৬ মাস পর শেরপুর সরকারি গণপাঠাগারে পাঠ সেবা শুরু
শেখ সাঈদ আহম্মেদ সাবাব, (শেরপুর) :
২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনা মাহামারি শুরু হওয়ার পর দই দফা শেরপুর সরকারী গণপাঠাগারের পাঠ সেবা বন্ধ হয়ে যায়। মাঝখানে ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী সিমিত পরিসরে পাঠ সেবা চালু হওয়ার পর দ্বিতীয় দফা করোনা সংক্রামন বেড়ে যাওয়ায় আবারও ৫ এপ্রিল থেকে পাঠাগারের পাঠ সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর আবারও ৫ অক্টোবর থেকে সিমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠ সেবা শুরু করা হয়েছে।
এতে পাঠাগারের পাঠক ও অন্যান্য সেবা গ্রহীতারা স্বস্থির নি:স্বাস ফেলেছে। দীর্ঘদিন শেরপুরের এই গণপাঠাগারের সেবা গ্রহিতা বা পত্রিকা পড়া, বই পড়া এবং চাকুরির সংবাদ পত্রিকায় বিভিন্ন চাকুরির খবর নেয়া বৃদ্ধ থেকে তরুন ও শিশুরা বেশ অস্বস্থিতে ছিলো। সরকারী ভাবে ৬ মাস পর পাঠাগারে আবারও পাঠ সেবা শুরু হওয়ায় তারা স্বস্থি প্রকাশ এবং আনন্দিত হয়েছে।
গণপাঠাগারের তথ্য সূত্রে জানাগেছে, শেরপুরের এই প্রচীণ গণপাঠাগারের বর্তমান বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজার। এখানে বিভিন্ন স্তরের একাডেমীক বই ছাড়াও গল্প, উপন্যাস, কবিতা, জীবন কাহিনী, ভ্রমন কাহিনী, বিজ্ঞান ভিত্তিক ও জ্ঞান মূলক নানা বইয়ের সমাহার রয়েছে। এখানে গ্রন্থাগার সেবা, রেফারেন্স সেবা, সম্প্রসারণ সেবা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা, প্রতিষ্ঠানিক সেবা, শিশুদের ট্রয় গেইম, উদ্ভাবনী গ্রুপের সেবাসহ প্রায় ২১ টি সেবা গ্রহন করতে পারে সাধারণ মানুষ।
সাধারণত এখানে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক মানুষ পাঠ সেবাসহ নানা সেবা গ্রহন করে থাকে। তবে করোনার পর প্রাথমিক ভাবে পাঠ সেবা চালু হওয়ায় বিষয়টি সাধারণ পাঠকরা পুরোপুরি অবগত নয়। এছাড়া এখনও পুরোপুরো সকল বিভাগের সেবাও চালু হয়নি। সূত্র জানায়, জেলা সরকারী গণপাঠাগারে বর্তমানে নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা রয়েছে ৭৩৬ জন। তার নিয়মিত পাঠাগারের পাঠ কক্ষে না বসলেও তারা বাসায় বই নিয়ে পড়াশোনা করছেন। এছাড়া শেরপুর সরকারী গণপাঠাগারের ২০১৯ সালে চালু হওয়া ভ্রাম্যমান লাইব্রেরীর বর্তমান নিবন্ধিত সদস্য রয়েছে আরো ৮৪৪ জন।
শেরপুর সরকারী কলেজে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী জুলফিগার আলী নিয়মিত এ সরকারী পাঠাগারে আসতেন পত্রিকা পড়তে। দীর্ঘদিন পর আবারও পাঠাগার খোলায় তিনি স্বস্থি প্রকাশ করে বলেন, বন্ধের সময় বিভিন্ন দোকানপাটে পত্রিকা পড়তে হতো। এখন এখানে আরাম করে পত্রিকা পড়া যায়।
ঢাকা তিতুমির কলেজ থেকে মার্স্টাস করা বেকার যুবক রাতুল জানায়, মার্স্টাস পাশ করে বিভিন্ন চাকুরির উন্টারভিউ এর প্রস্তুতির জন্য পড়াশোনা এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখার জন্য নিয়মিত পাঠাগারে আসতাম। কিন্তু পাঠাগার বন্ধ থাকায় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সেই সাথে তিনি জানায়, চাকুরির জন্য পড়াশোনার করতে গণ টেবিলে সমস্যা হয়। আলাদা ব্যবস্থা হলে ভালো হতো।
আস্তে আস্তে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে সকল সেবা পুনোরায় চালু হবে আশা করে গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরীয়ান সাজ্জাদুল করিম বলেন, সরকার লাইব্রেরীকে শুধু বই পড়ার মধ্যে সীমিত না রেখে উল্লেখিত নানা সেবা চালু করেছে। যেসব সেবা গ্রহন করে উপকৃত হচ্ছে বয়োবৃদ্ধ বই-পত্রিকা পড়ুয়া মানুষসহ শিশু ও কিশোর এবং চাকুরি প্রত্যাশি বেকার যুব সমাজ।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রায় ৫০ ভাগ লোকবলের সমস্যা রয়েছে। তাই চাকুরি প্রার্থীদের আলাদা কক্ষ থাকলেও এই মুহূর্তে সেই কক্ষ ব্যবহার করার জন্য উন্মুক্ত করা যাচ্ছেনা। তবে করোনা পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক হলে এবং লোকবলের সমাধান হলে সকল সেবাই পাবে পাঠক-গ্রাহকরা।