প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলের ওয়াশিং প্লান্ট লাগানো হয়নি কাজে
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো):
পানি, খরচ আর সময় বাঁচিয়ে ট্রেন ওয়াশ করার জন্য রাজশাহীতে বসানো হয়েছে অটোমেটিক ট্রেন ওয়াশিং প্লান্ট। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। গত ৮ নভেম্বর এটির উদ্বোধন করা হলেও এখনও এই প্লান্ট ফেলে রেখে আগের মতই ঠিকাদারের মাধ্যমে ট্রেন পরিস্কার করা হচ্ছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজশাহী রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, অটোমেটিক প্লান্টটি তালাবদ্ধ। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্লান্টটিতে এখন দিনে মাত্র একটি ট্রেন ওয়াশ করা হয়। বাকি আটটি ট্রেন আগের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ওয়াশ করে ঠিকাদারের কর্মীরা। সানটিং সমস্যার কারণে অটোমেটিক প্লান্টে সব ট্রেন ওয়াশ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া ট্রেনের সিডিউল ঠিক রেখে এখানে ট্রেন ওয়াশ করা যায় না বলেও তাঁরা জানিয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, অল্প সময়ে ট্রেনের উভয় পাশে, ছাদ, এবং আন্ডারগিয়ার সুচারুভাবে পরিস্কার করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েতে দুটি অটোমেটিক প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। একটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এবং অন্যটি রাজশাহী স্টেশনে। বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ প্রকল্পের আওতায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ দুটি প্লান্ট স্থাপন করা হয়।
এই প্লান্টগুলো প্রতিদিন কমপক্ষে ১ লাখ লিটার পানি সাশ্রয় করতে সক্ষম। ব্যবহৃত পানির ৭০ শতাংশই রি-সাইকেল করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে প্লান্টটি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়ে আসা এই প্ল্যান্ট অটোমেটিক ও ম্যানুয়াল দুই মুডেই ব্যবহার করা যায়। গড়ে ১০ মিনিটে ১৪ কোচের একটি ট্রেন পরিস্কার করতে পারে এই প্লান্ট। অত্যাধুনিক এই প্ল্যান্ট পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী।
গত ৮ নভেম্বর প্লান্ট দুটির উদ্বোধন হয়। এরপর ১১ নভেম্বর থেকে রাজশাহীর প্লান্টটির কাজ শুরু হয়েছে। এখন দিনে একটির বেশি ট্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে না। একটি ট্রেন ওয়াশ করার পর প্লান্টটি দিনভর তালাবদ্ধই থাকছে। ফলে স্টেশনের ওয়াশফিল্ডে প্রতিদিন ট্রেনের ট্রিপ শেষে অন্য ট্রেনগুলোর নিয়মিত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাত ও ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে ট্রেনের ভেতরের ও বাইরের অংশ পরিষ্কারের কাজ করা হচ্ছে। এতে সময় লাগে অন্তত এক ঘণ্টা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এখনও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জামান ট্রেডার্সের মাধ্যমে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ট্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে। এতে ট্রেন ওয়াশের জন্য ঠিকাদারকে টাকাও দিতে হচ্ছে। অথচ প্লান্টে ট্রেন ওয়াশ করলে এই ব্যয় বহন করতে হবে না। আগের চেয়ে দ্রুততম সময়ে ট্রেনও ওয়াশ করা যাবে। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজস করে সরকারি অটোমেটিক প্লান্ট ব্যবহার করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্লান্টটির দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, প্লান্টটি এমন জায়গায় বসানো যে সানটিং সমস্যা হয়। মানে এখানে একটি ট্রেন ঢোকানো ও বের করার সময় লাইনে অন্য ট্রেন চলে আসে। ফলে সমস্যা হয়। এই সময়গুলো ছাড়া অন্য সময় ট্রেন ওয়াশ করতে গেলে আবার সিডিউল ঠিক থাকে না। এর ফলে এখনও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ঠিকাদারের মাধ্যমে ট্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে। সমস্যার সমাধান নিয়ে তাঁরা ভাবছেন।