বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ-সমাবেশ
প্রদীপ মোহন্ত, বগুড়া:
বগুড়ার শেরপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বীয়ার বিরুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগ উঠেছে। সেইসঙ্গে ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিএনপি নেতা বড় ভাই পিয়ার উদ্দিনকে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন তিনি। এজন্য তাকে দল থেকে বহিস্কার করার দাবি জানিয়ে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়া একই দাবিতে দলটির জেলা ও কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদকের কাছে স্মারকলিপি দেন তারা।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া এই উপজেলার নয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে ঘরোয়া বৈঠকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বীয়ার গোপনে ধারণ করা বিতর্কিত বক্তব্যের একটি ভিডিও ও অডিও রেকর্ড শুক্রবার সকাল থেকেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে শহরজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এতে করে ক্ষোভে ফেটে পড়েন দলীয় নেতাকর্মীরা।
এক পর্যায়ে আ. লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দুপুরের পর থেকেই শহরের শেরপুর শহীদিয়া আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। এরপর সেখান থেকে ওই আ. লীগ নেতার নেতার বিতর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদে ও তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বাসস্ট্যান্ডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করা হয়। প্রায় ঘন্ট্যাব্যাপি এই কর্মসূচি চলাকালে মহাসড়কের উভয়পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বীয়ার ১৫ মিনিটের ওই অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, ‘ইউনিয়নের নির্বাচনকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রাম্যমাণ মাজার নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরলেও জনগণ ভোট দেবে না। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মাথায় কোনো মাল বা বুদ্ধি নেই। এর চেয়ে বেশি বুদ্ধি-জ্ঞান আমার গোপানাঙ্গের মাথায় রয়েছে। এছাড়া আ. লীগের জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়েও বিভিন্ন কটুক্তিপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, এটি মেনে নেওয়া যায় না। তার বিতর্কিত বক্তব্য ও কর্মকা-ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তাই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অবিলম্বে তাকে দল থেকে বহিস্কার করার জোর দাবি জানান তারা।
কর্মসূচিতে নেতৃত্বে দেওয়া আ.লীগ নেতা খলিলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা আ. লীগের এই নেতা খানপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আ. লীগের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট করেছেন। বিএনপি নেতা নিজের বড় ভাইকে জেতানোর জন্য নানা কৌশল বাস্তবায়ন করেছেন। যেমন দলীয় প্রার্থীর পরিবর্তে তার ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচন না করায় আমাকে খানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রাতের আঁধারে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বীয়া বলেন, খানপুর ইউনিয়নে আ. লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন এই মিছিল করেছে। এই কর্মসূচিতে আ. লীগের কোন নেতাকর্মী অংশ নেয়নি। এছাড়া দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করায় বহিষ্কার ও অব্যাহতি পাওয়া নেতা খলিলুর রহমান এবং তার লোকজন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে আমার নামে মিথ্যা অডিও-ভিডিও তৈরী করে প্রচার-প্রচারণা করছেন। তিনি এই ধরণের কর্মকা-ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
শেরপুর টাউন পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাম্মাক হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, মিছিল শেষে কিছু সময়ের জন্য মহাসড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি করতে পারেনি। পুলিশ তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তাই তেমন কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।