শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করা এক অদম্য ব্যাংকারের পথ চলা

ভদ্রলোকের নাম চন্দন কুমার বনিক। পেশায় একজন ব্যাংকার; সোনালী ব্যাংকের ঠাকুরগাঁও প্রিন্সিপাল অফিসের কর্মকর্তা। সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ২০১৫ সালে চাকরি পেয়েছেন তিনি। উনার উচ্চতা তিন ফুট। স্ট্রেচারের সাহায্য ছাড়া হাঁটা-চলা করতে পারেন না। জন্মের পর থেকেই এমন। এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।
অন্য সবার মতো স্বাভাবিক না হওয়ায় আমি কলেজে যেতে পারতাম না। আমার বন্ধুরা আমাকে সাইকেলের সামনে বসিয়ে কলেজে নিয়ে গেছে। ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা আমার জন্য অপেক্ষা করেছে। ক্লাস শেষে তারা আবারো আমাকে সাইকেলে চড়িয়ে বাসায় পৌছে দিয়ে বাড়ি গেছে।
এরপর আবার প্রাইভেটের সময় তারা আমার বাসায় এসেছে। আমাকে নিয়ে প্রাইভেটে গেছে। প্রাইভেট শেষে আবারো বাসায় পৌছে দিয়ে তারা তাদের বাড়ি গেছে। আমার সফলতার গল্প বলতে গেলে সবার আগে আমার বন্ধুদের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে। কারণ তাদের আন্তরিকতা এবং সহযোগিতায় আজ আমি সফল। অনেকের জীবন নাকি শেষ হয়ে যায় বন্ধুর পাল্লায় পড়ে। এক্ষেত্রে আমি ব্যতিক্রম। কারণ আমাকে উঁচুতে তুলে ধরতে মই হিসেবে কাজ করেছে আমার বন্ধুরা।
বিকেলে নিজ অফিসে বসে এভাবেই বন্ধুদের সহযোগিতার কথাগুলো উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছিলেন ঠাকুরগাঁও সোনালী ব্যাংকের একজন অফিসার। বলছিলেন, সেই ছোটবেলা থেকে নিভু নিভু প্রদ্বীপের মাঝে কীভাবে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন তারই গল্প। নিজের গল্প শোনানোর আগে তিনি জানিয়ে দিলেন তার কিছু স্বপ্নের কথা যে স্বপ্নগুলো বাস্তব করতে অনেক কষ্ট করেছেন। তাই তিনি চান না একই কষ্ট তার মতো অন্যরা করুক।
স্বপ্নের কথাগুলো বলতে গিয়ে সবার আগে তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে একটি প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্ট গড়ে তুলতে চাই। সেই কল্যাণ ট্রাস্টের সহযোগিতায় মেধাবী প্রতিবন্ধিরা লেখাপড়া করে শিক্ষিত হয়ে উঠবে। তিনি বললেন, আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধিরা এখনো অনেক অবহেলিত। অভিভাবকরা প্রতিবন্ধী সন্তানদের নিয়ে সব সময় বিপাকে থাকেন। সমাজের কাছে সহযোগিতা পেলে প্রতিবন্ধিরা এগিয়ে যাবেই যাবে।