শিরোনাম

South east bank ad

ঝালকাঠিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার সার্ভিসে দিন-রাত স্বেচ্ছাসেবকরা

 প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):

ঝালকাঠিতে করোনা সংক্রমণ কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। প্রতিদিনই শতাধিক লোক করোনা আক্রান্ত হচ্ছে। এরমধ্যে ৫% লোক বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। যখনই অসুস্থ্য হয়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তখনই প্রয়োজন হয় অক্সিজেন সিলিন্ডারের। সরকারীভাবে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারস্থ হন রোগীর পরিবার। ফোনে অথবা যে কোন উপায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের্ জানাতেই পারলেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন রোগীর দরজায়। ধনী, গরীব, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক টানে অক্সিজেন সরবরাহ করতে দিন-রাতের ভেদাভেদ করছে না কখনোই। বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে নিরলসভাবে কাজ করছে। অক্সিজেন সরবরাহের দায়িত্বপালন করছে রক্তকণিকা ফাউন্ডেশন, স্বপ্নপূরণ সমাজ কল্যাণ সংস্থা, ইয়ুথ একশন সোসাইটি, হৃদয়ে ঝালকাঠি, ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম, মাওলানা আব্দুল কাদের ফাউন্ডেশন, সিটি ক্লাব, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, দুরন্ত ফাউন্ডেশন, দুস্থ কল্যাণ সংস্থা, শামসুন্নাহার ফাউন্ডেশন, মানবকল্যাণ স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, মানুষ মানুষের জন্য, অক্সিজেন রেসপনস টিম, কানেকটিং পিপল, দিগন্ত সমাজ কল্যাণ সংগঠন ও ফাতেমা আলী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

ঝালকাঠিতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় হাসপাতাল ও বাসাবাড়িতে যখন অক্সিজেন– সংকটে শ্বাসকষ্টে রোগী মারা যাচ্ছেন, ঠিক এমন সময় বিনা মূল্যে বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাগর হালদার নামে এক ব্যক্তি।

সংগঠনগুলো এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন সেবা দিয়েছে। গভীর রাতেও অক্সিজেন নিয়ে রোগীর বাড়িতে যাচ্ছেন এসব সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ফোন নম্বর ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। রোগীর পরিবার সেই নম্বরে ফোন করে সাহায্যের আবেদন করলে পেঁৗছে যাচ্ছে অক্সিজেন। ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে বিনা মূল্যে অক্সিজেন পেয়ে খুশি রোগী ও স্বজনেরা। এমন মহতী কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন ঝালকাঠির কিছু বিত্তবান সমাজসেবী ও সাধারণ মানুষ। কেউ অক্সিজেন সিলিন্ডার, আবার কেউ অক্সিজেন কনসেনট্রেটর দিয়ে সাহায্য করেছেন। কিছু সংগঠন নিজেরাও কিছু সিলিন্ডার ক্রয় করছে।

অভিযোগ রয়েছে, কয়েকটি সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে রোগীদের ফ্রি অক্সিজেন সেবা সার্ভিস দিলেও অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলের জন্য অনেক সংগঠন ৫০০ টাকা নেন। অথচ একটি সিলিন্ডার রিফিলের জন্য খরচ হয় ১৫০টাকা। আবার অনেকে রিফিলের নামে প্রতিদিন ৫শ টাকা চুক্তিতে সরবারহ করেন। সিলিন্ডারের গ্যাস পুরোটা ফুরিয়ে গেলে প্রতিদিন রিফিলের নামে নেয়া ৫শ টাকা গ্রহণের পরে আরো ৫শ টাকা বাড়তি নেয়া হচ্ছে।

ঝালকাঠির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নপূরণ সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি এইচ এম রিয়াজ খান জানান, কয়েকদিন আগে রাত পৌনে ১২টার দিকে ফোনে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জানান, তঁার মায়ের খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ কথা জেনেই সংগঠনের এক সদস্যকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে শহর থেকে ৮ মাইল দূরে ভৈরবপাশা গ্রামে মেহেদী হাসানের বাড়িতে ছুটে গিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার ৭ মিনিটের মধ্যে মেহেদীর মা মারা যান।

রিয়াজ খান বলেন, প্রতিদিন অক্সিজেনের জন্য ২০ থেকে ৩০টি ফোন আসে। যেখানে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ মনে হয়, সেখানেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যেতে হয়। তঁাদের ছয়টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৫ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে।

ঝালকাঠি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মকবুল হোসেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ঢাকা থেকে তঁার ছেলে ব্যবসায়ী মো. ফরিদুজ্জামান মিডিয়া ফোরামের সভাপতি মনির হোসেনকে বিষয়টি জানান। সংগঠনটির সদস্যরা শিক্ষক মকবুল হোসেনের শহরের চঁাদকাঠির বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন। তঁাকে দুদিন অক্সিজেন দেওয়ার পরে তিনি এখন সুস্থ। এতে খুশি হয়ে শিক্ষকপুত্র ফরিদুজ্জামান মিডিয়া ফোরামকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে দিয়েছেন। চারটি সিলিন্ডার সব সময় রোগীদের বাড়িতে থাকে বলে জানালেন মিডিয়া ফোরামের সভাপতি মনির হোসেন।

ইয়ুথ অ্যাকশন সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন রানা বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৮টি সিলিন্ডারের মাধ্যমে ৫০ জন রোগীকে সেবা দিয়েছি। সমাজের অনেক বিত্তশালী আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে দিয়েছেন। অনেকে সুস্থ হয়েছেন। দুজন মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে সংকটের অজুহাত দেখিয়ে অনেক ব্যবসায়ী অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

স্বেচ্ছাসেবক মো. হাসান মাহমুদ জানান, একটি জিনিস লক্ষ্য করলাম যে একজন করোনা আক্রান্ত রোগীর আত্মীয় আমাকে ফোন দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়ার অনুরোধ করেন। সাথে সাথে ছোট ভাইদের অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা করতে বলি। ছোট ভাইরা এক মুহূর্ত দেরি না করে রোগীর বাসায় গিয়ে দেখেন তাকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। ছোট ভাইরা লক্ষ করে দেখলেন যে রোগীর পাশে আরও তিনটি সিলিন্ডার মজুদ রাখা আছে। তারমানে রোগীর আত্মীয় বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে একটি একটি করে মোট পঁাচটি সিলিন্ডার এনে একজন রোগীর আত্মীয় মজুদ করে রেখেছেন। এমতাবস্থায় এই দুর্যোগ মুহূর্তে একজন রোগীর পিছনের যদি পঁাচটি সিলিন্ডার মজুদ রাখা হয় তবে করোনা আক্রান্ত অন্য রোগীদের অবস্থা কি হতে পারে। তাই রোগীর আত্মীয়দের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অন্য আরো অনেক রোগীর বিবেচনায় আপনারাও মানবিক হবেন।

করোনা সংক্রমণের এই জটিল পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো অক্সিজেন সেবা নিয়ে এগিয়ে আসায় কোভিড রোগীরা উপকৃত হচ্ছেন বলে জানালেন করানো থেকে সুস্থ হওয়া এক ব্যক্তি। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আবুয়াল হাসান বলেন, শ্বাসকষ্টে ভোগা কোভিড রোগীদের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার পেঁৗছে দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো মানবিক কাজ করে যাচ্ছে। এতে হাসপাতালের ওপর চাপ কমছে।

ক্যাপশনঃ- ঝালকাঠিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহে ব্যস্ততা।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: