সাফল্যের অনন্য দৃষ্টান্ত পঞ্চগড়ের সজল
মোঃ লিহাজ উদ্দিন (পঞ্চগড়):
একের পর এক সফলতা অর্জন করেই চলেছে পঞ্চগড়ের সজল। উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার যে কোন যানবাহনে করে যাওয়া যায় জেলার প্রান্তিক উপজেলা আটোয়ারীতে। নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত এই জেলা। উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র ফকিরগঞ্জ বাজার। বাজার সংলগ্ন বাড়িতেই বেড়ে উঠা অকুতোভয় এক বালক। নাম সজল।পুরো নাম শাহরিয়ার কবির সজল। মা প্রাথমিক শিক্ষক। মায়ের কাছে হাতে খড়ি নিয়ে প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে সর্বোচ্চ শিক্ষা শেষ করে সজল। এবার নিজে একটা কিছু করার ভাবনা। মাথায় কল্পনার ঝড়। তার চিন্তা মায়ের কাছে আর কত। তরুণ টগবগে যুবক সজল চাকুরীর পিছনে না ছুটে নিজে ২০১৭ সালে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে সাফল্যের পর এলাকার অসহায় গরীব নারীদের নিয়ে কাজ করার। যেমনি চিন্তা তেমনি কাজ। তিনি ভাবলেন দেশের উত্তরাঞ্চলে কাজু বাদামের অভাব। এটা নিয়ে কাজ করা গেলে বেশ আয় করা যাবে। এরপর তিনি আবারও ভারতে যান। সেখানে তিনি জনৈক এক প্রকৌশলী এর সহযোগীতায় কাজু বাদাম প্রক্রিয়াকরণের উপ প্রশিক্ষণ গ্রহন করে দেশে এসে পরিকল্পনা শুরু করেন। স্থানীয় একটি রাইচ মিল ১০বছরের জন্য ভাড়া নেন তিনি। ভারত থেকে প্রকৌশলী সহ মেশিন এনে ভাড়া নেওয়া রাইচ মিলে স্থাপন করা হয়। নামকরণ করা হয় 'সৃষ্টি ক্যাশুনাট ইন্ড্রাষ্ট্রিজ'। এখানেই প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয় 'নাহার কাজু' বাদামের। আটোয়ারী উপজেলা সদর হতে ৪কিলোমিটার দুরে আটোয়ারী -রুহিয়া সড়কের পাশে গোবিন্দ পুর নামক গ্রামে অবস্থিত 'সৃষ্টি ক্যাশুনাট ইন্ড্রাষ্ট্রিজ'। এখানে কাঁচামাল হিসাবে রাঙামাটি হতে কাজুবাদাম সংগ্রহ করা হয়। এইসব বাদাম এনে চাতালে হালকা রোদে ৬%থেকে১০% আর্দ্রতায় শুকিয়ে বয়েলিং কুকারে ১ঘন্টাব্যাপী সিদ্ধ করা হয়।তারপর ২৪ ঘন্টার মধ্যে অটোকাটিং মেশিনে কাটা হয়। এরপর দক্ষ শ্রমিকের হাতের ছোঁয়ায় খোসা ছড়ানো হয়ে গেলে ড্রয়ার মেশিনে ৭০ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় ৭-৮ঘন্টা তাপ দেওয়ার ২ দিন পর বাষ্পায়িত করে অটোমেশিনে বাদামের পাতলা আবরণ ছড়ানো হয়। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী দুই ভাবে প্যাকেটজাত করা হয়।(১) মশলা লবন যুক্ত ও (২) সাদা বা প্রাকৃতিক। প্যাকেটিংও দুই ভাবে হয়।একটি নাইট্রোজেন সম্বলিত আর আরেকটি বায়ু শুন্য অবস্থায়। এখানে প্যাকেটিং ও ওজনের কাজটি সম্পুর্ণ হাতের স্পর্শ ছাড়াই অটোমেটিক মেশিনে সম্পন্ন করা হয়।প্যাকেটের আকার ৫০গ্রাম ১০০ গ্রামও২৫০গ্রাম ওজনের হয়। আপাতত এখানকার প্রক্রিয়াকরণ কাজুবাদাম দেশের মৌলভী বাজারে বিক্রয় করা হয়।পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায় সরবরাহ করা হবে। এখাকার প্রক্রিয়াকরণ কাজুবাদামের বিশেষায়িত গুন হচ্ছে এটি বিশ্বের ১নং ড্রাই ফ্রূট,এটি খেলে হার্ডস্ট্রোক, হাড়ের জোড়ায় ব্যথা,মস্তিষ্কের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখা সহ বহু গুনে গুণান্বিত। 'সৃষ্টি ক্যাশুনাট ইন্ড্রাষ্ট্রিজ' এর মালিকের তথ্যমতে বর্তমানে কারখানায় প্রস্তুতকৃত ২ টন কাজুবাদাম মজুদ আছে। তিনি জানান,প্রতি কেজি কাজুবাদাম কাঁচামাল হিসাবে ৯০ টাকা দরে ক্রয় করা হয়।তারপর কারখানায় প্রক্রিয়াকরণ করে প্রতি কেজি কাজুবাদাম ৭০০টাকা থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রয় করা হয়। ৫কেজি উৎপাদিত কাজুবাদাম থেকে প্রক্রিয়াকরণ করে ১কেজি খাওয়ার যোগ্য কাজুবাদাম হয়।কারখানায় কাজ করা মহিলা শ্রমিক মোকাদ্দেস বলেন, আমি সারাদিন কাজ করে ৩৫০টাকা পাই। যা দিয়ে সংসারের ও ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালাই। হলে তো বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাতাম।
মেশিন চালক মেরিনা আক্তার বলেন,আমি মেশিন গুলো চালাই। প্রতিদিন ৫শ টাকা হাজিরা পাই। যা দিয়ে আমার সংসার ভালোই চলে।মিল মালিক মকছেদ জানান,এখন তো অটো মিলের দৌরাত্ম্য। সাধারন মিল দিয়ে ব্যবসা ভাল চলে না তাই আমার মিলটা১০ বছরের জন্য ভাড়া দিয়েছি।এখানে এরকম একটি কারখানা হওয়ায় এলাকার গরীব অসহায় মহিলারা কাজ করে সংসার চালাতে পারছে।
'সৃষ্টি ক্যাশুনাট ইন্ড্রাষ্ট্রিজ' এর কর্ণধার মোঃ শাহরিয়ার কবির সজল বলেন,আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে- তৃণমুল পর্যায় মানুষের পুষ্টি চাহিদা পুরণ, স্বল্প মুল্যে সহজ লভ্যতা নিশ্চিতকরণ এবং স্থানীয় বেকারদের কারখানায় কাজ দিয়ে বেকারত্ব দুরীকরণ। আমার কারখানায় প্রক্রিয়াকরণ কাজুবাদাম গুনে, মানে ও স্বচ্ছতায় অনেক উন্নত।