জাতি হিসেবে সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব: টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী
বিডিএফএন টোয়েন্টিফো.কম
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ভাষা আন্দোলনের পটভূমি সৃষ্টি, ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া, বিকশিত করা এবং বাংলা ভাষাভিত্তিক জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ফসল।তিনি বলেন স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠাসহ বাংলা টাইপ রাইটার যন্ত্রটিও বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই এসেছে। বাংলা এবং বাঙালির জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদানকে জাতি হিসেবে সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব। তিনি বিচারালয়সহ সর্বত্র বাংলা ভাষাকে যথাযথ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী আজ (২১ ফেব্রুয়ারি) সোমবার ঢাকায় আগারগাঁওয়ে ডাকভবন মিলনায়তনে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: সিরাজ উদ্দিন, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন এবং টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: মশিউর রহমান বক্তৃতা করেন।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি শক্তি যখন যারাই এদেশ শাসন করেছে, তারা তাদের ভাষা এদেশে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তারা বাঙালির মায়ের মুখের বাংলা ভাষাকে কেড়ে নিতে পারেনি।’ বাংলায় এসএমএস বা নোটিফিকেশন রূপান্তরের পেছনের কাজগুলো চ্যালেঞ্জিং ছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও সেটি করা হয়েছে। এই ঘটনাটি মাতৃভাষা, মা-মাটি ও মাতৃভূমির জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে মন্ত্রী উল্লেখ করে বলেন, ২০১৮ সালে আমরা গ্রাহকদের কাছে বাংলায় এসএমএস পাঠাতে মোবাইল অপারেটরদেসমূহকে নির্দেশনা দিয়ে ছিলাম, ২০২১ে সালে আমরা বাংলাকে প্রযুক্তিতে প্রয়োগে উৎসাহিত করতে বাংলা এসএমএস এর মূল্য শতকরা ৫০ভাগ হ্রাস করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা গতকাল এসএমএস এবং নোটিফেকশন বাংলায় পাঠানোর কার্যক্রম শুরু করেছি। ‘আশা করি অপারেটরসমূহ আগামী জুনের মধ্যে তারা শতভাগ নোটিফিকেশন এবং এসএমএস গ্রাহকদের নিকট বাংলায় পাঠাতে পারবে বলে আশা করছি।’
ড. আনোয়ার হোসেন বলেন বঙ্গবন্ধু ছিলেন ভবিষ্যত দ্রষ্টা উল্লেখ করে বলেন ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি তৈরি হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, জেল খানায় বসে চিরকুট লিখে ৪৪ ধারা ভাংগার নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।বাংলা ভাষাকে সরকারি দপ্তরের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে অফিস আদালতে বাংলা চালু করা হবে।তিনি বলেন বাঙালি এগিয়েছে বহুদূর- আমাদের যেতে হবে আরও বহুদূর। ‘আমাদের দুর্ভাগ্য ৮ ফাল্গুন হলো আন্দোলন আমরা আজও ২১ ফেব্রুয়ারি বলি।’তিনি বলেন, ৮ ফাল্গুন আমাদের অহংকার। তিনি বলেন, আমরা এমন একটা জাতিতে পরিণত হয়েছি না ভাল বাংলা বলতে পারি, না পারি ভাল ইংরেজি বলতে। আমরা ‘বাংলিশ’ থাকতে চাইনা, আমরা বাঙালি হয়ে থাকতে চাই, বাংলা আমাদের অহংকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তৃতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বাংলা ভাষাকে পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মৈমনসিংহ গীতিকাসহ বাংলার প্রাচীন লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণ করতে পারলে ভাষা আরও সমৃদ্ধ হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব সর্বস্তরে বাংলায় কথা বলা এবং শুদ্ধ বাংলা চর্চা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক পেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভভ্যুদয় আমাদের বড় অর্জন এবং বঙ্গবন্ধু ছিলেন এই অর্জনের মহানায়ক।
এর আগে সকালে মন্ত্রী ও সচিবের নেতৃত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও এর অধীন সংস্থার পক্ষ থেকে মগবাজার টিএন্ডটি হাইস্কুলে স্থাপিত শহিদ মিনারে পুস্প স্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ও সিইও ড. শাহজাহান মাহমুদ, বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: সিরাজ উদ্দিনসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও এর অধীন সকল সংস্থা প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।