অভিযানে আসবে, তাই নিজেরাই হেমার মেরে বৈধ করলেন কাঠ
সোহেল কান্তি নাথ, (বান্দরবান) :
বান্দরবান পাল্পউড প্যান্টেশন ও বন বিভাগের আওতাভুক্ত দুর্গম বিভিন্ন বনাঞ্চলের মূল্যবান গাছ অবাধে নিধন হচ্ছে। এতে করে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বনের জীববৈচিত্র। গত বেশ কয়েক বছর ধরে বনের এই ধ্বংস যজ্ঞ চললেও বন বিভাগ অদৃশ্য কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছে। যদিওবা বনাঞ্চল রক্ষা, অভিযানে সক্রিয় থাকার দাবী করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, কিছু অসাধু বন কর্মকর্তাদের সহায়তা ও ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে কাঠ পাচারকারীর দল রাত-দিন কথিত জোত পারমিটের নাম ব্যবহার করে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ পাচার করছে। এতে একদিকে বন বিভাগের সৃজিত সরকারি বনাঞ্চলের মূল্যবান গাছ নিধন হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।
এদিকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বান্দরবান জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে দেড় ডজন স’মিল সহ করাত কল। আর এসব স’মিলকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে চোরাই কাঠের রমরমা ব্যবসা করছেন। বনাঞ্চল উজাড় করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সেখানে কাঠ পাচার করে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বনবিভাগের নাকের ডগায় এসব বনজ কাঠ ক্রয়-বিক্রয়, পাচার হলেও রহস্যজনক কারণে তারা নীরব। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান হলেও সেসব অভিযান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।
তেমন-ই গত মঙ্গলবার (১৪ডিসেম্বর) বন বিভাগের উর্দ্ধতন একটি তদন্ত টিম আসার খবরে নড়ে চড়ে বসে বান্দরবানের কাঠ ব্যবসায়ীরা। ওই দিন সকাল থেকে বিভিন্ন কাঠের ডিপো ও করাত কলে মজুদ রাখা অবৈধ গাছ ছোট ব্যবসায়ীরা লুকিয়ে রাখলেও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবৈধপন্থায় হেমার ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় উজানী পাড়া স’মিল, বালাঘাটা ও নিউগুলসান স’মিলে গিয়ে এর সত্যতা মিলে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিপুল পরিমাণ অবৈধ গাছের উপর বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে হেমার ব্যবহার করছেন সাধারণ শ্রমিকরা। তার মধ্যে বালাঘাটা এলাকায় বন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা দেখা গেলেও অন্য দুটি জায়গার কোথাও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দেখা যায়নি। এসময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি জানতে পেরে কাঠ ব্যবসায়ীদের টনক নড়ে। কিছু সময় কাজ বন্ধ রাখলেও সাংবাদিকরা চলে আসার পর পুনরায় অবৈধ গাছের হেমার মেরেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও বনবিভাগের অভিযানের খবর পেয়ে কাঠ ব্যবসায়ীরা শতশত ঘনফুট কাঠ পুকুর ডোবায় লুকিয়ে রাখে শ্রমিকরা। পরে বন বিভাগের লোকজন গিয়ে নামে মাত্র কিছু গাছজব্দ দেখিয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে সৃজিত বন একদিকে লুট করছে দুষ্কৃতিকারীরা অন্যদিকে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নামে নির্ধারিত হেমার কাঠ ব্যবসায়ীদের হাতে কিভাবে গেলো তার প্রশ্ন তোলেছেন পরিবেশবাদীরা।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বান্দরবান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: মাহমুদুল হাসান বলেন- গাছে অষ্পষ্টের কারণে হয়তো জোত মালিকদের কেউ তাদের হেমার মেরেছে। বন বিভাগের সরকারী হেমার কাঠ ব্যবসায়ীদের হাতে যাওয়ার কথা নয়। বন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হেমার দেওয়া হয়। তবে কাগজপত্র ও সরকারী হেমারের সঙ্গে মিল না থাকায় অন্তত চারশ ফুটের দুই ট্রাক গাছ জব্দ করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। তিনি আরো জানান, দুই ডিভিশনের পক্ষ থেকে তদš চলছে। আগামী আরো কয়েকদিন অভিযান চলবে। হেমার ব্যবহারের অভিযোগও কতটুকু সত্য তা খতিয়ে দেখা হবে।