শিরোনাম

South east bank ad

শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ফের পতনের ধারায় শেয়ারবাজার

 প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

শুরুর দিকের পতনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ফের নিম্নমুখী শেয়ারবাজার। গতকাল বুধবার (০৮ ডিসেম্বর ২০২১) সকাল ১০টায় দিনের লেনদেন শুরুর মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রধান সূচক ৪৭ পয়েন্ট হারিয়েছিল। পরের দেড় ঘণ্টায় হারানো পয়েন্ট ফিরে পাওয়ার পর ফের দরপতন শুরু হয়েছে। দুপুর ১২টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় সূচকের পতন বাড়ছিল।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত কিছু ব্যাংকসহ বৃহৎ বাজার মূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দরপতন শুরু হয়েছিল। আবার সূচককে ঊর্ধ্বমুখী করতেও ওই শেয়ারগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে আজ শেয়ার বিক্রির চাপ বেশি থাকায় শেয়ারদর ও সূচককে ঊর্ধ্বমুখী রাখা কঠিন হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনে ৩৪৫ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধি এক্ষেত্রে বড় একটি কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। পাশাপাশি মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের ফল না থাকার নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে বলে জানান তারা।

দিনের লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টা শেষে দুপুর ১২টায় ডিএসইতে ১৭৩ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর বেড়ে কেনাবেচা হতে দেখা যায়। এ সময় দর হারিয়ে কেনাবেচা হচ্ছিল ১৬১ শেয়ার ও ফান্ড এবং অপরিবর্তিত অবস্থায় কেনাবেচা হচ্ছিল ৩৮টি। বেশিরভাগ শেয়ারের দর বেড়ে কেনাবেচা হওয়া সত্ত্বেও প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৭০১৯ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে। এ সময় পর্যন্ত ডিএসইতে ৫৪৪ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

সূচকের পতনে সর্বাধিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বেক্সিমকো লিমিটেড। দুপুর ১২টায় সূচক যখন ২৯ পয়েন্ট হারিয়েছিল, তখন এ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে সূচকে পৌনে ১১ পয়েন্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। সূচকের পতনে এ সময় আরও যেসব প্রতিষ্ঠানের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল, সেগুলো হলো- ব্র্র্যাক ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, লাফার্জ-হোলসিম, স্কয়ার ফার্মা, রেনেটা, ওয়ান ব্যাংক ইত্যাদি।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, এনবিআর ও আইসিবির বৈঠকের কোনো ফল না আসার প্রভাব রয়েছে আজকের লেনদেনে। অর্থমন্ত্রণালয় এবং বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নানা পর্যায় থেকে এ বৈঠক নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভুল বার্তা ও ধারণা দেওয়া হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও বিশেষ প্রত্যাশা তৈরি হয়।

বিনিয়োগকারীদের ধারণা ছিল, গতকালের বৈঠক থেকে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজার (বিনিয়োগ) ক্রয় মূল্য গণনা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হবে। এছাড়া বন্ডের বিনিয়োগও এক্সপোজার থেকে বাদ দিতে বলা হবে।

তাদের এমন প্রত্যাশার কারণ- স্বার্থান্বেষী একটি মহল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানাভাবে এ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছে, ক্রয় মূল্যে ব্যাংকের এক্সপোজার গণনা করা হলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ করার সুযোগ অনেকটাই বাড়বে এবং তারা বিনিয়োগ শুরু করবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান নিয়মেই প্রায় সব ব্যাংকের এক্সপোজার তাদের বিনিয়োগ সীমার তিন ভাগের একভাগেরও কম রয়েছে। অনেক ব্যাংক বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ বিনিয়োগ করার সক্ষমতা রাখে। কিন্তু তারা খুব একটা বিনিয়োগ করছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, আগে কেনা শেয়ারের কারণে অনেক ব্যাংক শেয়ারবাজার বিনিয়োগে লোকসানে। অর্থাৎ তাদের কেনার শেয়ারের ক্রয় মূল্য বর্তমান বাজার মূল্যের তুলনায় অনেকটাই বেশি। ফলে ব্যাংকের বিনিয়োগ মূল্য বাজার মূল্যে হিসাব করার কারণেই অনেক ব্যাংকের বিনিয়োগ করার বড় ধরনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় বাজার মূল্যের পরিবর্তে ক্রয় মূল্যে হিসাব করা হলে অধিকাংশ ব্যাংকের বিনিয়োগ করার ক্ষমতা কমবে।

উদাহরণ হিসেবে তারা জানান, যেমন- কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগ বাজার মূল্যে হিসাব করায় হয়তো এখন ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু ক্রয় মূল্যে হিসাব করা হলে তা ৫০-৬০ কোটি টাকায় নেমে আসবে। বর্তমান অবস্থায় যা শেয়ারবাজারের জন্য খারাপ ফল নিয়ে আসবে। অথচ যারা এটা চাইছে তারা এ দিকটা চিন্ত্মা করছে না। আর করলেও তা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের থেকে গোপন রাখছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যাকে সমর্থন করেন। বিএসইসির ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০১০ সালের ধসের পর অনেক ব্যাংক বিনিয়োগে লোকসানে। ধসের পর শেয়ার কেনাবেচা করলেও এখনও তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা অনেক শেয়ারের ক্রয় মূল্য বর্তমান বাজার মূল্যের তুলনায় বেশি। ক্রয় মূল্যে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাব করা হলে এপপোজার বেড়ে যাবে।

ক্রয় বা বাজার মূল্যে ব্যাংকের এক্সপোজার হিসাব করা উচিত- এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, বাজার মূল্যে হিসাব করাটাই যুক্তিযুক্ত। এ ফর্মুলা বাজারে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে। বাজারে কোনো শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেলে প্রাতিষ্ঠানকে বাধ্য হয়ে শেয়ার বিক্রি করতে হয়। এতে শেয়ারদর মাত্রাতিরিক্ত হওয়া কিছুটা হলেও রোধ করা যায়।

বিপরীতে বাজার মূল্য কমে গেলে ব্যাংকের এক্সপোজার কমে যায়। এতে তার নতুন করে ওই শেয়ার কিনে ‘এভারেজ’ করার সুযোগ হয়। এতে বিনিয়োগ ঝুঁকি কমে এবং বাজারে নতুন ক্রয় চাহিদা তৈরি হলে শেয়ারের দরপতন রোধে তা ভূমিকা রাখতে পারে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এ দিকটা চিন্ত্মা না করেই স্বার্থান্বেষীমহলের কথায় কান দিচ্ছেন বলেও মত তার।

শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তা জানান, সোজা কথা হলো এ ইস্যুকে ব্যবহার করে একটি পক্ষ বিশেষ কোনো ফায়দা নিতে চাচ্ছে। ‘অমুক মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে’ বলে প্রচার করছে। ওই মিটিংয়ে কিছু না হলে প্রচার করছে ‘পরের মিটিংয়ে হবে’। এভাবে মিটিংয়ের পর মিটিং যায়, কিছুই হয় না। এটা এক ধরনের প্রতারণা।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: