মিশ্র ফল চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে হযরত আলী
শেখ সাঈদ আহম্মেদ সাবাব, (শেরপুর) :
একসময় শেরপুরের চাষীরা শুদুমাত্র ধান আর পাট চাষ করেই দিনাতিপাত করতো। পরবর্তীতে তারা শুরু করে নানা শাকসবজী ও ফর চাষ। কিন্তু শেরপুরের চাষীসহ কেউ জানতো তাদের সমতল এ জমিতে মাল্টা চাষ, আঙ্গুরসহ বিদেশী ফলের চাষ হবে। আর মাল্টা বিদেশী উন্নত ফলের চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সফল চাষী হযরত আলী। তার মিশ্র ফল বাগান শুধু লাভই না এ বাগানের সৌন্দর্য বিনোদনের খোরাক হয়ে দাড়িয়েছে মানুষের সামনে।
শেরপুর জেলা সদরের হাজী মো: ইব্রাহিম খলিল্লুহর তিন ছেলের সবার বড় হযরত আলী ঢাকার যাত্রবাড়ীতে ব্যবসা করেন। ব্যবসার ফাকে সে চিন্তা করেন নিজ এলাকায় সে ফলের বাগান করবে। এ থেকেই বিভিন্ন কৃষি বিশেষজ্ঞদের কাছে পরামর্শ নিয়ে শেরপুর সদরের রৌহায় গ্রামে একশ বিঘা জমিতে ২০১৯ সালে মাল্টা, কমলা, আঙ্গুর, ড্রাগন, লটকন, পেপে, পেয়ারা, লেবু, কুল বড়উ সৌদী খেজুরসহ ১২টি প্রজাতির ফল বানিজ্যিকভাবে চাষ করে শুর করেন হযরত আলী। একই সাথে বিদেশী উন্নত জাতের এমকাটো, ফ্রাই ছবেদা, মালবেরি, থাই সরিষাসহ আরো ২শ ৭১টি জাতের ফলের পরীক্ষামূলক চাষ শুর করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি শেরপুর সদর উপজেলার রৌহা, ভাতশালা, কামারিয়া ও বলায়েরচর ইউনিয়নে প্রায় আটশ বিঘা জমিতে ১২টি ফল ও চারা উৎপাদন বাগান করেছেন। একশ বিঘা নিজের থাকলেও বাকী জমি সে ২০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন।
সফল ফল চাষী মো: হযরত আলী জানান, আমি ব্যবসার ফাকে চিন্তা করি আমার দেশের মানুষকে কিভাবে বিষমুক্ত ফল খাওয়ানো যায়। এ চিন্তা থেকেই আমি ২০১৯ সাল থেকে ফল চাষ শুর করি। ফল চাষ ভারো হওয়ায় আমি ১টি নার্সারী, ও ১১টি ফলের বাগান করেছি। এখানে এখন দুইশর বেশী শ্রমিক কাজ করছে। সামনে আরো বেশী অর্থাৎ প্রায় একশ শ্রমিক কাজ করতে পারবেন। আমার যে লক্ষ মাত্রা আছে তার চেয়ে বেশী ফল উৎপাদন হচ্ছে বিক্রিও হচ্ছে। আমার দেখা দেখি অনেক মানুষ ফলচাষে উদ্বোদ্ধ হচ্ছে। আমার কাছে সহযোগিতা নিচ্ছেন, এতে আমার খুব ভালো লাগে। প্রতিদিনই অনেকেই এ ফল বাগান দেখার জন্য আসেন দেখেন, তারা খুশি হন, ফল কিনেন, আবার কেউ কেউ ফল বাগান করার সহায়তা চান। আমরা ছাদ বাগান করে দিয়ে থাকি। ইতিমধ্যে ১শরও বেমী চাদ বাগান আমরা করে দিয়েছি। আমি ফল বাগানের পাশাপাশি মাছ চাষ, মুরগী, কবুতর ও গরু পালন করে আসছি।
তার বাগানের মাল্টাসহ অন্যান্য ফল ফরমালিন মুক্ত থাকায় এবং ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার না করায় এখানে উৎপাদিত ফলের চাহিদা বেশী। এ বছর ১৪ কোটি টাকার ফল বিক্রির লক্ষমাত্রা থাকলেও ইতিমধ্যে ১০ কোটি টাকা ফল বিক্রি করা হয়েছে বলে বাগানের ম্যানেজার, আবু সাঈদ। তিনি জানান, আমাদের বাগানে ক্রেতারা প্রতিনিয়তই আসতে থাকায় ফল বিক্রি অব্যহত আছে। এতে আশা করা হচ্ছে ১৪ কোটি টাকার বেশী টাকার ফল বিক্রি করা সম্ভব হবে।
শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিন জানান, আমরা তাদেরকে নানাভাবে পরামর্শসহ সহযোগিতা করে আসছি। তিনি জানান, আগে আমাদের ধারনাই ছিলো না শেরপুরের সমতল ভূমিতে মাল্টা চাষ হবে। হযরত আলী সাহেবের মাল্টা চাসে সফল হওয়ায় উজ্জল সম্ভাবনা দেখছি আমরা। এখানকার মাল্টাসহ অন্যান্য ফল চাষে বিদেশী ফল আমদানী অনেকাংশেই হ্রাস পাবে বলে আমরা আশা করছি।
সফল ফল চাষী হযরত আলী তার বাগানে ফল চাষের পাশাপাশি শুর করেছেন মাছ চাষ, কবুতর, মুরগী ও গরু পালন। তার এসব উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে উদ্বোদ্ধ হচ্ছেন আরো অনেকেই।