শিরোনাম

South east bank ad

ভাষা শহীদের ইতিহাস জানবে কি নতুনেরা! জব্বার স্মৃতি যাদুঘর মাছ চাষের হুমকিতে

 প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

এইচ কবীর টিটো, গফরগাঁও

শহীদ আব্দুল জব্বারকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে মরনোত্তর ২১শে পদক দিয়ে সম্মানিত করেন।

ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের ঠিক পিছনের প্রাচীর ঘেসে মাছ চাষের জন্য কাটাচ্ছে মাটি , রাওনা ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য ।তিনি করছেন মাছ চাষের খামার।

এই খননের জন্য ভাষা শহীদ জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি ষাদুঘরের বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে বিজ্ঞজনরা আশংকা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে গফরগাঁও উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবিদুর রহমান বলেন,আমি নতুন এসেছি, অবশ্যই সরেজমিনে গিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরের ক্ষতি হবে এমন কিছু করতে দেয়া হবে না।

ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের স্মৃতি রক্ষার্থে দীর্ঘ সময়েও শহীদ আব্দুল জব্বারের গ্রামের বাড়ির পার্শ্বে সুন্দর একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। যা পরবর্তীতে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ, বইমেলা, আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে আসছে।

যদিও গফরগাঁও সদরে আজ কোন ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে কোন প্রভাত ফেরী হয় না।ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক দেয়ার পাশাপাশি ছোট্ট শিশুদের জন্য একটি শহীদ মিনার স্থাপন সহ প্রভাত ফেরী জরুরী বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
কারণ শিশুরা জব্বার নগরে যাওয়ার জন্য পরিবহন ও রাস্তার বেহাল দশার সমস্যার জন্য, ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

২০০৮সালে ১৯শে ফেব্রুয়ারি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তৎকালীন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার আনোয়ার ইকবালের উপস্থিতিতে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন, ডঃ হালিমা খাতুন ও রওশান আরা বাচ্চু ভাষা শহীদ জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।

তবে দীর্ঘদিনেও স্মৃতির যাদুঘরে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের একটি স্মৃতি চিহৃও নেই। অন্যদিকে গফরগাঁওবাসী তার স্মৃতি রক্ষার্থে বর্তমান সরকারের কাছে ‘ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের দাবী জানিয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে ।

ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম বাদল(৭৩) বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় ঢাকা সোহরাওয়াদী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন ১৪ অক্টোবর, ২০২১সালে।তাঁর উপস্থিতি আর দেখা যাবে না।

তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।এদিকে গ্রন্থাগারের জমি দাতা- হারুণ অর রশিদ লিটন ও আসাদ নয়ন দুইভাই পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।তাদের জন্য কোন মিলাদ ও শোক প্রকাশে এগিয়ে আসেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিবার।

হারুণ অর রশিদ লিটন জমি দাতা হয়েও সরকারি খাতায় তারা নাম লিপিবদ্ধ হয়নি বলে পরিবার থেকে জানান। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আসলেই কেবল ধুয়ে মুছে পরিস্কার করা হয় গ্রন্থাগার ও শহীদ মিনার। সারা বছর গরু আর বখাটেদের আড্ডায় জন্য ঘাস খাওয়ার উত্তম স্থানে পরিনত হয়ে থাকে। আজকাল বই থেকে পাঠক মন ঘুরিয়ে চোখ স্থাপন করেছে মোবাইলের উপর।

৪ হাজার ১’শ ৩৫টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু করার চৌদ্দ বছরেও গ্রন্থাগারটিতে মাত্র ৩০টি বই যোগ হয়েছে। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই নাজুক যা বছরে একদিন পালনের পর ভুলে যান রাস্তা সংস্কারের কথা সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। জনবল সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনায় দর্শনার্থী ও পাঠকদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না এটি।

ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের স্মৃতি গাঁথা নিদর্শনগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ এবং গ্রন্থাগারে তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা চালু করার দাবি স্থানীয়দের। সেই সাথে ২০০৮ সালে ভাষা শহীদের গ্রামের নাম জব্বার নগর রাখা হলেও, দীর্ঘদিনেও তা সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয় নাই বলে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আমরা পাঁচজন শহিদের নাম বেশি শুনতে পাই: সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউর। এর বাইরে আর কে কে, কোথায় মারা গেছেন তারঁ সঠিক তথ্য জানেনা আমাদের প্রজন্ম।

৮ বছরের বালক অহিউল্লাহ রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য শহীদ হলেও তাঁর খবরে কেউ আওয়াজ তুলি না। "সাপ্তাহিক সৈনিক "বাংলা ভাষা আন্দোলনের একটি মুখপত্র হিসেবে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তমদ্দুন মজলিস এর অধ্যাপক আবুল কাসেম নামের মানুষটিকে প্রজন্ম জানতে পারছে না। জানতে পারছেনা জানানো হচ্ছে না কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে।

কিন্তু এরও আগে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের এলাকার একটি নাটকের সংগঠন " গফরগাঁও থিয়েটার "১৯৯৭ সালে " ২১" কে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সর্ব প্রথম দাবী উত্থাপন করেছিলো।

এই তথ্য জানতে পারছেনা জানানো হচ্ছে না নতুন প্রজন্মকে। এটাও আমাদের প্রজন্ম কে জানানো হচ্ছে না দেশের বাইরে প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয় -টোকিও, জাপানের মত একটি দেশে।যেখানে আমাদের বাংলাদেশে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি।

আহমদ রফিক তার ‘একুশ থেকে একাত্তর’ নামের বইয়ে নিহতদের মধ্যে আবদুল আউয়াল, কিশোর অহিউল্লাহ ও সিরাজুদ্দিনের নাম উল্লেখ করেছেন।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে প্রথম স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৩ সালের মার্চে।
এর প্রকাশক ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সভাপতি মোহাম্মদ সুলতান। সম্পাদক ছিলেন হাসান হাফিজুর রহমানের কথা জানবে কি আমাদের নতুন প্রজন্ম?

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: