হাসপাতালের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন আহতরা
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):
বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় বালিয়াদীঘি ইউনিয়নে কালাইহাটা কেন্দ্রে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে গুরুতর আহত তিন ব্যক্তি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। তাদের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে আসা মানুষগুলো ঠিকমত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে তাদের কেউ চিকিৎসার খোঁজখবর পর্যন্ত নিচ্ছেন না। ঘটনার ৭২ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও শরীরে বিধে যাওয়া ছোররা গুলির চিহ্ন মুছে যায়নি। ব্যথায় নীল হয়ে হাসপাতালে বিছানায় ছটফট করছেন তারা। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে কিনতে পারছে না প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা হলেন, গাবতলীয় উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কালাইহাটা গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলী সাকিদারের ছেলে দিনমজুর আব্দুল্লাহ (৪৫), একই গ্রামের আজিবর রহমানের ছেলে সেলুন শ্রমিক মো. রাকিব (১৬) এবং নৌকা প্রতিকের এজেন্ট একই গ্রামের সাহার আলীর ছেলে কৃষক ছহির উদ্দিন ফকির (৬০)।
আহত সেলুন শ্রমিক মো. রাকিবের চাচাতো ভাই নাইম হোসেন বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন তার চাচাতো ভাই রাকিবের শরীরের পেছনে অসংখ্য রাবার গুলির আঘাত লাগে। এমন কি পুরুষাঙ্গেও ছোররা গুলির চোট লেগেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা। গুলির আঘাতে পুরো শরীর ফুলে গেছে।
আহত দিনমজুর আব্দুল্লাহ জানান, অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে কোন রকমে জীবন সংসার চলছে তার। ভোটের দিন দুপুরে ভোট দিয়ে তিনি বাড়িতে যান। গোসল ও খাওয়াদাওয়া করে বিকেলে ফলাফল জানতে পুনরায় ভোট কেন্দ্রে আসেন তিনি। সন্ধ্যার আগে কেন্দ্রে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সমর্থকরা লাঠিসোটা নিয়ে এসে ভাঙচুর ও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও পাল্টা টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়ে। ওই সময় তিনি ভোট কেন্দ্রের বাহিরে জমির ভিতর দিয়ে দৌড়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করেন আব্দুল্লাহ। তখন তিনি পুলিশের বারার বুলেটে আঘাতপ্রাপ্ত পান।
আহত নৌকা প্রতিকের এজেন্ট ছহির উদ্দিন ফকির জানান, নীরবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। ভোট গ্রহণ শেষে চা-নাস্তার বিরতি দিলে বাহিরে এসে চা পান করেন। ভোট গণনার সময় ডেকে নেয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সন্ধ্যার একটু আগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্রে ভোট গণনা না করে ব্যালট বাক্স উপজেলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তুলতে ধরেন। অনেক অনুরোধ করলেও তিনি শোনেননি। তখন উত্তেজিত জনগণ ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও পাল্টা টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে কেন্দ্রের ভিতর থেকে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুড়লে তিনি আহত হন। তখন তিনি কেন্দ্রের পশ্চিম পার্শ্বে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
তিনি বলেন, পুরো শরীর ব্যথায় জর্জরিত হয়ে আছে। ওষুধেও ব্যথা কমছে না।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ জানান, আহতদের সবাই শঙ্কামুক্ত। তারা সুস্থ এবং ভালো আছেন। তাদের শরীরে অপারেশনের কোনো প্রয়োজন নেই। হাসপাতালে ভর্তির পর দ্রুত চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় তারা সুস্থ হয়ে ওঠেছেন। এখন হয়তো শরীরে কিছুুটা ব্যথা আছে। বাড়িতে গিয়ে ওষুধ খেলে ধীরে ধীরে ব্যখা সেরে যাবে। তবে দাগটা হয়তো কিছুদিন রয়ে যাবে। আজকালের মধ্যেই তাদের সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে।