প্রধানমন্ত্রী পুরাতন কারাগার পরিদর্শনে যাচ্ছেন শনিবার

রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের কালের সাক্ষী পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (০৫ নভেম্বর) বিকেলে তার কারাগার পরিদর্শনের কথা রয়েছে।
শুক্রবার (০৪ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
১৭৮৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয় কোম্পানি আমলে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে নির্মিত হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। প্রথমে এটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নামে পরিচিত ছিল। ২৮৮ বছরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ইংরেজ, পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের নানা ঘটনার সাক্ষী।
চলতি বছরের জুলাই মাসে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।
দেশের প্রাচীনতম এবং সর্ববহৎ কারাগার এখন শুধুই ইতিহাস।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার যখন যাত্রা শুরু করে তখন এর ধারণ ক্ষমতা ছিলো ৫শ’ এর মতো। ১৯০২ সালে ক্রিমিনাল ওয়ার্ড থেকে আড়াই হাজার বন্দি ধারণ ক্ষমতার পূর্ণাঙ্গ কারাগার হিসাবে রূপ পায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগার। সর্ব শেষ এতে আট হাজারের বেশি বন্দি থেকেছে যা ছিলো ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে জঙ্গি, খুনিসহ কুখ্যাত অপরাধীদেরও বন্দি রাখা হয়, বিচার হয়েছিলো। ওই কারাগারে দেশে কুখ্যাত জঙ্গি নেতা শায়ক আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এছাড়া যুদ্ধাপরাধ মামলায় বেশ কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ওই কারাগারে।
বৃটিশ আমল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শুধু অপরাধীরাই বন্দি থাকেনি, থেকেছে দেশপ্রেমিক, মানুষের মুক্তি সংগ্রামে অনেক লড়াকু বীর।
রাজনৈতিক জীবনে বহুবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেল খেটেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ভাষা আন্দোলন ছাড়াও ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক সরকার বিরোধী আন্দোলনে পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশেও জেল খেটেছেন অনেক সংগ্রামী নেতা।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে কয়েদীখানা খুলে দেয় কারারক্ষীরা। মুক্তিযুদ্ধে কারারক্ষী ও কর্মকর্তারাও যুদ্ধে অংশ নেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাত্র ৮০ দিনের মাথায় জাতীয় চার নেতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন এ কারাগার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও জাতীয় চার নেতার জাদুঘর নির্মাণসহ ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা সংরক্ষনের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে এটিকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
উন্নয়ন পরিকল্পনা নির্দিষ্ট করার আগে সরেজমিনের ঘুরে দেখার অংশ হিসেবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে যাচ্ছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রাম করতে গিয়ে জীবনের বড় একটা অংশ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কাটিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর একই বছরের ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয় এ কারাগারেই।
শনিবার (০৫ নভেম্বর) বিকেলে সেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।