মামলার ভয় দেখিয়ে ভুয়া ডিবির ৯৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ; দুই প্রতারক গ্রেপ্তার
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :
রাজশাহী মহানগরীতে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পরিচয়ে মহামান্য হাইকোর্টে দুর্নীতির মামলা দায়েরের ভয় দেখিয়ে এক ডাক্তারের কাছ থেকে ৯৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক প্রতারক চক্র। এই ঘটনা জড়িত দুই প্রতারককে গত সোমবার রাত ২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে মহানগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- রাজশাহী মহানরগীর রাজপাড়া থানার লক্ষীপুর মিঠুর মোড় এলাকার এ কে এম মোতাহারুল ইসলামের ছেলে মো. তাসফিন আহমেদ (৩৩) ও মো. ফয়সাল আহমেদ (৩৮)।
নগর পুলিশ সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী ডা. মো, আজিজুল হক ওরফে আব্দুল্লাহর স্ত্রীর বড় বোনের ছেলে আসামি মো. তাসফিন আহমেদ ও মো. ফয়সাল আহমেদ। আত্মীয়তার সূত্র ধরে তাসফিন ও ফয়সাল দুজনই প্রতারণার শিকার ডা. আজিজুল হকের বাড়িতে যাতায়াত করতো। আত্মীয়তা ও বিশ্বস্ততার সূত্র ধরে আসামি তাসফিন, ফয়সাল ও ফয়সালের ভাইরা (স্ত্রীর ভগ্নিপতি) আসামি মো. রুবেল সরকার রাসেলের (৩৩) যোগসাজসে ডা. আজিজুল হককে মহামান্য হাইকোর্টে ভুয়া দুর্নীতি দমন মামলার কাগজ ও আয়করের ভুয়া কাগজ দেখায় এবং আসামি রুবেল নিজেকে ডিবি পুলিশ ও ওয়ারেন্ট অফিসার পরিচয়ে দিয়ে চলতি বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রতারক চক্রের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে টাকাগুলো নেয়ার সময় ডা. আজিজুল হককে জানায়, দুর্নীতি দমন ব্যুরো, আয়কর বিভাগ এবং মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে কাগজ বের হতে সময় লাগবে। এ বিষয়ে কাউকে কিছু না জানাতে বলে। অন্য কেউ জানলে তার ও তার পরিবারের যে কোন বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলে তারা ডা. আজিজুল হককে ভয় দেখায়। পরবর্তীতে ডা. আজিজুল হক খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন মহামান্য হাইকোর্টে দুর্নীতি ও আয়করের মামলার বিষয়টি ভূয়া। আসামিরা যোগসাজসে প্রতারণা করে তার কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি আসামি ফয়সালের কাছে জানতে চাইলে সে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজপাড়া থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়।
মামলা রুজুর পরপরই রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বোয়ালিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাজিদ হোসেনের নির্দেশে ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে রাজপাড়া থানার ওসি মো. মাজাহারুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে আসামিদের অবস্থান সনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযানে নামেন। পরে নিজ নিজ বাড়ি থেকে সোমবার রাতে এই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ঘটনার সাথে জড়িত থেকে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করে।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিদ্বয় এমন প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। তাদের নিকট থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের দেয়া তথ্য-উপাত্তগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং পলাতক অপর আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তার দুই আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।