সিমেন্ট কারখানায় দূষিত করছে পরিবেশ
কায়সার সামির-মুন্সীগঞ্জ:
মুন্সীগঞ্জে ধলেশ্বরী নদী তীরবর্তী এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে একাধিক সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর লোডিং-আনলোডিং হয় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে। জাহাজ থেকে সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল ক্লিংকারের মাধ্যমে নামানোর সময়ে বাতাসে উড়ছে ধুলিকণা। এসব কারখানা একদিকে পরিবেশ, নদী দূষণ, অন্যদিকে মানবদেহের ফুসফুসে অনিরাময়যোগ্য সিলিকোসিস রোগের জন্ম দিচ্ছেণ। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
জানাগেছে, ধলেশ্বরী নদীর তীরে গড়ে ওঠা সিমেন্ট কারখানাগুলো বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের নীরবতায় বছরের পর বছর পরিবেশ দূষণ করে যাচ্ছে এসব সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ঠিকমতো ডাস্ট কন্ট্রোল প্রযুক্তি ব্যবহার না করায় মুক্তারপুরে অবস্থিত প্রায় ৭টি সিমেন্ট কারখানা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সালফার ও সিলিকনযুক্ত ধুলিকণা। একটি সিমেন্ট কারখানা থেকে বছরে ৫০.২ মেট্রিকটন ধুলো ছড়ায় তার চারপাশে। যার মধ্যে থাকে ক্যালসিয়াম অক্সাইড, সিলিকন অক্সাইড, অ্যাল্যুমিনিয়াম অক্সাইড, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাউড, সালফার অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড এব ধুলিকণা পিএম ০.৫। ফলে বাড়ছে, ফুসফুসের অনিরাময়যোগ্য সিলিকোসিস রোগ। সিমেন্ট তৈরীর মূল উপাদান আমদানী করা ক্লিংকার। একেকটি কারখানায় দৈনিক খালাস হয় প্রায় ৬ হাজার টন। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ উন্মুক্তভাবে হওয়ায়, দিনভর প্রচন্ড ধুলিকণা ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। এসব ক্লিংকার বাতাসে উঁড়ে গিয়ে পড়ছে নদীতে। নদীর তলদেশে ভারী আবরণ তৈরী হচ্ছে। ফলে নদীতে থাকা জলজ প্রাণীরা হারাচ্ছেন নিরাপদ অভয়ারণ্য।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, খোলা ক্রেনে করে সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে খালাস হচ্ছে ক্লিংকার। বয়লারের চিমনি থেকে ধোঁয়া আকারে বের হয়ে আসছে ফ্লাইঅ্যাশ, যা বাতাসের সঙ্গে মিশে দূষিত করছে আশপাশের পরিবেশ। মুক্তারপুর এলাকার প্রতিটা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে লোডিং-আনলোডিং হচ্ছে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে। কারখানাগুলোতে লোডিং-আনলোডিং আধুনিক ইকু হপার এবং ডাষ্ট কালেক্টর ব্যবহার করা হচ্ছেনা। খোলামেলা পরিবেশে ধুলিঝড় তুলেই তারা জাহাজ থেকে ক্লিংকার খালাস করছেন। এতে করে বাতাসের কারনে চারিদিকে ধুলিঝড়ের সৃষ্টি হচ্ছে। ক্লিংকারের ধুলো সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান এই জনপদে।
পরিবেশবিদরা বলছে, সব জায়গায় ডাস্ট কালেক্টর ব্যবহার করতে হবে। আর যেটা আমাদের চিমনি দিয়ে উঠে যাচ্ছে সেটা ধরে রাখার জন্যেও টেকনোলজি আছে সেটা ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু সিমেন্ট কারখানাগুলো সেটা ব্যবহার করে না। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে সিমেন্ট কোম্পানিগুলো। তবে মানুষের জীবন ধারণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বায়ু তথা পরিবেশের প্রতি তাঁদের বড় ধরণের উদাসীনতাও দৃশ্যমান। তাই বায়ু দূষণের ফলে একটু একটু করে নিঃশেষ হওয়া মানুষগুলোর জীবনের চাওয়া সিমেন্ট কারখানার মালিকরা যেন সত্যিকার অর্থেই তাঁদের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মোবারক হোসেন বলেন, সিমেন্ট কারখানাগুলোকে আধুনিক ইকু হপার এবং ডাষ্ট কালেক্টর ব্যবহার করার শর্তে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সেটার ব্যবহার করছেনা। তারা আমাদেরকে জানিয়ে দেশের বাইরে থেকে ইকু হপার এবং ডাষ্ট কালেক্টর আমদানি করার চেষ্টা করছে। তারা আমাদের কাছে সময় চেয়েছে। তিনি আরো বলেন, দেশের করোনা পরিস্থিতির কারনে তারা দেশের বাইরে থেকে এসব আধুনিক ডাষ্ট কালেক্টর আমদানি করতে পারছেনা। তারপরও আমরা নিয়মিত তাদেরকে পরিবেশ দূষণ রক্ষার্থে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছি। আমরা আশাবাদি সিমেন্ট কোম্পানিগুলো যথা সময়ের মধ্যে পরিবেশ দূষণ রোধে আধুনিক ডাষ্ট কালেক্টর পদ্ধতি চালু করবে।