শিরোনাম

South east bank ad

গৌরীপুরে ভোট কেন্দ্রে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের দায়ে জামালকে গ্রেফতারের দাবি

 প্রকাশ: ০১ জানুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মশিউর রহমান কাউসার, (ময়মনসিংহ):

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে সহনাটি ইউনিয়নে ভোট গ্রহনের দিন (২৬ ডিসেম্বর) ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহন কর্মকর্তাদের জিম্মি করে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের অভিযোগে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শামছুজ্জামান জামাল (লাঙ্গল) কে গ্রেফতারের দাবি ওঠেছে। সহনাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নির্বাচন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এ দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সহনাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্রী রুহি দাস আচার্য্য বলেন, ভোট গ্রহনের দিন চেয়ারম্যান প্রার্থী শামছুজ্জামান জামাল ও তার সমর্থকরা নিজ বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় গিধাঈষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নৌকার এজেন্টদের জোরপূর্বক ভোট কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে সারাদিন আটকে রাখেন।

এদিন এই ভোট কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার করে ভোটারদের প্রকাশ্যে লাঙ্গলে ভোট দিতে বাধ্য করান জামাল ও তার সমর্থকরা। ভোট গ্রহন শেষে নিজের পরাজয় নিশ্চিত জেনে জামাল প্রায় দেড় হাজার লোক নিয়ে ভোট গ্রহন কর্মকর্তাদের জিম্মি করে লাঙ্গলে ভোট বাড়ানোর চাপ দেন।

এতে ভোট গ্রহন কর্মকর্তারা রাজি না হওয়ায় রামদা, লাঠিসোটা নিয়ে জামালের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা ভোট কেন্দ্র ঘেরাও করে ভোট গ্রহন কর্মকর্তাদের হত্যার হুমকী দেন। এসময় ভোট কেন্দ্রে ইট পাথর নিক্ষেপ করেন তারা ও কেটে দেয়া হয় উপজেলার সাথে যোগাযোগের সংযোগ সড়ক।

তিনি বলেন, “রাত ২টার দিকে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত বাহিনীর পাঁচ শতাধিক সদস্য অভিযান চালিয়ে ভোট গ্রহন কর্মকর্তাদের উদ্ধার করেন। অভিযানকালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপরও হামলা চালান জামালের সমর্থকরা।”

রাষ্ট্রীয় কাজে বাঁধাদান, ভোট গ্রহন কর্মকর্তাদের জিম্মি, ভোট কেন্দ্র ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা, রাস্তা কর্তন ও ভোট কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার করে নির্বাচনের দিন গিধাউষা কেন্দ্রে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন শামছুজ্জামাল জামাল। এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে শামছুজ্জামাল জামালের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জোরালো দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতা রুহি দাস আচার্য্য। অন্যতায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সহনাটি ইউনিয়ন আওয়ামী সাবেক সাধারণ সম্পাদক উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল কাশেম জানান, ২৬ ভোটে পরাজয় মেনে নিতে না পেরে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বর্তমানে শামছুজ্জামান জামাল বিতর্কিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে চলেছেন। জামাল ও সমর্থকদের অব্যাহত হুমকীকে নৌকার বিজয়ী প্রার্থী সালাউদ্দিন কাদের রুবেলসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী, সমর্থকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

সহনাটি ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নূর মোহাম্মদ উজ্জল বলেন, শামছুজ্জামান জামাল বিগত ৪০ বছর ধরে কখনও ইউপি চেয়ারম্যান, কখনও উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে আসছেন। প্রতিটি নির্বাচনে তিনি তার নিজ এলাকায় ভোট কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার করে সাধারণ ভোটারদের তার প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করান।

২৬ ডিসেম্বর গিধাউষা ভোট কেন্দ্রে জামাল ও সমর্থকরা গিধাউষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে যে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালিয়েছেন তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে শামছুজ্জামাল জামালকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি করেন এই যুবলীগ নেতা।

গিধাউষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৌকার এজেন্ট আব্দুস সাত্তার জানান, ভোট গ্রহনের দিন সকাল ৯ টার দিকে শামছুজ্জামান জামাল ও তার সমর্থকরা তাকে ভোট কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে অন্য একটি কক্ষে আটকে রাখে। পরে এদিন রাত দেড়টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করেন।

গিধাউষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার গৌরীপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক সৈয়দ আল আমিন জানান, ভোট কেন্দ্রে চেয়াম্যান প্রার্থী শামছুজ্জামান জামাল ও তার সমর্থকদের হামলা, ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড, ভোট গ্রহন কর্মকর্তাদের জিম্মিকরন ও হত্যার হুমকীদানের ঘটনা তিনি লিখিতভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবগত করেছেন।

আওয়ামী লীগের মনোনীত নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন কাদের রুবেল জানান, সহনাটি ইউনিয়নে অন্যান্য ভোট কেন্দ্রে গড়ে ৭৩% ভোট কাস্টিং হয়েছে। গিধাঊষা কেন্দ্রে ভোট কাস্টিং হয়েছে প্রায় ৮৫%। এ কেন্দ্রে প্রদত্ত মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ২৫০৫। তারমধ্যে শামছুজ্জামান জামাল (লাঙ্গল) পান ২৪০৩ ভোট।

অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী দুলাল আহমেদ (চশমা) ৫৯ ভোট, নৌকা ৩৬ ভোট ও হাতপাখা ৭ ভোট পান। অথচ গিধাউষা ভোট কেন্দ্র এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রায় দু’শতাধিক নেতা-কর্মী, সমর্থক ও পরিবার রয়েছে। তাদের ভোটগুলো গেল কোথায় ?

তাই গিধাউষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রের ভোট পুনঃগণনা ও ভোট কেন্দ্রে শামছুজ্জামান জামালের ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ডের ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে রিটার্নিং অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন কাদের রুবেল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামছুজ্জামান জামাল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গিধাউষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ভালুকাপুর এলাকার নৌকার সমর্থকরা করেছেন।

মাওহা ও সহনাটি ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “এসব অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে তিনি জানান। ”

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: