শিরোনাম

South east bank ad

দেশ ও জনগণের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ লড়াই করছে: আইজিপি

 প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, জনগণ, সমাজ, রাষ্ট্র ধ্বংসের জন্য লিপ্ত দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধেই পুলিশ ক্রমাগতভাবে লড়াইয়ে লিপ্ত থাকে। এ লড়াই সন্ত্রাসী, অপরাধী, জঙ্গি, গ্যাং, চোর-ডাকাতদের বিরুদ্ধে। যারা শান্তিভঙ্গ কিংবা বিনষ্ট করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে।

লড়াইয়ে থাকলে মৃত্যু অনিবার্য। আমরা শান্তিকালীন সময়ে প্রতিনিয়ত লড়াই করছি দেশ, জনগণ, সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা, নিরাপত্তার জন্য। এজন্য আত্মত্যাগ করছে পুলিশ সদস্যরা। প্রতিবছর শত শত সহকর্মীকে কর্তব্যরত অবস্থায় আমরা হারাই। গত বছর ৩৪৬ জন পুলিশ সদস্যকে হারিয়েছি। এরমধ্যে করোনার দুই বছরে আমরা ১০৬ জন পুলিশ সদস্যকে হারিয়েছি। আজ ১৩৮ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে।

আজ (১ মার্চ) মঙ্গলবার ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ উপলক্ষে ২০২১ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মান জানিয়ে পুলিশ মেমোরিয়ালে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও তাদের পরিবারবর্গকে স্বীকৃতি স্মারক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।

রাজধানীর মিরপুর-১৪তে পুলিশ স্টাফ কলেজ (পিএসসি) কনভেনশন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব আখতার হোসেন।

আইজিপি বলেন, জুনিয়র কোনো পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর পর তার পরিবার পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান পেত। তখন বিল পাস করতো জেলা পুলিশ সুপার। সরকার ২০২০ সালে আট লাখ করার পর সেই বিল পাস করেন জেলা প্রশাসকরা। এতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যায় ৩৭৭ পুলিশ সদস্য। এরমধ্যে মাত্র ৭৯ পরিবার টাকা পেয়েছে। বাকি সব পেন্ডিং।

স্বরাষ্ট্র সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইজিপি বলেন, আমাদের জুনিয়র কোনো সদস্য যখন দায়িত্বরত অবস্থায় মারা যান তখন তার পুরো পরিবার অথৈ সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হয়। জেলা প্রশাসকরা অনেক ব্যস্ত থাকেন। এ দায়িত্ব যদি আবার পুলিশ সুপারদের কাছে যায় তাহলে এ সমন্বয়হীনতা থাকবে না। মৃত পুলিশ সদস্যদের অসহায় পরিবারগুলোর অনেক উপকার হবে। আশা করছি, এ অনিশ্চয়তা কাটাতে উদ্যোগী হবে মন্ত্রণালয়।

তিনি আরো বলেন, আমরা পুলিশ সদস্যদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কমরেড, সহকর্মী, বন্ধু, কলিগ, প্রিয়মুখকে হারিয়েছি। শুধু সমবেদনা জানানো নয়, আমাদের অনেক আত্মত্যাগ আছে, শোকাবহ আত্মত্যাগ। আমরা তাদের (পুলিশ সদস্য) আত্মত্যাগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কারণ আমরা বীরের জাতি। বীরের আত্মত্যাগ আরো বীরের জন্ম দেবে। কেউ আহত হন, নিহত হন, মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস তাদের অবদানকে সর্বদা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছে।

আইজিপি বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রফেশনাল, জব সেফটি, সেফটি ইনভারমেন্ট আরো ভালো করার চেষ্টা করছি। যারা অসুস্থ হন তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করে থাকি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদেই পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের যাত্রা শুরু হয়। তিনি ৫ কোটি টাকার চেক দিয়ে এর যাত্রা শুরু করেন। এখন পর্যন্ত ২০০৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৭ বছরে ৫২ কোটি টাকা দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, গত দুই বছরে সবার সহযোগিতায় আমাদের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরো বেশি সহযোগিতা সাপোর্ট প্রত্যাশা করছি।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব ও কাজের পরিবেশের কারণে পুলিশ সদস্যদের বিশেষ ধরনের রোগ হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট, কিডনি, ক্যান্সার, হার্টের সমস্যা হচ্ছে। আমরা এরই মধ্যে ডায়ালাইসিস ইউনিট যুক্ত করেছি। যেখানে ১০০ থেকে ১৫০ কিডনি আক্রান্ত পুলিশ সদস্য ডায়ালাইসিস সুবিধা পাচ্ছেন। এসব রোগের চিকিৎসা আমাদের হাসপাতালে চলছে। ২৯৬ জন স্টাফ দিয়েছে সরকার।

এর নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। এটা সম্পূর্ণ হলে চিকিৎসার মান আরো বাড়বে। আমরা এ বছরই ক্যাথ ল্যাব (কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন) সংযুক্ত করছি। এর ফলে আর বাইরে যাওয়া লাগবে না হার্টের রোগীদের। ইন হাউজ রিং পরানো যাবে। আগামী বছরই ক্যান্সার ইউনিট চালু হবে। এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। সিরিয়াস ব্যধির চিকিৎসা হবে। ক্যান্সার হলে ৫, ১০ ও ১৫ লাখে কিছু হয় না।

এ টাকা খরচ না করে আমরা চিকিৎসার সার্বিক ব্যবস্থা করব। ঢাকা বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটি সম্পন্ন হলে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চাপ কমবে। ২ লাখ ১২ হাজার সদস্যের চিকিৎসা সম্ভব হবে আমাদের হাসপাতালেই। ২৫০ বেডের ই হাসপাতাল এখন ১১৫০ বেডের। সেটা আরো ৫০০ বেড বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

তিনি আরো বলেন, পুলিশ বহুমুখী দায়িত্ব পালন করে। রাষ্ট্র ব্যবস্থার যে উন্নতি তাতে শিল্পায়ন, নগরায়ণ হচ্ছে। আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে৷ যৌথ পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। বছরের পর বছর পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকছে কিন্তু কেউ কাউকে চেনে না। মানুষ একা হয়ে পড়ছে৷

সে কারণেই বর্তমান অবস্থার মধ্যে এমন কোনো ক্ষেত্র নাই যেটা পুলিশের দায়িত্বের বাইরে। উন্নয়নের পেছনে আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ করি। আমরা পাঁচটা মন্ত্রণালয় সিলেক্ট করেছি, যারা আমরা এক সঙ্গে কাজ করতে পারি। এতে রাষ্ট্র উপকৃত হবে। যদিও কারো কারো চক্ষুশূলের কারণ হচ্ছি। গ্রাম পর্যায়ে পুলিশিং এর সঙ্গে উন্নয়নের কাজে অংশ নিতে পারি।

পুলিশ স্টাফ কলেজ (পিএসসি) কনভেনশন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২০২১ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী ১৩৭ পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গকে স্বীকৃতি স্মারক প্রদান করা হয়।

এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, আইজিপিসহ উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ ২০২১ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ পুলিশ স্টাফ কলেজ চত্বরে নবনির্মিত পুলিশ মেমোরিয়ালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: