শিরোনাম

South east bank ad

নতুন করে ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে আকিজ গ্রুপ

 প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   কর্পোরেট

নতুন করে ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে আকিজ গ্রুপ। গ্রুপটির দুই ডজন প্রতিষ্ঠান আকিজ উদ্দিনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে গ্রুপের লিগ্যাল অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগ কাজ করছে বলে জানা গেছে। খুব শিগগিরই যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয়ের (আরজেএসসি) মাধ্যমে এ ভাগ বণ্টন চূড়ান্ত হবে বলে গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে। করোনার মধ্যেই নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাগ করে নেওয়ার বিষয়ে পাঁচ ভাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপরিবার আকিজ গ্রুপ। দেশের পথিকৃৎ ব্যবসায়ী সেখ আকিজ উদ্দিনের ১৫ সন্তানের মধ্যে অন্যরা আগেই তাদের সম্পদ বুঝে নিয়েছেন। বর্তমানে আকিজ গ্রুপ নামে যে প্রতিষ্ঠান সর্বাধিক পরিচিত, তার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন আকিজ উদ্দিনের পাঁচ ছেলে। এখন এ পাঁচ ভাইয়ের সম্মিলিত ব্যবসা আকিজ গ্রুপ ভাগ হয়ে যাচ্ছে। পাঁচ ভাইয়ের নেতৃত্বে রয়েছে ২৪টির মতো বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑআকিজ জুট মিলস লিমিটেড, আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, আকিজ সিরামিকস, আকিজ সিমেন্ট, আকিজ টেক্সটাইল মিলস, আকিজ প্লাস্টিকস, আকিজ শিপিং লাইন, আকিজ পার্টিকেল বোর্ড মিলস, আকিজ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজেস, আকিজ ফ্লাওয়ার মিলস, আকিজ পলি ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজ, আকিজ এগ্রো প্রসেসিং ফ্যাক্টরি, বাহাদুরপুর টি এস্টেট, আকিজ বায়াক্স ফিল্মস, আকিজ সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপ, আকিজ স্টিল মিলস, আকিজ সিটি সেন্টার, রবিন এমডিএফ, আকিজ বেকার্স ও আকিজ ম্যাচ ফ্যাক্টরি লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন সেখ নাসির উদ্দিন। এছাড়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সেখ বশির উদ্দিন। তিনিই মূলত প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন কার্যক্রম দেখভাল করেন। এছাড়া করপোরেট পরিচালক হিসেবে রয়েছেন সেখ জামিল উদ্দিন, সেখ জসিম উদ্দিন ও সেখ শামীম উদ্দিন। জানা যায়, পারিবারিকভাবে সবার সম্মতিতে নিজেদের মধ্যে ব্যবসা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ পাঁচ ভাই। কিন্তু কে কোন প্রতিষ্ঠান নেবেন, সে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা সেখ নাসির উদ্দিন আকিজ জুট মিল নিতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিনের আগ্রহ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, সিমেন্ট ও শিপিং লাইনের ব্যবসায়। তবে এখনও কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। এখন চলছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদমূল্য নির্ণয়ের কাজ। এ বিষয়ে জানতে আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলার বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত নন বলে জানান। তবে মূল গ্রুপের বাইরে আরও বেশকিছু বৃহৎ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সব মিলে সেখ আকিজ উদ্দিন ও তার সন্তানদের হাতে গড়া বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫টি। উল্লিখিত ২৪টি প্রতিষ্ঠানের বাইরে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলো পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন আকিজ উদ্দিনের অন্য সন্তানরা। সেখ আকিজ উদ্দিনের ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছিল মূলত তামাক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। যশোরের নাভারণে এখনও আকিজ উদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত বিড়ি কারখানার অস্তিত্ব বিদ্যমান। এছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে বিড়ি ফ্যাক্টরি রয়েছে। তামাক খাতের ব্যবসা সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় ঢাকা টোব্যাকো নামে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন সেখ আকিজ উদ্দিন। ঢাকা টোব্যাকোর উৎপাদিত সিগারেটের মধ্যে নেভি ও সেখ সিগারেট ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তামাক খাতে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয় আকিজ গ্রুপ। ষাটের দশকেই সেখ আকিজ উদ্দিন তামাকবহির্ভূত অন্যান্য খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ শুরু হয়। ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণের আগ পর্যন্ত এ শিল্পোদ্যোক্তা একের পর এক প্রতিষ্ঠান গড়ে গেছেন। এরপর ১৯৬০ সালে অভয়নগরে অত্যাধুনিক চামড়ার কারখানা এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ১৯৬৬ সালে ঢাকা টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ, ১৯৭৪ সালে আকিজ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ১৯৮০ সালে আকিজ ট্রান্সপোর্টিং এজেন্সি লিমিটেড গড়ে তোলেন। ১৯৮০ সালে তার অপর ব্যবসা নাভারণ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৬ সালে গড়ে তোলেন জেস ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ১৯৯২ সালে আকিজ ম্যাচ ফ্যাক্টরি লিমিটেড, ১৯৯৪ সালে আকিজ জুট মিল লিমিটেড, ১৯৯৫ সালে আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, একই বছর আকিজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড তার ব্যবসায় যুক্ত হয়। আকিজ পার্টিক্যাল বোর্ড মিলস লিমিটেড আসে ১৯৯৬ সালে। ব্যবসার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি হিসেবে দেখা যায় ১৯৯৭ সালে আকিজ হাউজিং লিমিটেড, ১৯৯৮ সালে সাভার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ২০০০ সালে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, একই বছর আকিজ অনলাইন লিমিটেড, নেবুলা ইনক লিমিটেডের সংযুক্তি। ২০০১ সালে আকিজ করপোরেশন লিমিটেড, আকিজ কম্পিউটার লিমিটেড, আকিজ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড টেকনোলজি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। এর তিন বছর পর ২০০৪ সালে আকিজ অ্যাগ্রো লিমিটেড এবং ২০০৫ সালে আকিজ পেপার মিলস্ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তিনি ব্যবসার পাশাপাশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বেশকিছু। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, ১৯৮৯ সালে আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টার ও ২০০৪ সালে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন। এ ছাড়া ১৯৮০ সালে আদ্-দ্বীন শিশু-কিশোর নিকেতন, ১৯৮৫ সালে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল ও আদ্-দ্বীন ফোরকানিয়া প্রজেক্ট গড়ে তোলেন নিজের উদ্যোগে। শিক্ষা বিস্তারেও তার ভূমিকা ছিল। সেবামূলক খাতের অধীনে তিনি ১৯৯৮ সালে আকিজ কলেজিয়েট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আকিজ উদ্দিনের ১৫ সন্তান। ১০ ছেলে ৫ মেয়ে। বড় ছেলে ডা. সেখ মহিউদ্দিন আদ্-দ্বীনের নির্বাহী পরিচালক। এছাড়া সেখ মোমিন উদ্দিন, সেখ আফিল উদ্দিন, সেখ আমিন উদ্দিন, আজিজ উদ্দিন, নাসির উদ্দিন, বশির উদ্দিন, জামিল উদ্দিন আকিজ শিল্প গ্রুপের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করেন। সেখ আফিল উদ্দিন ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি বেশ কয়েক বছর আগেই মূল গ্রুপ থেকে বিভক্ত হয়ে আফিল গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। ছোট দুই ছেলে জসিম উদ্দিন ও শামিম উদ্দিন লন্ডনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। আকিজ উদ্দিনের ৫ মেয়ে সাফিনা, শাহিনা, আঁখি, নাজমা ও নাসিমা। অন্যরা আগেই বিভক্ত হয়ে গেলেও নাসির উদ্দিন, বশির উদ্দিন, জামিল উদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও শামিম উদ্দিন সম্মিলিতভাবে আকিজ গ্রুপের ঝাণ্ডা ধরে রাখেন। তাদের হাত ধরে আকিজ গ্রুপের অফিসও বিভক্ত হয়। ব্যবসা সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় এ পাঁচজন দিলকুশার আকিজ চেম্বার ছেড়ে দিয়ে তেজগাঁও গুলশান লিংক রোডে আকিজ হাউস নামে নতুন কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। আকিজ উদ্দিনের অন্য সন্তানদের অফিস এখনও দিলকুশার আকিজ চেম্বারেই রয়েছে। আকিজ উদ্দিনের সন্তানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আকিজ রাইস ইন্ডাস্ট্রি, আকিজ জর্দা ফ্যাক্টরি, আকিজ ওয়াইল্ডলাইফ ফার্ম, আকিজ সিকিউরিটিজ, আকিজ মোটরস, আকিজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজি, আকিজ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস, আকিজ গ্যাস স্টেশন, আকিজ গ্যাস কোম্পানি, আকিজ করপোরেশন, আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি, আকিজ অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি, আবরার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ও আকিজ কেবল্স। তবে তামাক পণ্যের কারবারের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ হলেও বর্তমানে ঢাকা টোব্যাকোর মালিকানা আকিজ গ্রুপের হাতে নেই। এটি ২০১৮ সালের আগস্টে জাপান টোব্যাকো আকিজের ঢাকা টোব্যাকোর ব্যবসা কিনে নেয়। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি হয় ১৫০ কোটি ডলারে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। আকিজ উদ্দিন ও তার সন্তানদের উদ্যোগে গঠিত প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের।
BBS cable ad

কর্পোরেট এর আরও খবর: