সাতছড়িতে কাউন্টার টেররিজমের অভিযান, গোলাবারুদ উদ্ধার
নুর উদ্দিন সুমন, (হবিগঞ্জ) :
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভারত সীমান্তঘেষা গহীন অরণ্যে এবার অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। সোমবার সকাল থেকে এ অভিযান শুরু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামান।
বিকেলে চুনারুঘাট থানা চত্ত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে তিনি জানান, ১৫টি মর্টার শেল, ২৫টি বুস্টার ও ৫১০ রাউন্ড অটো মেশিনগানের
গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “রোববার রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে আপেল ত্রিপুরা অমিত (৩৩) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তিনি খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি এলাকার বাসিন্দা বিশু ত্রিপুরার ছেলে। তার কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সাতছড়ির গহিন অরণ্যে এসব গোলাবারুদ থাকার তথ্য দেন। তাকে নিয়ে ভোর রাতে সাতছড়িতে অভিযান শুরু করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তার দেখানো পৃথক দু’টি স্থান থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তিনি কেন, কি উদ্দেশ্যে, কোথা থেকে এসব গোলাবারুদ এনে মজুদ করেছেন।”
তিনি জানান, সিটিটিসি সদস্যরা সোমবার রাতেই সাতছড়িতে অভিযানে নামে। তারা ভোর ৪টার দিকে আটক অমিতকে নিয়ে সাতছড়ি আসে। টিকেট কাউন্টারের গেইট থেকে প্রায় এক ঘন্টার হাটার পর তিনি একটি পাহাড়ের টিলার নিচে অস্ত্র রয়েছে বলে শনাক্ত করে।
সেখানে সিটিটিসি সদস্যরা মাটি কুড়ে দুইটি বক্স উদ্ধার করে। পরে আরও দু’টি জায়গায় অস্ত্র রয়েছে বলে সেখানে সিটিটিসি সদস্যদের নিয়ে
গেলে সেখানেও টিলার উপর মাটি কুড়ে আরও ৪টি বাক্স পাওয়া যায়। পরে অন্য একটি টিলার উপর সনাক্ত মতে মাটি খুড়ে একটি বড় ড্রামে ভর্তি ১৫টি মর্টার শেল পাওয়া যায়।
এছাড়া ৪টি বক্সে ৫১০ রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়। এগুলো অটোমেটিক মেশিনাগানের গুলি। উদ্ধারকৃত গোলাবারুদ সাধারণত আইনশৃঙ্খলা
বাহিনী ব্যবহার করেনা। এগুলো সাধারণত সেনাবাহিনী ব্যবহার করে থাকে।
তিনি জানান, আটক অমিত ত্রিপুরাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তার দখলে বা তার নলেজে আর কোন গোলাবারুদ আছে কিনা তা আমরা জানার চেষ্টা করছি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এসব অস্ত্র গোলাবারুদ অনেক দিন আগেই তিনি এ বনের অভ্যান্তরে রেখে গেছেন। তবে দিনক্ষন বলেননি। তিনি বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনকালে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা ছাড়াও হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান, মাধবপুর সার্কেল মহসিন আল মুরাদ ও চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলী আশরাফ ও তদন্ত ওসি চম্পক দাম উপস্থিত ছিলেন।
সাতছড়ি বনে এর আগে ২০১৪ সালের ১ জুন থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দফায় অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ৩৩৪টি কামান বিধ্বংসী রকেট, ২৯৬টি রকেট চার্জার, একটি রকেট লঞ্চার, ১৬টি মেশিনগান, একটি বেটাগান, ছয়টি এসএলআর, একটি অটোরাইফেল, পাঁচটি মেশিনগানের অতিরিক্ত খালি ব্যারেল, প্রায় ১৬ হাজার রাউন্ড বুলেটসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে র্যাব।
এর পর আবারও ওই বছরের ১৬ অক্টোবর থেকে চতুর্থ দফার প্রথম পর্যায়ে উদ্যানের গহিন অরণ্যে মাটি খুঁড়ে তিনটি মেশিনগান, চারটি ব্যারেল, আটটি ম্যাগাজিন, ২৫০ গুলির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আটটি বেল্ট ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি রেডিও উদ্ধার করা হয়।পরে একই বছরের ১৭ অক্টোবর দুপুরে এসএমজি ও এলএমজির আট হাজার ৩৬০ রাউন্ড, থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ১৫২ রাউন্ড, পিস্তলের ৫১৭ রাউন্ড, মেশিনগানের ৪২৫ রাউন্ডসহ মোট ৯ হাজার ৪৫৪ রাউন্ড বুলেট উদ্ধার করা হয়।
পঞ্চম দফায় ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সাতছড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ১০টি হাই এক্সক্লুসিভ ৪০ এমএম অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট উদ্ধার করা হয়।