শিরোনাম

South east bank ad

রাজশাহীর নদ-নদী রক্ষায় সরকারের কাছে ১৩ সুপারিশ

 প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :

রাজশাহী অঞ্চলের নদ-নদী ও খাল-বিল রক্ষায় সরকারের কাছে ১৩টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী নগরীর সীমান্ত অবকাশ সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা। নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তখন তিনিই ১৩টি সুপারিশ তুলে ধরেন।

সেগুলো হলো- অনতিবিলম্বে সরকারি-বেসরকারি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পদ্মা ও এর শাখা নদীগুলোকে উদ্ধার করা, পদ্মা নদীর বালু উত্তোলনে নীতিমালা প্রণয়ন এবং নদীতীর থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা, রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের ১৯টি স্লুইস গেট সচল রাখা, শহরের মধ্য দিয়ে একসময় প্রবাহিত হওয়া নদীগুলোকে দখলমুক্ত করে পদ্মার সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করা, শহরের পানি বারনই নদীতে পতিত হবার সকল বাঁধা দূর করা, ১৮৯৭ সালে খনন করা ‘নারদ’ নদ ও ‘বৈরাগী’ পুনরায় সংষ্কার করে পদ্মার সাথে সংযোগ স্থাপন করা।

এছাড়াও সুপারিশের মধ্যে আছে, পবার হরিপুর ও দামকুড়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চিনারকুপ নদীকে পুনরায় খনন করে আগের মতো পদ্মার সাথে সংযোগ স্থাপন, শহরের তরল বর্জ্যকে পরিশোধন করে বারনই নদীতে প্রবেশের ব্যবস্থা করা ও ভুগরইলবিল ও মতিয়ার বিলে তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ করা, নদীর প্রতি বৈরি আচরণের জন্য যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, পদ্মার মূল প্রবাহে সারাবছর পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা, ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ কতৃক প্রণীত আন্তর্জাতিক পানি বিষয়ক সনদে সই করা এবং পদ্মায় শুষ্ক ও ভরা মৌসুমে প্রতিদিন কী পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয় তার হিসাব জনসম্মুখে তুলে ধরা।

অন্যান্য বক্তাদের দীর্ঘ আলোচনা শেষে বক্তব্য দেন- সংসদ সদস্য সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, পদ্মা নদীতে সকল সরকারি-বেসরকারি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে রাজশাহীতে অনেক কথা উঠেছ। সরকার বালু উত্তোলনকে বাণিজ্যিকভাবে দেখাতে চায়, কিন্তু বালু উত্তোলন যেভাবে করা হয়; সেটি দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ এবং অবৈধ। নদীর তীর থেকে বালু উত্তোলন করা হয়, কিন্তু বালু উত্তোলনের মূল জায়গা হচ্ছে নদী মূল স্রোতের কেন্দ্রীয় স্থল। এটি রাষ্ট্রের একটি আইন। কিন্তু সেই আইন বাস্তবে পুরোপুরি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ অর্থ অপরাজনীতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বাদশা বলেন, এখানে বারনই নদী নিয়ে কথা এসেছে। বারনই নদীকে সরকারি সিদ্ধান্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। বারনই নদীতে যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে সেটি ভেঙে ফেলতে হবে এবং নদী প্রবাহকে স্থিতিশীল করার জন্য ও সেটিকে নদী হিসেবে পুন:প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমদের কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, এখানে ফারাক্কা বাঁধ নিয়েও কথা উঠেছে। ভারতের বিহারের মূখ্যমন্ত্রী তাদের বিধানসভায় বলেছেন, ‘ফারাক্কা বাঁধ হচ্ছে বিহারের জন্য একটি অভিশাপ’। তার কথা আমি শুনে তাকে একটি চিঠি লিখেছিলাম। চিঠিতে বলেছিলাম, আপনি যদি ভারতের পার্লামেন্টে একই বক্তব্য তুলে ধরেন, তাহলে আমাদের পার্লামেন্টেও আমরা একই বক্তব্য তুলবো। ফারাক্কা বাঁধ ভারতের জনেও অভিশাপ, বাংলাদেশের জন্যও অভিশাপ। অতএব এই বাঁধটি অপসারণ করে পদ্মার প্রবাহকে সচল রাখতে হবে।

বাদশা বলেন, আমাদের রাজশাহী শহরে উন্নয়ন হয়েছে অনেক এটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু অনুন্নয়ন হয়েছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অন উন্নয়নের মধ্যে সবথেকে বেশি যেটি হয়েছে তাহলো শহরে একের পর একটি পুকুর ভরাট করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুকুর ভরাট করার বিষয়ে আমাদের আইনগত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিন্তু সবথেকে অবাক করা বিষয় সরকারের প্রশাসন পুকুর ভরাট পড়ার বিষয়টি নিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে। আমার কাছে অনেকে অভিযোগ করেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নাকি পুকুর ভরাট করা পাহারা দেয়, তাহলে কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার কাজ করবে? আমি মনে করি এক সাইডে যে সকল পুকুর ভরাট করা হয়েছে সেগুলো দ্রুত উন্মুক্ত করা হোক।

তিনি বলেন, আমাদের পদ্মা নদীতে কোন প্রকার বর্জ্য ফেলা যাবে না। শুধু পদ্মা নদী নয় বাংলাদেশের কোন নদীতে বর্জ্য ফেলা যাবে না। বজ্র অপসারণের যেসব আধুনিক পদ্ধতি আছে সেগুলো অনুসরণ করতে হবে। আজকের সারা শহর জুড়ে দেখি ডাস্টবিন তৈরীর মহাপরিকল্পনা। ডাস্টবিন নিয়ে আমরা কী করব? বর্জ্য কে প্রকৃতির সাথে বিলীন করে দেওয়ার যে পদ্ধতি সেটি আমাদের অবলম্বন করতে হবে।

বাদশা বলেন, বাংলাদেশের এক কোটি মানুষ বাস করে। চরের এই মানুষগুলোর বিষয়টিও ভাবার সময় এসেছে। তাদের স্কুল আছে শিক্ষক নেই, রাস্তা নেই বিদ্যুৎ নেই, তাদের জীবন মান উন্নয়নে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভালো কোনো বরাদ্দ নেই। আমি মনে করি চরের মানুষদের জীবন মান উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণের উদ্যোগ জরুরি। আজকে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বাড়ছে। বর্ষা আমাদের জন্য আশীর্বাদ কিন্তু বজ্রপাত মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। এটি থেকে রক্ষা পেতে অনেক আধুনিক এবং প্রযুক্তিগত পদ্ধতি আছে সেগুলো অনুসরণ করা প্রয়োজন। তালগাছ মানুষকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করে। সেই তালগাছটি ও আজকে বরেন্দ্র অঞ্চলে কেটে ফেলে দেয়া হচ্ছে। শুধু তালগাছি নয় সব ধরনের গাছ কাটার একটি মহোৎসব চলছে। অন্যান্য সংসদ সদস্যরা কি করবেন জানি না, কিন্তু আমি রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় এক হাজার তালগাছ রোপন করার পরিকল্পনা নিয়েছি। মনে করি, তাল গাছ গুলো লাগাতে পারলে মানুষ অনেকাংশে বজ্রপাত থেকে মুক্তি পাবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সভাপতি লিয়াক আলী লিকু। মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু সভা পরিচালনা করেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নগর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান প্রমুখ।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: