শিরোনাম

South east bank ad

বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে চান ডা. বোরহান উদ্দিন

 প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মো: ফেরদৌস রহমান, (আড়াইহাজার) :

'মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য! ' এই লাইন দ্বারা মানুষের পাশে সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সহনশীল হয়ে ওঠার এক আকুল মিনতিপূর্ণ আবদার ফুটে ওঠে। মানুষ চিরকাল মানুষের পাশে সহযোগী হয়ে থাকবে, এটাই তো মানুষ হিসাবে মূলধ্বনি। আবার কবির ভাষায়, " গাহি সাম্যের গান, যেখান কোনো মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নাই।" এমন হাজারো কবিতা কিংবা উপন্যাস, গল্পের পাঠে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পঙক্তি দেখা যায়। যেখানে মানুষের হয়ে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। নিজের সাধ্যমতো ক্ষুদ্র প্রয়াস দ্বারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলেই মনে প্রশান্তি আসে। ডা. বোরহান উদ্দিনও সেরকম। ছোটকাল থেকে মনের ভিতর স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন পথচলাকে। মানুষের সেবা করতে হয়েছেন ডাক্তার। সেইসাথে সদ্য ৪২ তম বিসিএস ( স্পেশাল) স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন হিসাবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। এখন স্বপ্ন তাঁর কাছে হাতছানি দেয়। নতুন করে সব শুরু করতে চান তিনি। হতে চান ' গরিবের ডাক্তার। ' আত্মনিয়োগ করতে চান মানুষের সেবায় বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে।

দেশে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ( শুক্রবার) ৪২তম বিসিএস ( স্পেশাল) স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৪২তম বিসিএস পরীক্ষাটা ছিলো শুধুমাত্র ডাক্তারদের জন্য। যারা এমবিবিএস শেষ করেছে কিংবা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্যতা রেখেছে তারা সকলেই এই পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পেরেছে। এতে অংশগ্রহণ করেছিলো দেশের প্রায় ৩১ হাজার মেডিক্যাল থেকে পড়ুয়া শিক্ষার্থী। গত ২৯ মার্চ ( সোমবার) ৪২তম বিসিএস (স্পেশাল) স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন সরকারি কর্ম কমিশন। এতে উত্তীর্ণের সংখ্যা ছিলো ৬ হাজার ২২ জন। এই ৬ হাজার ২২ জনকে পরবর্তী ভাইবা পরীক্ষার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো । গত ২৬ আগস্ট ( বৃহস্পতিবার) ৬ হাজার ২২ জনকে ধাপে ধাপে ভাইবা পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। ভাইবা পরীক্ষা শেষে ৯ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রকাশ করা হয় ৪২তম বিসিএস (স্পেশাল) স্বাস্থ্য ক্যাডারের সুপারিশ প্রাপ্তদের তালিকা। এতে ৪ হাজার জনকে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন ও স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন পদে সুপারিশ করা হয়। বাকিদের ওয়েটিং লিস্টে রাখা হয়েছে।

৪২তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে ১৮৩ তম স্থান দখল করেন রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ইন্টার্নশিপ কম্পিলিট করা নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার মানিকপুর গ্রামের কৃতি সন্তান ও মেধাবী ছাত্র ডা. বোরহান উদ্দিন। ছোটকাল থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটা মনোভাব তৈরি হতে দেখা যায় তার মাঝে। মফস্বল এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হন নিজ এলাকায় অবস্থিত চৈতনকান্দা গোলাম মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে। পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার কৃষি জমিও তদারকি করতেন। বাবা কৃষক হলেও সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন ছিলো অনেক। ছেলেকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে এমন সব উপদেশ দিয়ে গড়ে তুলেছেন তাকে। ৮ম শ্রেণিতে পড়াকালীন বৃত্তি পরীক্ষায় উপজেলাতে ১ম স্থান অধিকার করেন ডা.বোরহান উদ্দীন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়েছেন তিনি। স্বপ্ন একটাই, মানুষের পাশে নিজেকে দাঁড় করানো। ডাক্তার হয়ে সেবা করা, বাবার স্বপ্ন পূরণ করা। সেইকারণেই ২০১১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে জিপিএ ৫ পেয়ে ভর্তি হন সরকারি বিজ্ঞান কলেজে। এরসাথে শিক্ষা বৃত্তি পেয়েছেন। ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে ঢাকা বোর্ডে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পান তিনি। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন তাকে এগিয়ে নিয়েছে সবসময়। মনে গেঁথে রাখা সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সুযোগ পান রংপুর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পড়ার। সেখান থেকে ২০২০ সালে এমবিবিএস সহ ইন্টার্নশিপ কম্পিলিট করেন তিনি।

ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় আসেন তিনি। পুরোপুরি মনযোগ দেন বিসিএস পরীক্ষার জন্য। দিনরাত পরিশ্রম শেষে আশাতীত ফলাফলে এখন সরকারি ডাক্তার হয়ে গেলেন তিনি। তার স্বপ্ন গরিব মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া। তিনি হতে চান 'গরিবের ডাক্তার '। মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবসময় কাজ করতে চান তিনি।

ডা. বোরহান উদ্দিনের একান্ত সাক্ষাৎকারে জানা যায়, প্রথম প্রয়াসেই কীভাবে বিসিএস পরীক্ষায় সহকারী সার্জন হিসাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন সেই গল্প।তিনি বলেন, " ছোটকাল থেকেই অনেক স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবো। মহান আল্লাহর রহমতে তা পেরেছি। এর পিছনে আল্লাহর পর আমার বাবা আর ছোট ভাইয়ের অবদান অস্বীকার্য। তারা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছে। তাদের ইচ্ছে ছিলো ডাক্তার হয়ে মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া। তাই সেই ইচ্ছেগুলোকে পূর্ণতা দিতে পরিশ্রম করেছি। অভাব অনটন কাঁধে নিয়ে পরিবারের মুখের দিক তাকিয়ে এই সাফল্য লাভ করেছি। মহান সৃষ্টিকর্তার পর এই অর্জনের দাবীদার আমার পরিবার। এর সাথে আমাকে উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়েছেন স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটির বন্ধু-বান্ধব। তাদেরকেও কৃতজ্ঞতা জানাই। চলার পথে তারাই ছিলো আমার উৎসাহদানকারী। আমার পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র আমাকে আমার পরিবেশ গড়তে সহায়তা করেছেন। আমার এই অর্জনের পিছে মহৎ অংশীদারত্বের দাবী রাখে আমার স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটির শিক্ষাকরা।তাদের দেওয়া অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনায় আজকে আমি এই অবস্থানে। তাই সকলের কাছে আমার সামনের দিনগুলোর জন্য দোয়া চাই। যাতে করে বাকি জীবনটা মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারি। হতে পারি এক গবিরের ডাক্তার, এইটুকুই চাওয়া।"

তিনি আরো বলেন, " ডাক্তার হয়ে নিজের এলাকা আড়াইহাজারে একটা হসপিটাল খুলতে চাই। সেখানে গরিব অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে সেবা দিতে চাই। আমার এলাকার মানুষজন যাতে চিকিৎসাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য নিজেকে ক্ষুদ্র সেবাকর্মী হিসাবে দাঁড় করাতে চাই। সকলের দোয়া থাকলে এ লক্ষ্যে সফল হবো ইনশাআল্লাহ। "

নিজের পরিশ্রম, মেধা আর অধ্যাবসায় দ্বারা প্রথম চেষ্টাতেই বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন হিসাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন ডা. বোরহান উদ্দিন। স্বপ্ন মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া। এমন স্বপ্ন পূরণে যারা আগ্রহী তাদের প্রতি তার নির্দেশনা হলো আত্নবিশ্বাসী হয়ে কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনা করা। যাতে করে নিজের ভিতরে থাকা স্বপ্নগুলো পূর্ণতা পায়।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: