শিরোনাম

South east bank ad

পঞ্চগড়ে পাল্টে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহলের দৃশ্যপট

 প্রকাশ: ১৭ অগাস্ট ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মোঃ লিহাজ উদ্দিন, (পঞ্চগড়) :

প্রায় ৬৮ বছরের দুঃখ কষ্ট ও বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতের পর ঐতিহাসিক ইন্দ্রিরা-মুজিব চুক্তির আলোকে বাংলাদেশে ও ভারতের মধ্যে বিনিময় হয় ১৬২টি ছিটমহল। এর মধ্যে পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় অবস্থিত ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের ভূখন্ডের সাথে একীভূত হয়। ছিটমহল বিনিময়ের সময় কিছু লোক ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে ভারতে চলে গেলেও অধিকাংশই রয়ে যায় বাংলাদেশে। বাংলাদেশী ভূখন্ডে যোগ হয় ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর জমি। ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি মিলে লাখো মানুষের।

এরই মধ্যে কেটে গেছে ছয়টি বছর। এই কয়েক বছরের মধ্যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকার। ছিটমহল বিনিময়ের পরই পিছিয়ে পড়া ছিটমহলবাসীদের উন্নয়নে সরকার হাতে নেয় ব্যাপক পরিকল্পনা। ছিটমহলগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হয়। পঞ্চগড়ের ৩৬টি ছিটমহলের প্রায় ২০ হাজার মানুষের জন্য সরকারি উদ্যোগে গত ছয় বছরে দেওয়া হয়েছে ঘরে ঘরে বিনামুল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ। এখন সন্ধ্যার নামার সাথে সাথে এখন প্রতিটি বাড়িতে জ্বলছে আলো। শিক্ষা বিস্তারে তিনটি কলেজসহ ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক, পুলিশ ফাঁড়ি, ভূমিহীনদের জন্য গুচ্ছগ্রাম, মন্দির ও মসজিদ, মাদ্রাসা, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির সহায়তা দেয়া হচ্ছে বিলুপ্ত ছিটমহলের নাগরিকদের। ছয় বছর আগে বর্ষায় যে রাস্তাগুলোতে মানুষ চলাচল করতে পারতো না সেসব ভাঙ্গা রাস্তাগুলো এখন পাকা সড়ক। রাস্তার দুপাশে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে গৃহহীনদের দেওয়া হয়েছে পাকা ঘর। গত ৬ বছর আগে যাদের ছিলনা নাগরিক অধিকার আজ তারা পেয়েছে নাগরিকত্ব। পেয়েছে স্মার্ট কার্ড। চিকিৎসার জন্য এখন আর আর মিথ্যে পরিচয় দিয়ে দেশে ঢুকতে হয়না। স্বাস্থ্যসেবার জন্য তাদের গ্রামেই হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। বেকার ও স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। ফলে পাল্টে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহলের দৃশ্যপট।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব শালবাগান গ্রামের বাসিন্দা আনার আলী (৮৫) বলেন, মুক্তির ছয় বছরে সরকার আমাদের সব কিছু দিয়েছে। অন্ধকার থেকে মুক্তি দেয়ার পর আমাদের বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ দিয়ে আমাদের আলোকিত করেছেন। পথচলার রাস্তা পাকা করে দিয়েছেন। আমরা যা কিছু চাইনি তাও পেয়েছি। আর কিছু চাওয়ার নেই।

বাংলাদেশ-ভারত বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার সভাপতি মফিজার রহমান বলেন, বর্তমান সরকার ছিটমহল বিনিময়ের পর আমাদের নাগরিকত্ব দিয়েছে। সরকার আমাদের বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। ছিটমহল বিনিময়ের আগে বাংলাদেশের ভূয়া ঠিকানা দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করতে হয়েছিল। আর ছিটমহল বিনিময়ের পর বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়েছে। হাজার হাজার ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এরই মধ্যে দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়া হলেও বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও এমপিওভূক্ত হয়নি। তিনি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি জোড় দাবি জানান।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দিনের পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠিকে সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে জনশক্তিতে রুপান্তর করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য নির্মান করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পাকা ঘর। তিনি বলেন, মূল ভূখন্ডের মানুষ যেসব সুযোগ সুবিধা পায় তাদের জন্য তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: