মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলা ঝুলছে ৯ বছর
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
টাঙ্গাইলের আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে কচ্ছপগতিতে। দীর্ঘ নয় বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব। মামলার ধীরগতি ও জেলা আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে নিহতের পরিবারে। ফারুকের ছেলে বলছেন- জেলা আওয়ামী লীগের কাছে আমরা যেন বিষফোঁড়া। অন্যদিকে আলোচিত এ হত্যা মামলায় জড়িয়ে টাঙ্গাইল জেলা রাজনীতির মাঠে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে প্রভাবশালী খান পরিবার।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান জানান, ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার এজাহারে আসামি ছিলেন ১৫ জন। এদের মধ্যে চার্জশিট দেওয়ার আগেই আবদুল হক ম-ল নামে এক আসামির মৃত্যু হয়। পরে তাকে অব্যাহতি দিয়ে ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। ১৪ জনেরই বিচারকার্য চলছে। মামলায় মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৩১ জন। নিহতের লাশ বহনকারী কনস্টেবল মামুনুর রশীদের সাক্ষ্য গ্রহণ গত তারিখে শেষ হয়। এখন ম্যাজিস্ট্রেট শিউলী রানী দাস ও অশোক কুমার সিংহের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়ে গেলে মোটামুটি মামলার কার্যক্রম এগিয়ে যাবে। পর্যায়ক্রমে আসামিদের ৩৪২ হবে, এরপর আর্গুমেন্ট।
আর্গুমেন্ট শেষে রায় হবে।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি পৌর এলাকায় কলেজপাড়া থেকে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হয়। ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামে দুই আসামি গ্রেপ্তারের পর এ মামলা নতুন মাত্রা পায়।
জেলা রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা হত্যাকা-ে জড়িত জানিয়ে জবানবন্দি দেন ওই দুই আসামি। এর পরই আত্মগোপনে চলে যান চার ভাই।
পরে আমানুর রহমান খান রানা ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। দীর্ঘ ৩৬ মাস হাজতবাসের পর তিনি জামিন পান। বর্তমানে মুক্তি কারাগারে থাকলেও তার অপর দুই ভাই কাকন ও বাপ্পা পলাতক রয়েছেন।
ফারুক হত্যার বিষয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান বলেন, আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মূলত টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে একটি মহল। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী সব জানেন। তার সিদ্ধান্তেই আমরা কাজ করব। আর মামলার বিষয়টি আদালতের মাধ্যমেই সুরাহা হবে। আমি এবং আমার পরিবার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
মামলার ধীরগতি প্রসঙ্গে এপিপি মনিরুল ইসলাম খান বলেন, এর আগে সাবেক মেয়র আসামি সহিদুর রহমান খান মুক্তি জেলখানায় ছিলেন এবং অসুস্থ থাকার কারণে বিভিন্ন সময় সাক্ষী থাকলেও তিনি কোর্টে উপস্থিত হতে পারেননি। আসামি কাস্টডিতে থাকলে তার অনুপস্থিতিতে সাক্ষী আসলেও বিচার কার্যক্রম করা যায় না। ফলে কয়েকটি তারিখ ডিলে হয়েছে। গত তারিখেও সহিদুর রহমান খান মুক্তি উপস্থিত ছিলেন। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার দিন ধার্য হয়েছে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, মহামারী করোনায় মামলায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। এটা না হলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হতো। এ ছাড়া চলমান মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান (রানা), নাছিরুদ্দীন নুর ও মাসুদ জামিনে রয়েছেন। জাহিদুর রহমান কাকন, সানিয়াত খান বাপ্পা ও কবির হোসেন পলাতক রয়েছেন। বাকি আসামিরা জেলহাজতে রয়েছেন।
এদিকে গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি নিহত মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ। তবে তার ছেলে আহম্মদ সুমন মজিদ আক্ষেপ করে বলেন, হত্যার পরিকল্পনাকারী আমানুর রহমান খানের ভাই বাপ্পীর মৃত্যুবার্ষিকী, মিলাদ মাহফিল হয় আওয়ামী লীগ অফিসে। অথচ আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন হয় না, মিলাদ হয় না। জেলা আওয়ামী লীগ আমার বাবাকে ভুলে গেছে। অথচ তার লাশ নিয়ে রাজনীতি করে অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের ভালো পজিশনে।
আহম্মদ সুমন মজিদ আরও বলেন, ‘আমরা এখন আওয়ামী লীগের বিষফোঁড়া।’ জেলা আওয়ামী লীগে কোনো পদের প্রত্যাশা করেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আশা করি কেমনে, দলে নামেমাত্র আছেন আমার মা। এখন জামায়াত বানিয়ে দিলেও আমার কোনো সমস্যা নেই। আমরা শুধু আমার বাবার হত্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি প্রত্যাশা করছি। আমরা চাই আসামিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক।
জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বিচার কার্যক্রমে ধীরগতি মেনে নেওয়ার মতো না। যাদের প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের হত্যাকা-ে জড়িত ও ইন্ধনদাতাদের দ্রুত বিচার হওয়া উচিত।
এ বিষয় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে আওয়ামী লীগ কখনো ভোলেনি। তার মৃত্যুবার্ষিকী থেকে শুরু করে সকল কর্মসূচিতে জেলা আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ সব সময় তার পরিবারের পাশে আছে এবং থাকবে।