শিরোনাম

South east bank ad

হুমকির মুখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী

 প্রকাশ: ১৭ অগাস্ট ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

শামসুল আলম স্বপন, (কুষ্টিয়া) :

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী ও পাশ্ববর্তী এলাকা সংরক্ষণের লক্ষে পদ্মা নদীর ডানতীর সংরক্ষণ প্রকল্প কাগজে কলমে রয়েছে । কিন্তু বাস্তবে কুঠিবাড়ীর প্রধান অংশে কোন নেই বাঁধ। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কুঠিবাড়ীসহ আশেপাশের অন্তত ছয়টি গ্রামের বাসিন্দারা। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৮ অর্থবছরে কুঠিবাড়ী ও পাশ্ববর্তী এলাকা সংরক্ষণে প্রায় ১৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৭২০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তন্মধ্যে কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর অংশে দুই হাজার ৭২০ মিটার এবং শিলাইদহ অংশে এক হাজার মিটার।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশব স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ীটি পদ্মানদী সংলগ্ন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে অবস্থিত।

এলাকাবাসী জানায়, প্রকল্পের নামে রয়েছে কুঠিবাড়ী রক্ষাবাঁধ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কুঠিবাড়ীর প্রধান অংশের দেড় কিলোমিটার বাদ রেখেই কাজ সমাপ্ত করে। এতে প্রতিবছরই বর্ষায় পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পাই ভাঙন। হুমকিতে থাকে কুঠিবাড়ী, কোমরকান্দি, কান্দাবাড়িয়া, জাহেদপুর, বেলগাছিসহ আশপাশের অন্তত ছয়টি গ্রামের বাসিন্দারা।

সরেজমিনে এলাকাবাসী আরো জানায়, বর্ষার শুরুতে নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। মাঝে মাঝেই বৃষ্টি আর বাতাস বয়ছে। এতে কোমরকান্দির জালাল সর্দারের বাড়ি থেকে জলা প্রামাণিকের বাড়ি পর্যন্ত ভেঙে পড়ছে নদীর পাড়। ভাঙনের আতঙ্কে জীবন পার করছেন পদ্মাপাড়ের মানুষ।
এ বিষয়ে পদ্মাপাড়ের মাহতাব উদ্দিন শেখের ছেলে উম্মত আলী বলেন, পনের শতক জমি ছিল। ভাঙতে ভাঙতে আর সাত শতক আছে। এবারও ভাঙন লেগেছে। ভেঙে গেলে এবার আর কিছুই বাকী থাকবে না।

আব্বাস আলী (৬৫) বলেন, ঘরের পিছনে আর একহাত জায়গা আছে। আমরা গরিব মানুষ। কোথাও যাওয়া জাগা নাই। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, যেন একটা বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

ভুক্তভোগী জালাল সর্দার বলেন, ভাঙনের জন্য দুইবার ঘর সরিয়ে নিয়েছি। আবারও নদী ভাঙতে ভাঙতে ঘরের কিনারে চলে এসেছে। গরীব মানুষ বারবার ঘর সরানোর টাকা কই পাব। কুলসুম বেগম বলেন, পানির শব্দে রাতে ঘুম হয় না। কখন যেন ভেঙে চলে যায়। একটি বাঁধ নির্মাণ করা হলে আমরা বেঁচে যেতাম।

এ বিষয়ে শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান তারেক বলেন, প্রতি বছরই পদ্মায় ভাঙন লাগে। এবার ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধ না করা হলে হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি, ঘর-বাড়ি সহ ৬টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, কুঠিবাড়ী প্রতিরক্ষা হিসেবে প্রায় চার কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু কুঠিবাড়ীর প্রধান দেড় কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ না হওয়ার ফলে হুমকির মুখে কুঠিবাড়ী।

শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর কাস্টোডিয়ান মোঃ মুখলেছুর রহমান বলেন, পদ্মানদী থেকে কুঠিবাড়ীর দূরত্ব মাত্র কোয়ার্টার কিলোমিটার দুরে। কুঠিবাড়ীর প্রধান অংশে বাঁধ নির্মাণ হয়নি। এতে হুমকির মুখে রয়েছে কুঠিবাড়ী। কুঠিবাড়ী রক্ষা করতে না পারলে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, কুঠিবাড়ী একটি ইতিহাসের নাম। রাষ্ট্রীয় সম্পদ। যেকোন উপায় কুঠিবাড়ী রক্ষা করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আফছার উদ্দীন বলেন, বাঁধ নির্মাণের সময় কুঠিবাড়ী এলকায় কোন ঝুঁকি ছিলো না। পরবর্তীতে সেখানে ঝুঁকি বেড়েছে। নতুন করে বাঁধ নির্মাণের জন্য একনেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই বাঁধ নির্মাণ করা হবে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: