এমপি থাকেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছোট্ট ঘরে
সাবেক দুইবারের সাংসদ ময়মনসিংহ ১০ এনামুল হক জজ মিয়ার একটি জবানবন্দি।
I was in power. I failed to apply my strength properly. I was not out of human character. Today I am tired. I need a little space in my last life. As an old citizen of the state, I want the assurance of food.
(আমি ক্ষমতায় ছিলাম। আমি আমার শক্তিটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি মানুষের চরিত্রের বাইরে ছিলাম না। আজ আমি ক্লান্ত। আমার শেষ জীবনে আমার একটু জায়গা দরকার। রাজ্যের একজন প্রবীণ নাগরিক হিসাবে আমি খাবারের নিশ্চয়তা চাই)।
ইংরেজি ভাষায় স্পষ্ট উচ্চারণে
কথা গুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ১০ আসনের গফরগাঁও সাবেক দুইবারের এমপি (জাতীয় পার্টি) এনামুল হক জজ।বয়স ৭৫ বছর। জজ মিয়ার দাদা ছিলেন কাজী হালিম উদ্দিন।
তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, বহুভাষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, মুসলিম রেনেসাঁর একজন অগ্রদূত আলেম, সরকারি চাকরিজীবী, সমাজকর্মী ও স্থানীয় মুসলমান তালুকদার স্থানীয় হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনের নিকট সম ভাবে শ্রদ্ধেয় ও সমাদৃত। এই মহৎ লোকটি ১৯২৮ সালে পরলোক গমন করেন।
বাবা ছিলেন আব্দুস ছালাম।গফরগাঁও ইসলামিয়া সরকারি হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দাতা অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য(জমির পরিমাণ ৫২ শতাংশ)
ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অন্যতমদের মধ্যে প্রথম এমএ।
কাজী হালিম উদ্দিন ও ছালাম স্যার কে নিয়ে অন্য কোনদিন বলা যাবে।
জজ নামটি আমার বাবার আদরের দেয়া নাম।বংশে কোন উচ্চ শিক্ষিত এবং বড় অফিসার ছাড়া পরিবারে খুব কম সদস্য রয়েছে। ছাত্রজীবনে আর দশজনের মতই পরিবারের শাসনে বড় হয়েছি।ছাত্র হিসেবে শিক্ষকদের কাছে ভালো ছাত্রের তালিকায় প্রথম ছিলাম।বাবা বলতেন তোমার শিক্ষাগুরু এবং দীনহীনদের সাথে কখনও খারাপ আচরণ করো না।
মা বলতেন একতাই বলীয়ান।সমাজের যারা সম্মানীও তাদের কখনও অসম্মান করবেনা।তাহলে মানুষ হবে।
আমি মানুষ হয়েছি কিন্তু মানুষের পরিপূর্ণ রূপে নিজেকে মেলে ধরতে পারিনি।বাপ দাদা ছিলো শিক্ষার বাতিঘর। বাবা-- আপনি বিশ্বাস করেন আমার কাছে কোন প্রকৃত আদর্শিক শিক্ষক সম্মান হারায়নি যারা হয়েছে তারা শিক্ষক নাম দারি শিক্ষার ব্যবসায়ী।
আমার পরিবার কোন রাজনৈতিক পরিবার নয়,তবে ৭১'এর জিশুকে পছন্দ করতেন আমার পরিবারের অনেক সদস্য।আমি পাকিস্তানে ক্যাডেট হিসেবে অধ্যয়নরত।হঠাৎই পূর্বপাকিস্তান স্বদেশ থেকে আসা এরশাদের সাথে আপ্যয়ন কালে পরিচয় হয়।
পরবর্তী অনেক সময় পেরিয়ে যায়।
আমি চলে আসি আমার প্রিয় মাতৃভূমি পূর্ববাংলায়।এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালি যুদ্ধ যুদ্ধ সাজে সজ্জিত। জিশুর স্বাধীনতার ডাকে সেদিন আমার নাকে বারুদের গন্ধ আসলো।পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচার আরো চরমে।দেশের সব যুবক পালিয়ে যাচ্ছে ভারতে।আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মত ৮জনের একটি দল নিয়ে চলে যাই ভারতের মেঘালয়ে।
সেখান থেকে একমাস পরে ফিরে আসি কিশোরগঞ্জের ফুলতলাতে।নির্দেশ আসে হোসেন পুর হয়ে নদী পেরিয়ে গফরগাঁও অপারেশন।একটি বাজারের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কখনও রাস্তায় কখনও বাড়ি ঘরের ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাই।গন্তব্য কালীবাড়ির (বতর্মান গফরগাঁও ইমাম বাড়ি) কাছে একটি পাট ক্ষেতে এসএলআর বিনিময় হবে বিকেল ৪টায়।সময়মত চলে আসি হোসেন পুর হয়ে নদী পেড়িয়ে । আকাশ কালো হয়ে আসলো। ভারি বর্ষণের অপেক্ষায় ছিলাম। ব্যাগে লাড়ু ছিলো। পেটে কিছুই পড়েনি ১৮ ঘন্টা ধরে।
লাড়ু মুখে দিতেই ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি আমাকে কাক ভেজা করে দিলো।হেঁটে চলে আসি গন্তব্যে।এদিকসেদিক তাকিয়ে দেখলাম একদল হাঁস ছাড়া কেউ নেই।বৃষ্টি যেন আমাকে শেষ গোসল দিচ্ছে।সময় পেরিয়ে সন্ধ্যা নামে।বৃষ্টির শক্তি লোপ পায়।
হঠাৎ দেখি ১০থেকে ১২বছরের একটি ছেলে আমাকে ইশারায় ডাকছে।কাছে গেলাম।একটি চিরকুট হাতে দিয়ে ছেলেটি উধাও। লেখা ছিলো তাড়াতাড়ি কেটে পড়ো।সমস্যা আছে।নতুন জায়গার কথা লেখা ছিলো।আগামীকাল সন্ধ্যায় চলে আসবে।তড়িৎ ভেবে নিলাম পরিবারের সদস্যদের সাথে কতকাল দেখা হয়নি।
অন্ধকারে বাসায় চলে আসলাম।আমাকে দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেলো।আমাকে লুকানোর চেষ্টা চলছে।আমি বললাম ভাত দাও খেয়ে ঘুমাবো।খাওয়ার পর মনে হলো বহু রজনীর ঘুম ভর করেছে চোখে।ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম ভেঙ্গে গেলো হৈচৈ শব্দে।সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেলাম। পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়লাম।
চোখ বাঁধা হলো।রাইফেলের আঘাত মাথায় পড়লো।আর মনে নেই।যখন জ্ঞান ফিরে আসলো দেখলাম আমি গফরগাঁও ডাক বাংলোর আম গাছে ঝুলে আছি।হাত দুটো মনে হচ্ছে এখনি দড়ির সাথে ছেড়ে পড়বে।আমি একটু পানি চাইলাম।মনে হলো ঠোঁটের মাঝে নুনতা কি যেন।ব্লেডে আমার শরিরের চামড়া কেটে দেয়ার যন্ত্রণায় অস্থির সাথে লবণ। আবার জ্ঞান হারালাম।শেষ রাতে আমাকে ঝুলানো থেকে নামানো হলো।কানে ভেসে আসলো এটা মৌলানা সাহেবের লোক? আমাকে ছেড়ে দেয়া হলো।যিনি আমাকে ছাড়িয়েছেন তাঁর কাছে জীবন বাঁচানোর জন্য আমার পরিবার কৃতজ্ঞতা জানালেন।
তিনি পাঁচবাগ ইউনিয়নের মৌলানা।যিনি কোন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তাঁর নাম আমি বলবো না মায়ের নিষেধ ছিলো।শরিরের মাংসে প্রচন্ড ব্যথায় চিৎকার করছিলাম।হঠাৎ সেই ছোট ছেলেটিকে দেখলাম।আবার উধাও হয়ে গেলো। মৌলানার খবর আসলো ছেলেকে এখান থেকে পাঠিয়ে দিন তা না হলে আবার নিয়ে যাবে।আমাকে বের করে দেয়া হলো কিছু খাবার দিয়ে।শরিরে তখন একশ'রও ওপরে জ্বর।
(আর বলতে ভালো লাগছেনা বাবা।চা খাওয়াও।)
তারপর আরো অনেক কিছু।দেশ স্বাধীন হলো।আগেই বলেছি আমার পরিবার কোন রাজনৈতিক পরিবার নয়।আমি কিন্তু আমার স্ত্রীর কারণে জাতীয়পার্টি থেকে নমিনেশন পেয়ে গফরগাঁও এর এমপি হই।আমার পরিবারের কোন মানুষ চায়নি এমনটি হোক।
আমার বড় ভাই একজন দারুণ রকম ভদ্রলোক এবং সততাই ছিলো যার ধর্ম।আমার আরেক ভাই সু সাহিত্যিক বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য,এডভোকেট,ইংরেজি পত্রিকার সাংবাদিক, ডাবল এমএ, গফরগাঁও ইসলামিয়া সরকারি হাই স্কুলের সেরা শিক্ষকদের একজন (তিনি খুব সরল সোজা ভিতু প্রকৃতির মানুষ)সাজেদুল হক খোকা।
পরে আমি এবং ছোট ভাই চাঁন মিয়া।ভাইদের মধ্যে আমিই বেঁচে আছি হয়তো জীবনের মানে বুঝতে।আমার ভাতিজারা সবাই সু শিক্ষিত।
আমার ছোট ভাইয়ের ছেলেটি মেজিষ্ট্রেট হয়েছিলো। ঘুষ নিতে হবে জেনে চাকুরী ছেড়ে দেয়।এটা তাঁর স্বাধীনতা।
আমি এমপি হলাম।কত অচেনা মানুষ আপন হলো,কত চেনা মানুষ পর হলো।আমার চারদিকে এত লোক যেন আমি কোন রাজ্যজয় করে ফিরেছি।চাওয়ার আগেই যেন সব হচ্ছিলো।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাই লোকে লোকারণ্য।
আমার পরিবারের লোকজন খুব বিরক্ত আমার প্রতি।ভাবলাম পরিবার থেকে একটু দুরে সরে যাই।ইসলামিয়া হাই স্কুলের একটি রুমে আমি থাকতাম।মানুষ আমাকে ঘিরে রেখেছে চারদিক থেকে।একটু দূরে কি হচ্ছে আমি দেখতে পেতাম না।মানুষের অভিযোগ, অনুযোগ আসতে থাকে আমার কাছে।
প্রথম দিকে এইসব সামাজিকতা বিচার শালিসি আমার জন্য কষ্টকর মনে হতো। মনে হতো এখানে মানুষের কমতি আছে।আমি অনেক মানুষের ভীড়ে একজন মানুষ খুঁজে পেলাম না।নষ্টরা যেন আমাকে অক্টোপাসের মত গিলে ফেলছে।
দেখলাম এদের প্রতিহত করা জরুরী।আমি শয়তান শাসন করেছি নষ্ট কন্ঠে।মানুষ শাসন করিনি কখনও।আপনারা বিশ্বাস করুন,আমি একজন মন্ত্রীর যোগ্যতার চেয়ে বেশী শক্তি প্রয়োগ করেছি কিছু অমানুষের উপর।
আমার কাছে সহজে ভালো মানুষ আসতে পারেনি কিছু অমানুষের জন্য।যারা আমার পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে তাদের সহযোগিতা করেছি দুহাত ভরে।গফরগাঁওয়ের মাটিতে এখনও অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকতে পারেন তাদের আমি চিরকুট লিখে চাকুরী দিয়েছি।আমি এর কোন বিনিময় নেয়নি।
নিয়েছে আমার চারপাশে থাকা কিছু স্বার্থপর মানুষ।যারা আমার নাম দিয়ে অনেক অপকর্মে নাম লিখিয়েছে।আমি বহু গরিব মেধাবীদের চাকুরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি যারা হয়তো আমাকে ভুলে গিয়েছেন।
আমি বুঝতাম আমার সাথে আমার পাশে থাকা নেতারা অনেকেই তখন আঙ্গুলফুলে কলা গাছ।
অনেক বড় বড় মন্ত্রীরা আমাকে দেখলে সমীহ করতো।কেন করতো সেটা আমি জানি।আমি গফরগাঁও উপজেলায় দুইদিনের চেষ্টায় রাষ্ট্রপতির আসার ব্যবস্থা করেছিলাম এবং তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একমঞ্চে দাড়িয়ে সরকারি করণের ব্যবস্থা করেছি।
ক্লাব,মসজিদ,মাদ্রাসা,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কে আমি দিয়েছি দুহাত ভরে।
মনে পড়ে একজন বৃদ্ধা আমার জন্য দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।আমি তাকে প্রশ্ন করলাম কি চাই? মনে হলো তাঁর কন্ঠস্বরের কোথাও আটকে গেছে।একটু দম নিয়ে বললো, বাবা আমি খুব দরিদ্র মানুষ।আমার ছেলেটাকে খুব কষ্ট করে বিএ পাশ করিয়েছি।একটা কর্মের ব্যবস্থা করে যদি দিতেন।আমি লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সহজ সরল মানুষ।
আমি এই লোকটিকে প্যাভিলিয়নে বসিয়ে কোন স্কুলের প্রধান কে ডেকে বললাম এর ছেলে আপনার স্কুলে শিক্ষকতার ব্যবস্থা করে দেন।প্রধান শিক্ষক বললো আমার স্কুলে পদ খালি বা শূন্য পদ নেই স্যার।কিন্তু আমি জানতাম শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষক,সভাপতি মিলে অন্যকারো সাথে চুক্তি করেছে টাকার বিনিময়ে।
এই স্কুলের সভাপতি,প্রধান শিক্ষককে আমি পেদিয়েছিলাম একটু বেশি।চাকুরী হলো দরিদ্র পিতার সন্তানের।এটা কি আমার ভালো কর্ম ছিলো?তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি করেছি এটা কি আমার ভালো কর্ম ছিলো?আমি কমপক্ষে পাঁচশত বেকার যুবক যুবতিকে সরকারি, বে-সরকারি চাকুরী দিয়েছি এটা কি আমার অন্যায় ছিলো?
টাকার শক্তির কাছে আমি হেরে গিয়েছিলাম।কারণ আমার টাকার লোভ ছিলো না।আমাকে ব্যবহার করে অনেকে পারিবারিক সুবিধা সহ টাকার পাহাড় করেছে।দিনশেষে আমার হিসেবের খাতা শূন্য।আমার বন্টনের শেষ ১২ শতক জায়গা মসজিদ কে দান করেছি।আর কিছু নেই আমার।
এখন রাজনীতির মূল নেতারা হলেন ব্যবসায়ী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের এশিয়া ডায়ালগে প্রকাশিত ‘মানি পলিটিকস অ্যান্ড দ্য স্ট্রাকচারাল পাওয়ার অব বিজনেস ইন দ্য পলিটিক্যাল ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক নিবন্ধে উঠে আসে, আশির দশকের মাঝামাঝিতে এসে দেশের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে নতুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায় হয়ে ওঠেছে অর্থের রাজনীতি।
অর্থ হয়ে ওঠে দলীয় নীতিমালা এবং স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। নব্য ধনীদের জন্য দলীয় কমিটি ও বিশেষ করে সংসদে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখলের সুযোগ করে দেয় টাকা।
আমি এমন সব অবস্থান থেকে শুধু টাকার জন্য মেলে ধরতে পারিনি নিজেকে।কারণ আমি কোন কালো টাকা হাত করিনি।
আমি যখন এমপি ছিলাম আমার পরিবারের কোন লোক আমার কাছে দুই টাকা অর্থ সাহায্যের জন্য কোনদিন আসেনি।ভালো করে লক্ষ করে দেখবেন আমার বাপ দাদার যে ঘরে টুকু ইসলামি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ছিলো তার কোন পরিবর্তন নেই।পিতার সম্পত্তির ভাগ আমার বন্টনের প্রায় সবটুকু বিক্রি করে রাজধানী ঢাকায় জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণে সব ব্যয় করি।যা আমার স্ত্রী- সন্তানের নামে ছিলো।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আমাকে কালো তালিকায় ফেলা হয়।যা ছিলো মিথ্যা।তদন্ত করে আমার অর্জনে কোন কালো টাকা পায়নি প্রশাসন।
ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করছেন আর রাজনীতিবিদরা ব্যবসা করছেন। এ অশুভ মিলনের ফলে ব্যবসায়িক রাজনীতির জন্ম হয়েছে আজ।
আমি রাজনীতিবিদ দের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি আজ রাজনীতিবিদ নেই আছে রাজনীতিজীবি।
বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে জিয়া ও এরশাদ যখন প্রো-পিপল পলিসি চেঞ্জ করে দিল, তখন ধনতন্ত্রের অবাধ বিকাশের পথ হলো। সে সময় ধীরে ধীরে রাষ্ট্রক্ষমতাকে আয়ের উপায় হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এসব বিষয় আজ আমার মুখে মানায় না।কারণ প্রতি প্রভাতে ঘুম থেকে উঠে আমাকে দিন রাতের আহারের সন্ধানে ছুটতে হয়।কখনও মেলে কখনও মেলে না।আমি স্যুট টাই পছন্দ করতাম।ময়লা কাপড় কখনও ব্যবহার করিনি।
গত বেশ কিছুদিন আগে পাঞ্জাবি টি পড়েছিলাম। আজ ১৭দিন চলছে। ধোলাই করতে পারছিনা সাবান কেনার অভাবে।
এতে আমার লজ্জার কিছু নেই।কারণ আমি কারো টাকা মেরে খাইনি।বরং আমাকে দেখলে পালায় কিছু বড়লোক।আমি হাজারো কষ্টে ভিতরে হাসি।আমি এদের কাছে এখনও অর্ধকোটি টাকা ঋৃণ পাই।তারা আমাকে দেয় না আজ শক্তিশালী তারা।
এটাই নিয়ম।
তবে বিশ্বাস করুন আমার খুব কষ্টার্জিত এই পয়সা এরা নিয়েছে।আজ যখন ২৫শ টাকায় ভাড়ায় ছোট্ট একটি রুমে ঘুমাতে যাই তখন মনে হয় রাণী ভবাণীর কথা।
আমাকে ছেড়ে গেছে আপনজন।আমার যা ছিলো সব নিয়েছে।এতে আমার দুঃখ নেই।আজ ৩৩ বছর কাটছে বড় মেয়ে জয়ার মুখ দেখিনি সাথে আছে পারিসা,রামিমা দুইজন।খুব ইচ্ছে করে সন্তানের প্রিয়মুখ গুলি দেখতে। জীবনের শেষ প্রান্তে আমি দাঁড়িয়ে।
সন্তানের মুখগুলো বহুকাল না দেখতে পেয়ে প্রতি রজনীতে ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত দেহ নিয়ে ঘুমতে গেলে বুক ফেটে কান্না আসে।
আমি দুইবার এমপি ছিলাম দাবি দিবো না কোনদিন।আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি দাবি দিবো না কোনদিন।আমার মুক্তিযুদ্ধের দরখাস্ত যারা ছুড়ে ফেলেছেন তাদের বলছি তোমরা আমাকে দিলেনা কিন্তু এখনও কিছু অবশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন অন্ততঃ তাদের মরণের আগে কিছু করে দিও।
বঙ্গবন্ধু একনিষ্ঠ আপনজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ গফরগাঁও উপজেলার কৃতি সন্তান আবুল হাসেম এমপি আমার মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
এরা যেন হাজারো অসৎপথে আসা অশুভ মুক্তিযোদ্ধার মিছিলে হারিয়ে না যায়।
আমার শেষ আশ্রয়ের জন্য যাকে জীবনসঙ্গী করেছি
সে জন্মগত দরিদ্র আর আমি কর্মগত উদার দরিদ্র।
আমার ছোট্ট শিশু ছেলেটি খুব অসুস্থ। তাঁর জন্য চিকিৎসা জরুরি হলেও পিতা হিসেবে আমি বার বার সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি।
হে অবুঝ আমাকে ক্ষমা করো।
আমার ভাতিজা নাদিম মাহমুদ সায়ের খুব বড় মনের অধিকারী। সে মাঝে মাঝে আমায় ইশারায় ডেকে হাতে গোপনে কিছু অর্থের যোগান দিয়ে চলে যায় সায়ের। পিছন ফিরে দেখি আমার ভাতিজা বড় হয়েছে।তাকে এবং তাদেরকে দেখা হয়নি কখনও চক্ষু মেলিয়া।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা আমার ছোট্ট শিশুটিকে দেখে মনে হয়।আমি পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ঘুরে ফিরেছি। শিশুটির প্রয়োজনে আজ গাভীর দুধের দেখা নেই কতদিন।
বিমান নয় গফরগাঁও উপজেলা শহরে রিক্সায় উঠতে পারছিনা। রিক্সার ২০ টাকা ভাড়া চাওয়ার জন্য মনে হলো অনেক বেশি।তাই পায়ে হেঁটেই চলি।আমার অতিত টয়োটা গাড়ির মতই একটি গাড়ি কিছু কর্দমাক্ত মাটি পানি ছিটিয়ে দিলো কাপড়ে। আমি কি কখনও এমন কাজ করেছিলাম! না করিনি তো।
দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হায়াৎ মামুদ বলেছিলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে খুব ভালো কিছু ঘটবে না।’ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মা-বাবাদের প্রতি তিনি অনুরোধ করেছিলেন, তাঁরা যেন ছেলেমেয়েদের প্রতি লক্ষ রাখেন আর চলতে বলেছিলেন সেভাবে, যেভাবে চললে আগামী প্রজন্ম পরার্থপর হয়। শুধু নিজের নয়, সবার কথা ভাবে।’
আমার সন্তানের মত অন্যেরা যেন না বাঁচে।এমন বেঁচে থাকা বড় কষ্টের।
আমার দেখা গফরগাঁওয়ের একজন সফল আইন প্রণেতা মরহুম আলতাফ গোলন্দাজ। তাঁর কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছুই ছিলো।তিনি ছিলেন অদম্য এক সাহসী এমপি যা আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি।আজ আমি সত্যই বড় ক্লান্ত।
আমি কি রাষ্ট্রের বয়স্ক নাগরিক ভাতা কিংবা আমাকে মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পেতে পারি?আমি আমার সন্তানতুল্য বর্তমান সাংসদ ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল কাছে আবেদন জানাচ্ছি ।
যদি যোগ্য হই একটা চাই।দিবেন তো? হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতীর জনকের কন্যার শেখ হাসিনা আমার শিশু পুত্রের বেঁচে থাকার জন্য হাত বাড়ান প্লিজ।
I don’t want it for myself. I'm talking about child starvation, I don't understand politics.
I can understand the pain of survival.
বর্তমানে এই দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য বাস করছেন সরকারের দেয়া গফরগাঁও উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছোট্টো একটি ঘরে।
জবানবন্দিটির বর্ণনায় ছিলেন সাবেক দুইবারের সাংসদ এনামুল হক জজ ।আঁখি যুগলে শ্রাবণের জলধারা। মাথা নিচু করে পায়ে থাকা প্লাস্টিকের জুতা যুগল খুলে বৈদ্যুতিক তার প্যাঁচিয়ে বেঁধে নিলেন ছিঁড়ে যাওয়া অংশটুকুতে।
শেষ বাক্যে শুধু এটাই বললেন, আমায় ক্ষমা কর- প্রিয় স্বদেশ।
বর্তমানে এই দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য বসবাস করছেন সরকারের দেয়া গফরগাঁও উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছোট্টো একটি ঘরে।