ত্রিশালের আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে ঈদের আমেজ
এইচ এম জোবায়ের হোসাইন, (ময়মনসিংহ)
রাত পোহালেই পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। সারাদেশের মতো ঈদের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৯টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের মাঝে। ঈদ উদযাপন করতে শেষ সময়ে সবাই নিজেদের ঘর সাজিয়ে তুলেছেন।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য এ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৫০টি ও ২য় পর্যায়ে ৪০টিসহ মোট ৯০টি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের বালিপাড়া বাজারে বসবাস করছে ১২টি পরিবার। তবে ৯০টি পরিবারের মাঝে ৪০টি পরিবারের প্রথম ঈদ হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্পে। এ কারণে আনন্দটাও যেন তাদের মাঝে একটু বেশি। এবারের মতো এত আনন্দ আগে কোনোদিন করেননি তারা। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবার মাঝেই বিরাজ করছে ঈদের আমেজ।
বীররামপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা মোঃ সুরুজ আলী বলেন, আমার কোনো জায়গা-জমি ছিল না। স্থায়ী ঘর হবে, পরিবার নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারব- এমন চিন্তা স্বপ্নেও আসেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে মাথা গোঁজার স্থায়ী ঠাঁই হয়েছে। তাই পরিবার নিয়ে নিজের ঠিকানায় প্রথমবারের মতো ঈদ উদযাপন করতে পারব। এরচেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমি ও আমার পরিবার চির কৃতজ্ঞ।
আরেক উপকারভোগী মোসাঃ আয়েশা বেগম বলেন, একটা সময় ছিল ঈদের আনন্দ কী কখনো বুঝিনি। অনেক কষ্টে জীবনযাপন করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে আমাদের থাকার কষ্ট দূর হয়েছে। এখন পরিবার নিয়ে ভালোভাবে ঈদ করতে পারব।
বালিপাড়া আশ্রয়ন কেন্দ্রের সুবিধাভোগী আম্বিয়া বেগম বলেন, প্রায় ৫০ বছর আগে আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পর ছেলে ও মেয়ে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েছিলাম। বাজারের দোকানে দোকানে পানি দিয়ে আর স্টেশনে থেকে কোন প্রকার জীবন যাপন করতাম, খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হয়েছে। নিজের জমি ও বাড়ি হবে- এমনটা শুধু কল্পনাই করতাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। এমনই উপকারভোগীরা পেয়েছেন মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারী আশ্রয়ন। ত্রিশাল উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৫০টি পরিবারকে জমি ও ঘর দেওয়া হয়। যারমধ্যে উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নে ১২টি, রামপুর ইউনিয়নে ১২টি, কানিহারী ইউনিয়নে ৪টি, হরিরামপুর ইউনিয়নে ৪টি ও আমিরাবাড়ী ইউনিয়নে ১৮টি মোট ৫০টি পরিবারকে প্রথম পর্যায়ে জমি ও ঘর প্রদান করা হয়। এ ৫০টি পরিবার প্রথম বার ২য় বারেরমত ঈদ উদযাপন করছে এ সকল আশ্রয়ন কেন্দ্রে। ২য় ঈদ হলেও আনন্দের কমতি নেই তাদের পরিবারে।
অপরদিকে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে ৭টি, কানিহারী ইউনিয়নে ৩টি, বৈলর ইউনিয়নে ২টি, হরিবারপুর ইউনিয়নে ৪টি ও মোক্ষপুর ইউনিয়নে ২৪টি পরিবারসহ মোট ৪০টি পরিবার প্রথম বারেরমত ঈদ করবে আশ্রয়ন কেন্দ্রে।
বালিপাড়া আশ্রয়নের আছিয়া থাকুন জানান, আমরা আগের চেয়ে অনেক ভাল আছি, ঘরগুলো খুব সুন্দর করে করা হয়েছে, কোন ঝুকি নেই, রয়েছে পানির সুব্যবস্থা, পানির সুবিধার জন্য সাবমার্সেবল দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গোসল ও খাবারের পানির জন্য ট্যাংকি দেওয়া হয়েছে। পেয়েছি বিদ্যুত সংযোগও।
উপজেলার সকল আশ্রয়ন কেন্দ্রেও পানির সুব্যবস্থা, পানির সুবিধার জন্য টিউবওয়েল/সাবমার্সেবল, বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, সবসময় আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের খোজ খবর রাখা হয়, যেকোন অসুবিধায় সবসময় তাদের পাশে আছি আমরা। আশ্রয়ন প্রকল্পের কোন সদস্যদের যেন কোন অসুবিধা না হয় তার জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থাও রয়েছে ওখানে। সরকারী সকল বরাদ্ধ থেকে তাদেরকে সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে আশ্রয়ন কেন্দ্রগুলোর সকল পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ করা হয়েছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের আশ্রিতদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের দরজা সবসময় খোলা রয়েছে। আমরাও সবসময় তাদের খোজ-খবর রাখি, তাদের কোন সমস্যা হলে তারাও তাৎক্ষনিক আমাদের জানায়। প্রকল্পের পরিবারগুলো যেন পানির সুবিধায় না পড়েন তার জন্য টিউবওয়েল/সাবমার্সেবলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ত্রিশাল উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৫০টি ও ২য় পর্যায়ে ৪০টিসহ এ উপজেলায় ৯০টি পরিবার বসবাস করছে। তাদের ঈদ উদযাপনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে ঈদ উপহার ও খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। আশা করি, তারা ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারবে।