মেধাবি শিক্ষার্থী হিমেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):
ছোটবেলা থেকে খুবই নর্ম, ভদ্র আর শান্ত স্বভাবের ছিলেন মাহমুদ হাবিব হিমেল। তার ভদ্রতার জন্য আত্মীয়স্বজন, পাড়া মহল্লার প্রতিবেশি সব মানুষের কাছেই প্রশংসনীয় ছেলে তিনি। ছাত্র জীবনেও ছিলেন মেধাবি। বিগত চার বছর আগে বাবা আহসান হাবিব হেলাল মারা যান।
একমাত্র ছেলে হিমেলকে নিয়েই অনেক স্বপ্ন দেখতেন তার মা মনিরা আক্তার। লেখাপড়া শিখে ছেলে একদিন বড় সরকারি অফিসার হবে। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। মুহুর্তেই সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনের সামনেই ট্রাকের চাপায় মারা যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইনিং বিভাগের মেধাবি শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল।
তার বাড়ি বগুড়ার শেরপুর শহরের উলিপুর পাড়ায়। বাবা আহসান হাবিব হেলাল পৌরসভায় চাকরি করতেন। হিমেলের শিক্ষাজীবন শুরু হয় স্থানীয় পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ওই প্রতিষ্ঠানেই নার্সারি থেকে অষ্টমশ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন তিনি। এরপর বাবার মৃত্যুর পর মা মনিরা আক্তারের সঙ্গে নানার বাড়ি নাটোরে যান। এরপর ভর্তি হন নাটোর জেলা স্কুলে।
সেখান থেকে এসএসসি ও নাটোর সিরাজউদ্দৌলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। মেধাবি শিক্ষার্থী হিমেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন, স্কুলজীবনের সহপাঠি, প্রতিবেশি, পাড়া-মহল্লাসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।
আজ বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শোকে স্তব্ধ শহরের উলিপুর পাড়াস্থ হিমেলের বাড়ি ও আশপাশের এলাকা। তার মৃত্যুও খবর শোনে স্বজনদের পাশাপাশি সহপাঠি, বন্ধু-বান্ধবসহ পাড়া-মহল্লার লোকজন বাড়িতে আসছেন। মেনে নিতে পারছেন না তার এই অকাল মৃত্যু। আবার অনেকেই বিশ্বাসই করছেন না হিমেল নেই।
এসময় কথা হয় তার বন্ধু ফয়সাল মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাহমুদ হাবিব হিমেল আমার বাল্যবন্ধু। ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছি। ঘটনার রাতে যখন খবরটি শুনলাম মনে হচ্ছিল কোথাও ভুল হচ্ছে। এটা সম্ভবত অন্য কোনো হিমেল হবে। কিন্তু না, আমার ধারণাটা ভুল ছিল। সত্যিই আমার সেই বাল্যবন্ধু হিমেল আর নেই। ঘাতক ট্রাকের চাপায় আসলেই নাই হয়ে গেছে আমার ছোটবেলার বন্ধু হিমেল। যা ভাবতেও পারছি না।
বাকরুদ্ধ হিমেলের চাচী শারমিন আক্তার বলেন, মঙ্গলবার রাত দশটার দিকে খবরটি আমরা জানতে পারি। এরপরই তার চাচা রাজশাহীর উদ্দেশে রওয়ানা হন। তার এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। সে খুবই নর্ম ও ভদ্র স্বভাবের ছিল। কারো সঙ্গে কোনোদিন উচ্চস্বরে কথা বলেননি।
তিনি আরও বলেন, বিগত চার বছর আগে হিমেলের বাবা মারা যান। এরপর থেকে তার মায়ের সঙ্গে নানার বাড়ি নাটোরে থাকতেন। তবে বাড়িটির ভাড়া নেওয়ার জন্য মাঝে মাঝেই এখানে আসতেন। আর আমার বাড়িতেই থাকতেন। পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিলেন হিমেল। তাই তাকে নিয়েই আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল-এই বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন তিনি।
জানতে চাইলে তার চাচা আব্দুল হাদি মুঠোফোনে জানান, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ওর আম্মার অবস্থা তো বুঝতেই পারছেন। ছেলের নাম বরছেন আর বার বার মূর্চা যাচ্ছেন। একমাত্র ছেলেকে নিয়েই বেঁছে ছিলেন তিনি। আব্দুল হাদি বলেন, ভাতিজা হিমেলের মরদেহ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটোরের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছি।
সেখানেই তাকে দাফন করে বাড়িতে যাচ্ছি। তবে হিমেলকে শেরপুরে তার বাবার কবরের পাশে দাফন করার আমাদের ইচ্ছা থাকলেও ওর মায়ের ইচ্ছেনুযায়ী নানার বাড়ি নাটোরেই দাফন করা হলো হবে বলে জানান তিনি।