গৃহবধূর কব্জি কেটে ফেলায় চার কসাই সহোদরের কারাদণ্ড
শেখ সাঈদ আহাম্মেদ সাবাব, (শেরপুর):
শেরপুর সদর উপজেলার বাদাতেঘুরিয়া গ্রামের কৃষক মৃত চাঁন মিয়ার মেয়ে কুলসুম বেগমের বিয়ে হয়েছিল ঝিনাইগাতী সদরের কসাইপাড়া এলাকার কসাই কুদরত আলীর ছেলে লিটন মিয়ার সাথে। পারিবারিক সূত্রে লিটন মিয়াসহ পাঁচ সহোদর ভাই স্থানীয় বাজারে গরু-মহিষ জবাই করে মাংস বিক্রিসহ কসাই ব্যবসার সাথেই জড়িত ছিলেন।
কিন্তু কেবল পেশায় নয়, বিয়ের মাত্র ৯ মাসের মাথায় যৌতুকের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে লিটন মিয়া তার ভাইদের নিয়ে অন্ত:সত্ত্বা সেই স্ত্রীর প্রতি অমানবিক নির্যাতন চালিয়েও যেন একই মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। নিজের মাংস কাটার চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীর ডান হাত কব্জিসহ বিচ্ছিন্ন করেই ক্ষান্ত হননি, বরং তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চাপাতিসহ দা ও ছুরি দিয়ে এলোপাথারিভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে তারা। এই ঘটনায় লিটন মিয়া ও তিন ভাইসহ চার সহোদরের বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ডসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ হয়েছে।
গতকাল রোববার (০৫ ডিসেম্বর ২০২১) দুপুরে শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. আখতারুজ্জামান আদালতে সকল আসামির উপস্থিতিতে ওই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনে গুরুতর জখমের দায়ে গৃহকর্তা লিটন মিয়াকে (২৮) ১২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ভুক্তভোগীকে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং নির্যাতনে সহায়তা ও আঘাতের দায়ে লিটন মিয়ার সহোদর তিন ভাই রিপন মিয়া (৩৮), উজ্জল মিয়া (৪৫) ও নুর ইসলামকে (৫০) তিন বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য আদেশ দেওয়া হয়।
আদেশ অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণের টাকা পাবে ভুক্তভোগী ও তার শিশু সন্তান লুৎফা (৩) পাবে। অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় লিটন মিয়ার আত্মীয় শফিকুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে স্পেশাল পিপি গোলাম কিবরিয়া বুলু জানান, ২০১৮ সালের ১৩ জুন বিকেলে যৌতুকের টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে কসাই পেশায় নিয়োজিত গৃহকর্তা লিটন মিয়া তার ভাইদের নিয়ে চার মাসের অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধূ কুলসুম বেগমের উপর নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে লিটন নিজেদের পেশার কাজে ব্যবহৃত চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীর ডান হাত কবজিসহ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
ওইসময় তার তিন ভাই দা, ছুরি ও ডেগার দ্বারা তাকে এলোপাথারিভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। পরে তাকে মূমুর্ষূ অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ওই ঘটনায় জেলা হাসপাতাল ও ঢাকায় চিকিৎসা শেষে তিন জুলাই গৃহবধূ বাদী হয়ে স্বামী লিটন মিয়া এবং তার চার সহোদর ভাই ও আত্মীয় শফিকুল ইসলামকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।
পরে ছয় জুলাই ঝিনাইগাতী থানায় নিয়মিত মামলা রেকর্ড হলে দু’দিন পরই গ্রেপ্তার হয় প্রধান আসামি লিটন। পরে সে ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। তদন্ত শেষে একই বছরের ৩১ আগস্ট ঝিনাইগাতী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার বিশ্বাস কেবল লিটন মিয়া ও তার আত্মীয় শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
কিন্তু বিচারিক পর্যায়ে বাদীপক্ষের নারাজির প্রেক্ষিতে এজাহারনামায় ছয় আসামির বিরুদ্ধেই অপরাধ আমলে গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। পরের বছরের ৩১ অক্টোবর লিটন মিয়ার ভাই রবি মিয়া ব্যতীত অপর চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বিচারিক পর্যায়ে বাদী-ভুক্তভোগী, ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চার সহোদরের বিরুদ্ধে ওই রায় ঘোষণা করা হয়।