শিরোনাম

South east bank ad

শরীয়তপুরের নিহত সেই স্কুলশিক্ষার্থীর সহপাঠিদের মানববন্ধন

 প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

রোমান আহম্মেদ, (শরীয়তপুর) :

বিষপানে নয় বরং মারধর করে হত্যা শেষে বিষপানের নাটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহত স্কুল শিক্ষার্থী গৃহবধূ স্বর্ণা আক্তারের পরিবারের সদস্যরা। অন্যদিকে স্বর্ণা আক্তার নিহত হওয়ার পর থেকে বাল্য বিবাহকে প্রধান কারণ হিসেবে অভিহিত করে এই হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে কালেক্টরেট পাবলিক হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে বলেন, স্বর্ণার যদি বাল্য বিয়ে না হত তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। স্বর্ণা আমাদের স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছে, আমরা দীর্ঘদিন পরে জানতে পেরেছি সে বিবাহিতা। আমরা বলতে চাই স্বর্ণার বয়সকে লুকিয়ে স্বর্ণার মা-বাবা স্বর্ণাকে বিয়ে দিয়েছে। স্বর্ণাকে তার স্বামী আল আমিন, শ্বশুর-শাশুড়িসহ যারা হত্যা করেছে আমরা তাদের বিচার দাবি করছি। সাথে সাথে স্বর্ণার মা-বাবাসহ বয়স জালিয়াতি করতে যে সমস্থ চেয়ারম্যান, মেম্বার ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দিয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই আমরা। একই সাথে যে কাজী বিয়ে পড়িয়েছেন তাকেও বিচারের আওতায় আনা উচিৎ বলে মনে করি। কারণ স্বর্ণা হত্যা একদিনে ঘটেনি, স্বর্ণাকে তিলে তিলে মারা হয়েছে, মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আজ স্বর্ণা মরেছে, কাল আমি বা আমার সহপাঠি মরব। এখন যদি এই হত্যার উচিৎ বিচার না হয়, তাহলে সামনের দিনে এমন ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকবে, আমরা কিশোর, আমাদের মধ্য থেকে এমন একটি ফুল ঝরে যাক, তা আমরা চাই না, দেশবাসীও চায় না।

শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সকাল ১১ টায় মানবন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে গিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্বারকলিপি দিয়েছে।

জানা যায়, অপ্রাপ্ত বয়স হওয়া সত্ত্বেও বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে স্বর্ণা আক্তারকে(১৪) আল আমিনের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য নানা ভাবে চাপ দিচ্ছিল আল আমিন ও তার পরিবারের সদস্যরা। চাহিদামত ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দিলেও আরও যৌতুক ও গহনার জন্য স্বর্ণাকে সাংসারিক, শারিরিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করে বিষপানের নাটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বর্ণার পরিবারের।

নিহত স্বর্ণার বাবা হানিফ হাওলাদার জানান, আমার মেয়ের আসার কথা ছিল, কিন্তু তারা আসতে দেয় নাই। আমি সারাদিন ধরে ফোন দিলেও কেউ ফোন ধরেনি। ঘটনার একদিন পর রাত আড়াইটা বাজে জামাই(আল আমিন) ফোন দিয়ে জানিয়েছে, আপনার মেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ফরিদপুর মেডিকেলে আছে। আমার মেয়েকে ওরা হত্যা করেছে।আমি এই হত্যার বিচার চাই।নিহত স্বর্ণার কাকা মানিক হাওলাদার জানান, যদি স্বর্ণা বিষ খেয়েই মরত তাহলে ওরা লাশ রেখে পালালো কেন? আমাদের জানালো না কেন? আমার ভাতিজিকে ওরা হত্যা করেছে, কারণ লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমি এই ঘটনার উচিৎ বিচার চাই। এবিষয়ে মামলার জন্য উকিলের সাথে পরামর্শ করা হচ্ছে, আমরা কোর্টে মামলা করব।

স্বর্ণার লাশ গোসল করিয়েছে আয়শা আক্তার ও নাসিমা । তারা জানান, সিনার উপর আঘাতের দাগ রয়েছে, পিঠের মধ্যে দাগ রয়েছে। এছাড়াও কোমরে দাগ রয়েছে, দাগ গুলো নীল হয়ে ফুলে গেছে।

এঘটনার বিষয়ে ডিএম খালী ইউপির ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল কালাম হাওলাদার বলেন, মেয়েটা নিয়ে যে দ্বন্দ্ব আছে এটা আমি মাঝে মধ্যে অনুভব করতাম। তারা বলতে চাইত না, যেহেতু আমার অজান্তে বিয়ে দিয়েছে। না বলার কারণে আজকে যৌতুক দিতেছে, ভিতরে ভিতরে অনেক কিছুই দিয়েছে। মেয়েটাও আসলে অশান্তিতে ছিল। ওরা আত্মহত্যার জন্য বাধ্য করছে অথবা আত্মহত্যা করছে কি না তাও আমরা জানি না। নাকি ওরা মারার পরে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যা প্রচার করছে তাও জানি না। আমি অপরাধীদের ফাঁসি চাই। জন্ম নিবন্ধন ওয়ার্ড মেম্বারের অগোচরে পেল কী করে এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে রাজি হন নি।এবিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন জানান, পোস্টমর্টাম রিপোর্ট আসলে আমরা কঠিন ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য , স্বর্ণা আক্তার (১৪) ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরচান্দা হাওলাদার কান্দির হানিফ হাওলাদারের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে। আর আল আমিন (২৫) শরীয়তপুর পৌরসভা সংলগ্ন এ্যাড. সিরাজুল ইসলাম আকনের বাড়ির ভাড়াটিয়া। তার বাবার নাম হানিফ সরদার। স্থায়ী ঠিকানা ভেদরগঞ্জ বাংলা বাজার। পেশায় আল আমিন প্রাইভেট কারের ড্রাইভার ছিলো।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: