শিরোনাম

South east bank ad

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী বিশ্বজিৎ জাতিকে কলঙ্কের দায় থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন

 প্রকাশ: ২০ অগাস্ট ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মো. আবু জুবায়ের উজ্জল, (টাঙ্গাইল) :

ময়মনসিংহ নাছিরাবাদ কলেজের বিএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র বিশ্বজিৎ নন্দী। সেই সময় তার মুখে একটাই আওয়াজ শেখ মুজিবের মুক্তি চাই। কখন যে বঙ্গবন্ধু তার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে তা টেরও পাননি। শেখ মুজিবের প্রতি তার অগাধ ভালবাসা সৃষ্টি হয়। তার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেন। হঠাৎ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় ষরে বসে না থেকে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে গঠন করেন, জাতীয় মুক্তিবাহিনী আর সেই বাহিনীতে একজন গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে যোগ দেন বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে। তিনি মনে করেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে জাতিকে কলঙ্কের দায় থেকে মুক্ত করতে হবে।

তৎকালীন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জাতীয় মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রতিটি ভয়াবহ মুহূর্ত কথা তুলে ধরে ‘বিডিফিনানন্সিয়ালফনিউজ’ কে জানান, ১৯৭৬ সালে আগস্টে বঙ্গবন্ধুর ১ম মৃত্যবার্ষিকীতে এই বাহিনীর পক্ষ থেকে সারা দেশে হরতাল ডাকা হয়। বিভিন্ন দল, উপদলে বিভক্ত হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা ছয়জন ১৪ আগস্ট মুক্তাগাছার একটি বাড়িতে আশ্রয় নেই। খবর পেয়ে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আমাদের ঘিরে ফেলে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। তখন আমার টিমের বাকি পাঁচজনকে জিজ্ঞেস করলাম আমরা আত্মসমর্পণ করব কি-না? তখন সবাই বলল, আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করছি। আমাদের আত্মসমর্পণে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা হবে, আমরা আত্মসমর্পণ করব না। মাত্র দুই মিনিটের ভিতরেই যুদ্ধের একটা পরিকল্পনা করলাম, কে কোন জায়গায় পজিশন নেবে। আমরা মাত্র ছয়জন ছিলাম। আমাদের প্রত্যেকের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও তিনটা করে গ্রেনেড ছিল। আমাদের একজন একটা গ্রেনেড ছুড়ে মারল। গ্রেনেড ছোড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো গুলি শুর হলো। তিনজন ঘরের বাইরে গিয়ে পড়লেন, আমরা তিনজন ঘরের ভিতর পজিশন নিলাম, এই পজিশন নেওয়ার মধ্যেই মফিজ ভাইয়ের উরুতে গুলি লাগে। তখন মফিজ ভাই ধীরে ধীরে বসে পড়লেন। আমি তখন আমার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে। তখন বুঝতে পারলাম আমার হাতে গুলি লেগেছে। ৪ ঘন্টা গুলি বিনিময়ের পর আহত অবস্থায় আমাকে গ্রেফতার করে। সেই সময় ভেবেছিল আমি মৃত্যু এই ভেবে আমিসহ সবাইকে গাড়ীতে তোলে, তোলার সময় তারা দেখেন আমি বেচেঁ আছি। এই যুদ্ধে আমার সহযোদ্ধা জুবেদ আলী, সুবোধ ধর, দীপাল দাস, মফিজ উদ্দিন ও নিখিল নিহত হয়।

বিশ্বজিৎ নন্দী ‘বিডিফিনানন্সিয়ালফনিউজ’ কে আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত অবস্থায় ময়মনসিংহ হাসপাতালে আমার সাত দিন চিকিৎসা চলে। সেখান থেকে ময়মনসিংহ সেনা ক্যাম্পে নিয়ে দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুই দিন পর টাঙ্গাইল সেনা ক্যাম্পে। তারপর সোজা ঢাকা সেনানিবাসে। সব মিলিয়ে প্রায় চার মাস ছিলাম সেনা হেফাজতে। নানা ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছে। পরে ৬ ডিসেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হস্তান্তর করা হয়। তার কয়েকদিন পরেই আমাকে ২ নং বিশেষ সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়েছে। ১৯৭৭ সালের ১৮ মে বিশেষ সামরিক আদালতে আমার ফাঁসির রায় হয়। আমাকে রাখা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে।

বিশ্বজিৎ নন্দী মুক্তির বিষয় নিয়ে বলেন, চার দফা ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত উদ্যোগ নিয়েও মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির আদেশ কার্যকর না করার এবং সেই সাথে মুক্তির দাবিতে সারাদেশে তুমুল প্রতিবাদ সংগঠিত হয়। শেষে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হস্তক্ষেপে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জোরালো প্রতিবাদের বেঁচে যাই।

বিশ্বজিতের কাছে নিহত পাঁচজন সহযোদ্ধদের পরিবারের খবর জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহ মুক্তাগাছা উপজেলার গোবিন্দপুর। আমি বর্তমানে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় প্যাডাইস পাড়ায় থাকায় আমার সহযোদ্দাদের পরিবারের খবর ঠিকমত নিতে পারছি না। তাছাড়া তাদের কথা আমার মনে হলে শরীরের লোম শিহরে উঠে। জুবেদ আলী, সুবোধ ধর, দীপাল দাস, মফিজ উদ্দিন ও নিখিল আমরা সবাই ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা,ধরগ্রাম, ফুলবাড়ী, কৃজ্ঞনগরের সন্তান।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: