দেশের পাখি তালিকায় যুক্ত হলো ছোট ‘কালিপেঁচা’
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অভ্যন্তরীণ সবচেয়ে সুন্দর ও পরিষ্কার রাস্তার নাম হলো প্যারিস রোড। যেখানে দুপাশে রয়েছে চোখ ধাঁধানো সুউচ্চ গগনশিরীষ গাছ। সকাল-সন্ধ্যায় নানা পাখির কলতান মুগ্ধ করে প্রকৃতিপ্রেমিদের। এবার এ রাস্তায় দেখা মিলেছে বিরল প্রজাতির এক পাখির। পাখিটির নাম হলো ছোট কালিপেঁচা। যার বৈজ্ঞানিক নাম Glaucidium Radiatum ও ইংরেজী নাম Jungle Owlet।
গত ১৩ অক্টোবর সকালে প্রাতঃভ্রমণের সময় প্রথম এই পাখির ডাক শুনতে পান বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও পাখি বিশেষজ্ঞ আনিসুজ্জামান মো. সালেহ রেজা। তারপর পাখির বেশ কিছু ছবি ও বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে অন্য প্রজাতির পেঁচা থেকে আলাদা করতে সক্ষম হন এই গবেষক। ফলে তখন তিনি নিশ্চিত হোন এটিই বিরল প্রজাতির ছোট কালিপেঁচা। এই প্রজাতির পাখি দেশে আগে কখনো দেখা যায় নি।
পাখির ছবিতে দেখা যায়, এই ছোট কালিপেঁচাটির একটি গোলাকার মাথা রয়েছে এবং এটি সর্বত্র সূক্ষ্মভাবে বাঁধাযুক্ত। ডানাগুলো বাদামি ডোরাকাটা।
পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে এরকম ২৫০টি পেচার প্রজাতি আছে। বাংলাদেশেও ১৮টি প্রজাতি ছিল। যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ প্রজাতির পাখি দেখা যেত। এখন এই নতুন প্রজাতির পাখি সংযোজন হওয়ায় আরো এক প্রজাতি বৃদ্ধি পেল। তবে এই পেঁচাটি অন্য সব প্রজাতি থেকে একটু আলাদা। এর পাখার বাদামি রঙের কিছু কারুকাজ রয়েছে যা তাকে আলাদা ভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। দেশে আগে কখনো এই পাখি দেখা যায়নি। এই প্রজাতির পাখি এককভাবে, জোড়ায় বা ছোট দলে পাওয়া যায়। এই প্রজাতির পাখিদের ভারত এবং শ্রীলঙ্কার সমভূমিতে পাওয়া যায়। এছাড়া এই পাখিটি আর্দ্র অঞ্চলে পাওয়া যায়। জি. রেডিয়াটাম শুষ্ক বনাঞ্চলে পাওয়া যায়।
বিরল প্রজাতির পাখির বিষয়ে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য হাসনাত রনি বলেন, এই প্রজাতির পাখি আগে দেশের কোথাও দেখা যায় নি। ফলে এ প্রজাতির বৈশিষ্ট সম্পর্কে বেশি জানা নেই। তবে এরা অন্ধকারাচ্ছন্ন গাছে বসবাস করতে পছন্দ করে। এছাড়া এশীয়-দাগিপ্যাঁচার সঙ্গে এই পাখির কিছুটা মিল রয়েছে। যাদের সাধারণত সিলেট অঞ্চলে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আমিসুজ্জামান মো. সালেহ রেজা বলেন, প্রথমে পাখিটির ডাক শুনে মনে হয় আগে কখনো এমন ডাক শোনা হয় নি। পরে পাখিটির ছবি তুলে ও ডাক সংগ্রহ করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং ইন্টারন্যাশনাল বার্ড ক্লাবের ওয়েবসাইটে পোস্ট করি। এরপর এই দুটি ক্লাব ও ভারতীয় বার্ড ক্লাব নিশ্চিত করে পাখিটি ছোট কালিপেঁচাই। এই প্রজাতির পাখি আগে দেশে দেখা যায়নি। বিভিন্ন সময় একইরকম পাখি দেখে অনেকে ছোট কালিপেঁচা দেখা কথা দাবি করলেও সেটির কোন প্রমাণ নেই। তবে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে প্রথম পাখিটি দেখা যায়। ফলে দেশের পাখি তালিকা আরো সমৃদ্ধ হলো।
তিনি আরও বলেন, এই পাখিরা কোনভাবে বিরক্ত হলে আর থাকবে না। অন্যদিকে বিভিন্ন সময় ফটোগ্রাফাররা ভালো ছবি তুলতে সর্বদা চেষ্টা করছেন। এটিতে তারা বিরক্ত হতে পারে। এছাড়া ছবি তোলার সময় পাখিরা ভয় পেতে পারে। ফলে নতুন এই প্রজাতির পাখিকে সংরক্ষণের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।