মা ইলিশ রক্ষা অভিযান পরিচালনাকারী দলে জেলেদের হামলা: পুলিশসহ আহত ৫, নিখোঁজ ১
মোঃ রোমান আকন্দ, (শরীয়তপুর) :
শরীয়তপুরে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান পরিচালনাকারী দলের ওপর হামলা করেছে জেলেরা। শনিবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা ইউনিয়নের মরিছাকান্দি এলাকায় পদ্মা নদীতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উপজেলা মৎস কার্যালয়ের তিনজন মৎস সম্প্রসারন কর্মি ও দুইজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে মৎস বিভাগের কর্মী আব্দুল বারেক মিয়া নিখোঁজ আছেন। এছাড়া পুলিশের একটি আগ্নেয়াস্ত্র হারিয়ে গেছে।
সখিপুর থানার উপ-পরিদর্শক মিরাজ হোসেন বলেন, জেলেদের হামলার কারনে মৎস বিভাগের কর্মী ও পুলিশ সদস্যদের বহনকারী একটি স্পিডবোট তলিয়ে যায়। তাতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশের কিছু সরঞ্জাম হারিয়ে গেছে। নদী থেকে তা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা মৎস বিভাগের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, মা ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। এমন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে অভিযান চালান উপজেলা মৎস বিভাগের কর্মি ও পুলিশ সদস্যরা। তারা একটি স্পিডবোট নিয়ে অভিযানে গেলে মরিছাকান্দি এলাকায় জেলেরা তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় তাদের বহনকারী স্পিডবোট উল্টে নদীতে তলিয়ে যায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশ সদস্য ও মৎস বিভাগের কর্মীদের উদ্ধার করে। ওই হামলায় মৎস বিভাগের মৎস সম্প্রসারন কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেন, ওমর আলী, মাঠ ক্ষেত্র সহকারী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দাস এবং সখিপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশ সদস্য মেহেদী হাসান আহত হন।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পর থেকে মৎস বিভাগের মৎস সম্প্রসারন কর্মী আব্দুল বারেক নিখোঁজ আছেন। এ সময় পুলিশের দুটি আগ্নেয়াস্ত্র হারিয়ে যায়। একটি উদ্ধার করা গেলেও আরেকটি এখনো পাওয়া যায়নি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভির আল নাসিফ বলেন, পদ্মা নদীতে জেলেরা শনিবার দুই দফা অভিযান পরিচালনাকারী দলের ওপর হামলা করে। আমরা পাঁচজনকে আটক করতে পেরেছিলাম। আর সন্ধ্যায় হামলার ঘটনায় পুলিশের একটি অস্ত্র হারিয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, শনিবার সারাদিন অভিযান চালিয়ে জাজিরা ও ভেদরগঞ্জের পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৫২ জেলেকে আটক করেছে মৎস বিভাগ। এর মধ্যে জাজিরায় ৪০ ব্যক্তিকে এক মাসের কারাদন্ড ও ভেদরগঞ্জে ৪ জেলেকে এক বছর করে কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। আর জাজিরায় ৭ জেলেকে ও ভেদরগঞ্জে এক জেলেকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত জেলেদের শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জেলা মৎস কার্যালয় সূত্র জানায়, ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম চলছে। এ সময় ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার জন্য সমুদ্র থেকে নদীর মিঠা পানিতে আসে। এ কারনে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষন অভিযান চালাচ্ছে মৎস সম্পদ বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় ইলিশ মাছ শিকার,বিক্রি,মজুদ,পরিবহন বন্ধ করেছে প্রশাসন। কোন জেলে নদীতে জাল ফেলতে পারবেন না।
জেলেরা যাতে নদীতে না যায় তার জন্য সরকার শরীয়তপুরের ১৯ হাজার জেলেকে খাদ্যসহায়তা হিসেবে ২০ কেজি করে চাল দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। জেলেদের মধ্যে চাল বিতরনের জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩৮০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
শরীয়তপুরে গত বছর ৫ হাজার ৪০০ মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদন করা হয়েছে। আর এ বছর মৎস বিভাগ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে ৬ হাজার মেট্রিকটন।
শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা থেকে গোসাইরহাটের নলমুরি পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার পদ্মা ও মেঘনা নদী। গত পাঁচ দিনে মৎস বিভাগ,স্থানীয় প্রশাসন,পুলিশ ও র্যাব নদীতে ৬৩টি যৌথ অভিযান চালিয়েছে। তখন তারা ১৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৮৩ ব্যক্তিকে জেল ও ২ লাখ ৬ হাজার টাকা জরিমান করেছেন। এ সময় ১২৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা মৎস কর্মকর্তা প্রনব কুমার কর্মকার বলেন, শরীয়তপুরে পদ্মা ও মেঘনা নদীর ৭১ কিলোমিটার নদী পথ। দীর্ঘ এ নদীতে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জেলেরা মা ইলিশ শিকার করছেন। তারা অভিযান পরিচালনাকারি দলের ওপর হামলা করছেন। আমরা আরো কঠোর অভিযান চালাব। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।