সোনাতলায় মানবিক সহায়তার ১২ লাখ টাকার হিসাব নেই
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় করোনায় মৃত এক নারীকে গোসল করিয়ে সারাদেশে আলোচনায় আসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিনের বিরুদ্ধে ১২ লাখ টাকার হিসাবে গড়মিলের অভিযোগ ওঠেছে। করোনার সময়ে মানবিন সহায়তার ত্রাণসামগ্রী ক্রয়ের সরকারি বরাদ্দ হিসেবে দেওয়া ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ১১ লাখ ৭৮ হাজার টাকার কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু তাই নয় ২ হাজার ৫৮ টি শুকনো খাবার প্যাকেটের মধ্যে মাত্র ৭শ প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। অথচ ত্রাণ বিতরণের অফিস ফাইল নোটে ৩৬৪ প্যাকেট করে বিতরণ দেখানো হলেও ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ মাত্র ১শ প্যাকেট করে শুকনা খাবার পেয়েছেন। ফাইল নোট ও রেজিস্টারের মধ্যে ব্যাপক গড়মিল লক্ষ্য করা গেছে।
জানা গেছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে কোভিড-১৯ ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় চলতি বছরের গত ৮জুন বগুড়া জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। করোনার সময়ে সরকার অসহায়, দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের জীবন জীবিকার তাগিদে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিলেও এ পর্যন্ত এ উপজেলায় ৬৭ হাজার ৩শ টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
সোনাতলা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ৩৬৪ করে মোট ২ হাজার ৫৮৪ টি শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণের কথা থাকলেও সেখানে প্রতিটি ইউনিয়নে ১শটি করে শুকনা খাবারের প্যাকেট স্ব-স্ব ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়। প্রতিটি প্যাকেটের মূল্য ধরা হয়েছে ৬৭৩ টাকা। শুকনা খাবারের প্যাকেটগুলো সরবরাহ করেছে মেসার্স শাহানা ভ্যারাইটি স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম। প্রতি প্যাকেটে ছিল ৭ কেজি চাল, হাফ কেজি লবণ, ১ কেজি চিনি, ১কেজি ডাল, ১০ টাকা মূল্যের সাবান ১টি। মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন পিপিআর নিয়ম নীতির মানা হয়নি। অপরদিকে শুকনা খাবারের যে মাস্টার রোল করা হয়েছে তাতে ইজিপিপির লেবারের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, অফিস ফাইল নোটে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩৬৪টি শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণের কথা থাকলেও বাস্তবে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ তাদের মালামাল বুঝিয়ে পাওয়া রেজিস্টারে ১শ প্যাকেটের কথা উল্লেখ করেছেন। সে মোতাবেক ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ১০ লাখ ৬৩ হাজার টাকার কোনো হিসাব মিলছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়টি করোনার সময়ের। তখন তিনি অন্য উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। তবে অফিসের ফাইল নোট ও বিতরণ রেজিস্টারের গড়মিলের কথা তিনি স্বীকার করেন।
এছাড়াও একটি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুলাই ২০২১ তারিখে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট উপজেলায় করোনাকালীন মানবিক সহায়তার আরও ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। এর মধ্যে গত ১৮ আগস্ট ২০২১ তারিখে ব্যাংক থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। যা দিয়ে তিনি ৫০টি শুকনা খাবারের প্যাকেট ক্রয় করেন। এখানে প্রতিটি প্যাকেটের মূল্য ধরা হয়েছে ৭শ’ টাকা। এতে করে দেড় লক্ষ টাকার মধ্যে ৫০ প্যাকেটে ব্যয় হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে রয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করে।
এ বিষয়ে তৎকালীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) সারওয়ার আলম জানান, এ ধরনের গড়মিল লক্ষ্য করার পর তিনি মাস্টার রোলে স্বাক্ষর করেননি। এছাড়াও তিনি আরও জানান, মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি কোনো নিয়ম নীতি মানা হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন জানান, প্রতিটি ইউপি চেয়ারম্যানদের শুকনা খাবার বিতরণের পাশাপাশি ভ্রাম্যমান কর্মহীন ও গুচ্ছ আবাসনবাসীদের মাঝে এ ধরনের শুকনা খাবার ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি আরও জানান, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। এটি তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র মাত্র।