ঝালকাঠির লেবু যাচ্ছে সারাদেশে
মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি) : বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার না হলেও এক টুকরা লেবু আর এক কাপ গরম পানি মিশিয়ে পান করে এটি প্রতিরোধের উপায় জানিয়েছেন চীনের বেনজিং মিলিটারি হাসপাতালের সিইও প্রফেসর চেন হরেন। এক্ষেত্রে একটি লেবু টুকরা করে কেটে এক কাপ গরম পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। লেবুর এই পানীয়টি শরীরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকায়। এ পানীয় ঠিক ওষুধের মতো কাজ করে। প্রতিদিন এ পানীয় পান করার পরামর্শ দিয়েছেন এ গবেষক। তিনি জানান, লেবুর এই পানীয়টি করোনা প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করবে। এছাড়াও এটি শরীরের অন্যান্য ভাইরাস এবং ফ্লুর বিরুদ্ধেও লড়াই করতে সহায়তা করবে। লেবুর রসে রয়েছে কার্বলিক এসিড, যা উচ্চ রক্তচাপ কমায়। এমনকি বাতের ব্যথা ও রক্ত জমাট বাধার সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। ইন্টারনেট সূত্রে এসব তথ্য জানাগেছে।
চীনের জানজান ইউনিভার্সিটির মেডিকেল সাইন্স বিভাগের গবেষক জিয়াও সেনমি মিনজি বলেছেন, করোনাভাইরাস বিশ্বের সব দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। করোনা প্রতিরোধে ভিটামিন সি বেশি করে খেতে হবে। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও কার্বোলিক এসিড থাকায় অনেক ঔষধী গুনে ভরপুর রয়েছে।
ভিটামিন-সি যুক্ত রসালো লেবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা ঝালকাঠির ২২ গ্রাম। চলতি মৌসুমে জমে উঠেছে ঝালকাঠির ভিমরুলীর ভাসমান লেবুর হাট। প্রতিদিন এখানে লাখ লাখ লেবু কেনা-বেচা হচ্ছে। পাইকাররা নৌকা থেকে লেবু কিনে গাড়িতে করে বরিশাল আড়তে নিয়ে বিক্রি করছে। অনেকে মালবাহী ট্রলার বা ট্রাকের নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ফরমালিন ও কেমিকেলমুক্ত রসালো কাগজি লেবুর সবার কাছেই প্রিয়।
ঝালকাঠির বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষন্ডা, ডুমুরিয়া, খেজুরা, কির্ত্তীপাশা, মিরাকাঠিসহ ২২টি গ্রাম এখন লেবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা। প্রতিদিন এসব গ্রামের কৃষকরা গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকায় ভিমরুলী বাজারে নিয়ে আসে। অপেক্ষমান পাইকাররা ট্রলারে বসেই লেবু কিনে রাখছে।
লেবুচাষিরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি। গত বছর ১ পোন (৮০টি) লেবু ছিল আড়াইশ’ টাকা। এবার তা ৪শ’ টাকা। গ্রামের কৃষকরা কাঁদি কেটে লেবু চাষ করছেন। একেকটি কাঁদি ১শ’ থেকে ১১০ হাত লম্বা এবং ৭-৮ হাত চওড়া হয়। প্রতিটি কাঁদিতে ২২টি গাছ লাগানো যায়। এরকম ১ বিঘার কাঁদিতে লেবু চাষ করতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। ফল ধরার পরে প্রতি বছর লেবু বিক্রি করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পাওয়া যায়। সে হিসেবে লেবু বিক্রি করে প্রতি বছর কৃষকরা আয় করছে দেড় থেকে ৩ কোটি টাকা।
লেবুর পাইকার ব্যবসায়ী রহমান জানান, পটুয়াখালী থেকে মালবাহী ট্রলার এলে সেই ট্রলারে পটুয়াখালী মোকামে পাঠানো হয়। ওখানের কাচামাল বিক্রেতাদের আগেই চুক্তি করা থাকে। কেনা দামের ওপর লাভ রেখে বিক্রি করা হয়।
পাইকাররা জানান, করোনার কারণে কাগজি লেবুর চাহিদা প্রতিবছরের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। তাই কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্য দিয়েই লেবু কিনে নেয়া হচ্ছে। ভালোমানের একেকটি লেবুর ক্রয় মূল্যই হচ্ছে ৫টাকা। যা খুচরা বাজারে ৭/৮টাকা দরে বিক্রি করা হয়। প্রতিবছরই লেবুর চাহিদা থাকে কিন্তু এবছর একটু চাহিদা বেশি।
লেবুচাষি বশির জানান, ঝালকাঠির এ লেবুর কদর সবার কাছেই সমান। ফলন ধরার পর দু’ভাবে লেবু বিক্রি করে থাকি। প্রথমত স্থানীয় ভিমরুলী বাজারে পাইকারদের কাছে। এছাড়াও গাছে ফল আসার পর পাইকারদের কাছে বাগান বিক্রি করি এককালীন নগদ টাকায়। ভীমরুলী থেকে নৌকা বা ট্রলারে করে পাইকাররা কিনে তা সরবরাহ করেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
ঝালকাঠি কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘এ লেবু ছোট হলেও ভেতরে পর্যাপ্ত রস থাকে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ লেবুর প্রতি সবারই কম-বেশি আকর্ষণ আছে। লেবুচাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়।’