সাড়ে ৩ কোটি টাকার চেক জালিয়াতিতে মামলা হয়নি আড়াই বছরেও
ফয়সাল আহমেদ, (গাজীপুর) :
প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার চেক জালিয়াতি করে এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সেই হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে তার বিরুদ্ধে দুদক থেকে অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ উঠে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রায় আড়াই বছর পার হলেও এখনও তার বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। বর্তমানে সে কাজ করছেন সিটি করপোরেশনের সালনা কাউলতিয়া আঞ্চলিক অফিসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ব্যাপারে দুদকের একজন সহকারী পরিচালক বিষয়টি তদন্ত করার পর অধিকতর তদন্ত করার জন্য অপর একজন সহকারী পরিচালককে দায়িত্ব দেয়া হয়। সম্প্রতি তিনিও তদন্ত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুদক সূত্র জানায়, হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ভূয়া বিল বাউচার ও নোটশিট তৈরী করে। পরে তৎকালিন মেয়র এম এ মান্নানের অসুস্থতার সুযোগে বিভিন্ন চেকে মেয়রের ফ্লেক্সোসিল ব্যবহার করে ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে সিটি করপোরেশনের কোটি কোটি টাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক টঙ্গী শাখায় নজরুলের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা করে। ওই একাউন্টে গত ১৮.১০.২০১৮ তারিখ পর্যন্ত জমা করা টাকার পরিমান ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ ৮৭ হাজার ৫৮৮.৬৪ টাকা। এ বিষয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এর সহকারী পরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলাম গত ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট চেয়ে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নামীয় সোনালী ব্যাংক লিমিটেড টঙ্গী বাজার শাখার হিসাব হতে টাকা উত্তোলনের জন্য ইস্যুকৃত চেক এর মুড়ির অংশ, উক্ত চেক ইস্যুর আদেশ/নথির নোটশীটসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নামীয় ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড বোর্ড বাজার শাখার হিসাব হতে টাকা উত্তোলনের জন্য ইস্যুকৃত চেক এর মুড়ির অংশ, উক্ত চেক ইস্যুর আদেশ/নথির নোটশীটসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র, গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত কাজের বিপরীতে ঠিকাদার মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজের অনুকুলে ইস্যুকৃত সোনালী ব্যাংক লিমিটেড টঙ্গী বাজার শাখার হিসাব হতে টাকা উত্তোলনের জন্য ইস্যুকৃত চেক এর মুড়ির অংশ, উক্ত চেক ইস্যুর আদেশ/নথির নোটশীটসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সহ আরো কতগুলি নথি চাওয়া হয় । এসব নথি গত ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টার মধ্যে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট জমা দিতে বলা হয় । এ ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত মোঃ নজরুল ইসলামকে ২০১৯ সালের ৮ জুলাই সাময়িক বরখাস্ত করেন (জিসিসি/প্রশাসন/সাধারন/২০১৯৪৮৯)। অন্যদিকে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তদন্ত করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট পেশ করেন।
এদিকে বিষয়টি আরো অধিকতর তদন্ত করতে দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ রাশেদুল ইসলামকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে দুদকের প্রধান কার্যালয় । চলতি বছরের ৭ মার্চ একটি পত্রে (স্মারক নং ০০.০১.২৬০০.৬১৩.০১.০০১.১৯.৮৪১৯) সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে উক্ত কর্মকর্তার নিকট আরো কিছু তথ্য ও নথি সরবরাহ করতে বলা হয়। এছাড়া ২৯ মার্চ উক্ত কর্মকর্তার নিকট অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম ও সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোঃ ছায়েদুর রহমানকে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সিটি করপোরশেন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একটি সূত্র জানায়, হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সমস্ত নথিপত্র তদন্ত করে রিপোর্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দেওয়া হয়েছে। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ তারাই গ্রহন করবেন।
এদিকে সাময়িক বরখাস্তকৃত নজরুল ইসলাম সিটি করপোরেশনের কাউলতিয়া আঞ্চলিক অফিসে নিয়মিত কাজ করছেন। এত টাকা আতœসাত করার সব প্রমান থাকা সত্বেও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক কোন মামলা না হওয়ায় অনেকেই হতবাক। বর্তমানে সে টাকা আতœসাতের বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে উপর মহলে নানা চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে । সিটি করপোরেশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নজরুলের নামে বেনামে অনেক ফ্ল্যাট ও সম্পদ রয়েছে। দুদুক তদন্ত করলে এসব বিষয়ও বেরিয়ে আসবে।
এসব বিষয়ে নজরুল ইসলামের সাথে মোবাইলে এ প্রতিবেদক কথা বললে তিনি জানান, মোবাইলে এসব বলা সম্ভব না, আপনি সরাসরি আমার সাথে দেখা করুন। বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কর্তৃপক্ষ যেটা ভাল মনে করেছে, আমি সেটাই মেনে নিয়েছি। ভবিষ্যতেও আমি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অভিযোগের ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে সে কাজ করে কিনা বিষয়টি জানা নেই। বরখাস্তের পর থেকেই তার বেতন ভাতা দেয়া বন্ধ রয়েছে।