হাসপাতাল রোগীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে রিপ্রেজেন্টেটিভদের টানাটানি
মোঃ রাজু খান, (ঝালকাঠি) :
ঝালকাঠি জেলার সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল। এখানে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একাধিক স্থানের দেয়ালে নোটিশ লিখে দেয়। কিন্তু এসব বিধি নিষেধ মানছে না ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে এবং ওষুধ বিতরণ কেন্দ্রের পাশে দাড়িয়ে রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে স্মার্ট ফোনে ছবি তোলে এরিস্টোফার্মা ওসুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি চিন্ময়। পুরুষ রোগীদের থেকে প্রেসক্রিপশন না নিয়ে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা মহিলা রোগীদের প্রেসক্রিপশনের দিকে টার্গেট বেশি ছিলো। ঘন্টাখানেকের মধ্যে অর্ধশত রোগীর প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলেন তিনি।
হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেয়া প্রেসক্রিপশন নিয়ে বের হতেই রোগীর হাত থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে শুরু হয় ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের টানাটানি। রোগীর হাত থেকে প্রেসক্রিপশন টান দিয়ে নিয়ে স্মার্ট ফোনে তোলা হয় ছবি। টানাটানি করতে গিয়ে ব্যবস্থাপত্র ছিড়েও ফেলছে এমনটিই অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনদের। এতে করে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে রোগীরা।
ডাক্তার দেখাতে গিয়ে রোগীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হতেই এক দল ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ এসে ঘিরে ধরে রোগী ও রোগীর স্বজনদের। ডাক্তারদের দেয়া ব্যবস্থাপত্র টানাটানি করে ছবি তুলতে থাকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালসহ প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ল্যাব ও ওষুধের দোকানগুলোতে, ডাক্তারদের চেম্বারের বাইরেই নানা ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দঁাড়িয়ে থাকে। রোগী বের হওয়া মাত্রই তাদের কাছ থেকে টানাটানি করে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ছবি তুলতে থাকে। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে রোগীরা। অনেক সময় একাধিক রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে ব্যবস্থাপত্র পরিবর্তনও হয়ে যাচ্ছে। টানাটানি করে অনেক সময় ব্যবস্থাপত্র ছিঁড়েও ফেলছে। ওষুধের দোকান গুলোও একই অবস্থা চোখে পড়ে।
একটি সূত্রে জানা যায়, ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা চিকিৎসকদের দামি দামি উপহার দিয়ে থাকেন। এসব দামি উপহার বদৌলতে চিকিৎসকদের বাধ্য করা হচ্ছে তাদের কোম্পানির ওষুধ লেখাতে। ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের প্রদানকৃত দামি দামি উপহারের কারণে নিম্নমানের ওষুধ চিকিৎসকরা লিখে দিচ্ছেন কিনা এমনটি আশঙ্কা করছেন সচেতন ও বিজ্ঞমহল।
চিকিৎসা নিতে আসা আয়েশা খাতুন, মর্জিনা ও স্বপ্না আক্তারসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী রোগী বলেন, ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হতেই হাসপাতালের মধ্যে এবং বাইরে তিন চার জন লোক আমার দিকে এগিয়ে এসে ব্যবস্থাপত্র দেখতে চায়, তা দেখাতে আগ্রহী না হয়ে চলে যেতে চাইলে, জোর করে সামনে দঁাড়িয়ে প্রেসক্রিপশন টেনে নিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে ছিঁড়েও ফেলে। চিকিৎসা নিতে এসে এমন নাজেহাল হওয়া মোটেই আশা করিনি।
ওষুধ কোম্পানির বেশ কয়েকজন রিপ্রেজেন্টেটিভদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, অফিস থেকে নির্দেশনা আছে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে অফিসে পাঠানোর। ব্যবস্থাপত্রে নিজ নিজ কোম্পানির ওষুধের নাম ও থাকতে হবে। ছবি তুলার টারগেটও দেওয়া থাকে, টারগেট পূরণ না হলে বসদের গালিগালাজ শুনতে হয়। এছাড়া সপ্তাহে ও মাসে কোম্পানির সার্ভে থাকে তাই আমাদের বাধ্য হয়েই এ বিষয়ে সোচ্চার থাকতে হয়।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবুয়াল হাসান বলেন,এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে।