ক্ষতির মুখেও টিকে থাকার লড়াই
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশের অন্যান্য খাতের মতো পর্যটন খাতেও প্রভাব পড়েছে। দীর্ঘ সময় পর্যটন বা বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় ভ্রমন পিপাসুরা এ থেকে বিরত ছিলেন। তবে করোনা পরিস্থিতি যতো স্বাভাবিক হচ্ছে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ততোই পদচারণা বাড়ছে দর্শনার্থীদের। উত্তরাঞ্চলে যে কয়টি বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারের ‘শখের পল্লী’ অন্যতম একটি।
করোনার কারণে গত বছর প্রথম বারের লকডাউনেই (মাত্র ৩ মাসে) তাদের সাড়ে ৭ লাখ টাকা ভুর্তকি গুণতে হয়েছে। তারপর কয়েক দফায় লকডাউনে বন্ধ থকার পরও ব্যক্তিগতভাবে নির্মিত এ বিনোদন কেন্দ্রটির অস্তিত্ব টেকাতে লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখেও পার্কটি চালিয়ে যাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলে ব্যক্তিগতভাবে গড়ে ওঠা উল্লেখযোগ্য বিনোদন কেন্দ্রগুলো হলো দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী, রংপুরের ভিন্নজগৎ, জয়পুরহাটের প্রিন্সের শিশু উদ্যান, নওগাঁর ডানাপার্ক, নাটোরের গ্রীনভ্যালী, বগুড়ার সান্তাহারের ফারিস্তা ও শখের পল্লী অন্যতম। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে এসব বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এরমধ্যে ব্যক্তিগতভাবে নির্মিত বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্র ‘শখের পল্লী’র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারের দেয়া নির্দেশনা মেনে গত বছরের ১৮ মার্চ প্রথমবারের মতো পার্কটি বন্ধ রাখার ঘোষণার পর আয় না থাকায় মাত্র ৩ মাসে সাড়ে ৭ লাখ টাকা ভুর্তকি গুণতে হয়েছে।
পার্কটি টিকিয়ে রাখতে ও মানবিকতার স্বার্থে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কর্মহীন হয়ে পড়া ৩০ জন কর্মচারীদের আর্থিক সহায়তা অব্যহত রাখতে হয়েছে। তাছাড়া পার্কের জীব-জন্তু আর বিনোদনের নানা রাইডস্গুলো দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্মচারীদের দেয়া হতো বেতন ভাতা। তবে ভিতরের সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলেও বন্ধ থাকায় প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। কয়েক দফায় দেয়া লকডাউনে বন্ধ রাখায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। বর্তমানে খুলে দেয়ার পরও দর্শনার্থীদের পদচারনায় পার্কটি মুখরিত না হওয়ায় এখনো ক্ষতির মুখেও টিকে থাকায় লড়াই করে যাওয়া হচ্ছে। শুধু শখের পল্লীই নয় সান্তাহারসহ আশপাশের প্রায় সকল বিনোদনকেন্দ্রর অবস্থা প্রায় একই রকম।
দর্শনার্থী আকরামুজ্জামান রনি জানান, করোনা সংক্রমন রোধে প্রায় দুই বছর ধরে আমরা ঘরবন্দী ছিলাম। বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার পর পরিবার-পরিজন নিয়ে পার্কে আসতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। অনেকদিন পর বাচ্চারা বিভিন্ন রাইডসে উঠতে পেরে খুবই খুশি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর তারা এখানে এসে আর বের হতেই চাচ্ছে না।
উপজেলার সান্তাহার শখের পল্লী’র সত্বাধিকারী ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম বলেন, শখের বসেই ‘শখের পল্লীটি নির্মাণ শুরু করি। ২০১৬ সালে শুরুর দিকে প্রায় ৪৫ বিঘা জমির উপর আনুষ্ঠানিকভাবে পার্কটি চালু করা হয়। এ পার্ক থেকে বাণিজ্যিকভাবে মুনাফা অর্জন করার চেয়ে এ এলাকার বেকারত্ব ঘোচানো আর বিনোদন প্রেমিদের চাহিদা মেটানোয় আমার মূল লক্ষ্য ছিল। করোনার কারণে কয়েক দফায় বন্ধ থাকায় প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। খুলে দেয়ার পর আবারো ফিরছে দর্শনার্থীরা। আশা করা হচ্ছে ‘করোনা পরিস্থিতি যতো ভালো হবে, বিনোদনকেন্দ্রগুলোর আয় ততোই বাড়বে।’