানে হয় না। একই সঙ্গে নির্ধারিত পার্কিংয়ের জায়গা বাদে রাস্তার ওপর কোনো গাড়ি দাঁড় করালেই জরিমানা করে দেওয়া উচিত। তাহলে সব গাড়ি চলমান থাকবে। যানজট হবে না।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি ট্রাফিক বিভাগের পে-পার্কিংয়ের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। চসিক নগরবাসীর স্বস্তির জন্যে যা যা করণীয় করবে। এক্ষেত্রে ট্রাফিক বিভাগের প্রস্তাবনাটি পেলে সংযোজন-বিয়োজন করে চসিক কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চসিকের একজন কর্মকর্তা বলেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে হাইওয়ে প্লাজা, জমিয়তুল ফালাহসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের ওপর পার্কিং করে গাড়ি রাখার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বেশি দিন তা কার্যকর হয়নি। বর্তমানে নগরীতে যে হারে গাড়ি বাড়ছে, যানজট বাড়ছে তাতে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে পে-পার্কিং উপযোগী হবে। এতে চসিকের আয়ও বাড়বে। প্রয়োজনে পে-পার্কিংয়ের স্থানগুলো বার্ষিক ইজারা দেওয়া যেতে পারে।
এর আগে রোববার (০৯ অক্টোবর) চসিকের বাজেট অধিবেশনে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছিলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামে পার্কিংয়ের জন্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্ধারিত জায়গা ছাড়া সড়কের ওপর গাড়ি দাঁড় করালেই জরিমানা করা হবে। সড়কের ওপর হকার থাকতে পারবে না বলেও তিনি জানিয়েছিলেন।